সংশয় আছে, তারপরেও সময় মতো বই উসবের লক্ষ্য

জাগরণ প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২১, ১২:৩০ পিএম সংশয় আছে, তারপরেও সময় মতো বই উসবের লক্ষ্য
ফাইল ফটো

শিক্ষার্থীদের হাতে এবার নির্দিষ্ট সময়ে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর এই সময়ে সব পর্যায়ের প্রায় অর্ধেক বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যেত, কিন্তু এবার মাধ্যমিকের বইয়ের কাজ সবে শুরু হয়েছে।

প্রাথমিকের অর্ধেক বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। আবার স্পেসিফিকেশনের (দরপত্রের শর্ত) ভুলের কারণে প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের সম্প্রতি আবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

এ অবস্থায় এবার ডিসেম্বরের মধ্যে ৩৫ কোটি বইয়ের কাজ শেষ করা বেশ কঠিন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, আগামী ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর জন্য ৩৫ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ বই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে মোট পাঠ্যপুস্তক ছাপা হচ্ছে ১০ কোটি ৪৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩ কপি। আর ইবতেদায়ি, দাখিল মাদরাসাসহ মাধ্যমিক স্তরে ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৫৬ হাজার ২২০ বই ছাপানো হচ্ছে।

সূত্র জানায়, প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই মুদ্রণে গত ২৪ অক্টোবর মুদ্রাকরদের সঙ্গে এনসিটিবির চুক্তি হয়েছে। বই সরবরাহে তাঁরা ৭০ দিন সময় পাবেন। আর তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই মুদ্রণে চুক্তি হয়েছে ১৮ অক্টোবর। তারাও ৭০ দিন সময় পাবেন।

প্রাক-প্রাথমিকে ৬৬ লাখ বইয়ের মধ্যে শুধু এক্সারসাইজ বুকের কাজ শেষ হয়েছে। ওয়ার্ড বুকের কাগজের ক্ষেত্রে এমন একটি শর্ত চাওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানই জোগাড় করতে পারেনি। এ জন্য শর্ত ঠিক করে পুনঃ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এই দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করতেই আরো এক মাস সময় লাগতে পারে। ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সবচেয়ে পিছিয়ে মাধ্যমিক ও মাদরাসার বইয়ের কাজ। এই স্তরের বই ছাপাতে পাঁচ ভাগে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। শিট মেশিনে (অ্যানালগ পদ্ধতির মেশিন) ছাপাতে প্রায় চার কোটি বইয়ের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ নিয়ে মুদ্রাকরদের সঙ্গে ৮ থেকে ১০ নভেম্বর এনসিটিবির চুক্তি হয়েছে।

অন্যান্য বছর এ ধরনের চুক্তি অক্টোবরের শুরুতেই হয়। তখন মুদ্রাকররা বই ছাপতে ৮৪ দিন সময় পান। প্রাক-প্রাথমিকের পুনঃ দরপত্র জমা দেয়া যাবে আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সবে মাধ্যমিকের বইয়ের কাজের চুক্তি হয়েছে। এনসিটিবি নির্ধারিত সময় কমিয়ে ৭০ দিন করলেও ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পাবেন তাঁরা। ফলে কোনওভাবেই ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বইয়ের কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। 

এনসিটিবি সূত্র বলছে, এ বছর দুই কারণে দরপত্র প্রক্রিয়ায় দেরি হয়েছে। একাধিক দরপত্রে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত দর জমা পড়েছে। দরপত্রের নিয়মানুযায়ী, নির্ধারিত দরের চেয়ে ১০ শতাংশ কম বা বেশিতে কাজ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য অনেক লটে দুইবার পর্যন্ত পুনঃ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলাসংক্রান্ত জটিলতাও ছিল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘পুনঃ দরপত্র ও মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে এবার কাজ শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে আমাদের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। আমাদের মনিটরিং টিম পুরোদমে কাজ করছে। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিকের ২৪ কোটি বইয়ের মধ্যে আট কোটি ৭৫ লাখের কাজ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বর শেষের আগেই আমাদের সব বইয়ের কাজ শেষ হবে।’

এনসিটিবির চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্বে থাকা সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মোহাম্মদ মশিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা মুদ্রাকরদের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বইয়ের কাজ শেষ করতে চাপ দিচ্ছি। বইয়ের মান নিশ্চিত করতে নিয়মিত মনিটরিং টিম কাজ করছে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন আশাবাদী, প্রতিবছরের মতো এবারও তারা শতভাগ বই স্কুলে পৌঁছে দিয়ে ১ জানুয়ারি বই উৎসব করতে পারবেন।

জাগরণ/এসএসকে