সাক্ষাৎকার

শুদ্ধভাবে রবীন্দ্রসংগীতচর্চা খুব জরুরি : দেবলীনা সুর

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২১, ০২:৩৯ পিএম শুদ্ধভাবে রবীন্দ্রসংগীতচর্চা খুব জরুরি : দেবলীনা সুর

সুরের সাধনায় মত্ত থাকা এক কণ্ঠশিল্পী দেবলীনা সুর। রবীন্দ্রসংগীত যেন তার ধ্যান-জ্ঞান। পাশাপাশি আধুনিক গানে রয়েছে সমান পারদর্শিতা। কোনো নির্দিষ্ট ধারায় আটকে থাকতে চান না তিনি। তাই সব ধরনের গানে বসবাস তার।


জাগরণ : রবীন্দ্রসংগীতে বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করেছেন। এই গানের প্রতি আকৃষ্ট হলেন কীভাবে?

দেবলীনা সুর :  ওভাবে নির্দিষ্ট করে ঠিক বলতে পারব না। তবে ছেলেবেলা থেকে সব ধরনের গান শেখার অভ্যাস ছিল। কিন্তু রবীন্দ্রসংগীতের বাণী খুব টানত। আমাকে অনেক সময় হাসানোর জন্য, মন ভোলানোর জন্য মা-বাবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো গান কিংবা কবিতা শোনাতেন। হয়তো সেখান থেকে আমার ভালোলাগা শুরু। সেই ভালোলাগা থেকে রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে।

জাগরণ : কিন্তু আপনার প্রথম অ্যালবাম ছিল মৌলিক। যেটি সব আধুনিক গানে সাজানো ছিল। চাইলে তো প্রথম অ্যালবাম রবীন্দ্রসংগীতের ওপর হতে পারত।

দেবলীনা : প্রথম অ্যালবাম রবীন্দ্রসংগীতের হোক, সেই চাওয়াটা আমারও ছিল। সেই ভাবনা থেকে আমি যখন আমি পশ্চিমবঙ্গে ছিলাম তখন একটি পূর্ণাঙ্গ রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবামের কাজ শেষ করে এসেছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মনে হলো, আমি তো একেবারে দেশে নতুন। আমাকে সেভাবে কেউ চেনে না। একজন অপরিচিত শিল্পীর গান মানুষ কতটা গ্রহণ করবে, সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান ছিলাম। তাই চেয়েছিলাম প্রথমে পরিচিত হতে। এর মধ্যে আমি একটি গান লিখে ফেললাম। সেটি সংগীত পরিচালক ইমন সাহাকে শোনালাম। তিনি গানটি শুনে আরো গান লিখতে বললেন। সেই গানগুলো দিয়ে একটি মৌলিক গানের অ্যালবাম প্রকাশ করতে উৎসাহ জোগালেন। তার উৎসাহে দেখা গেল রবীন্দ্রসংগীতের আগে মৌলিক গানের অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।

জাগরণ : এখনকার সময়ে রবীন্দ্রসংগীত কতটা শুদ্ধভাবে চর্চা করা হচ্ছে বলে মনে করেন? 

দেবলীনা : এখন বেশ ভালো চর্চা হচ্ছে। আগে বিশেষ শ্রেণির শ্রোতা ছাড়া রবীন্দ্রসংগীত শুনতে চাইত না। আজকাল তরুণ প্রজন্ম রবীন্দ্রসংগীত শুনছে। কারণ, গান উপস্থাপনের জায়গা খানিকটা বদলে গেছে। একই সঙ্গে অনেক আধুনিক গানের শিল্পীরাও রবীন্দ্রসংগীত গাইতে চাইছেন। অ্যালবাম প্রকাশ করছেন। এটা ভালো দিক। তবে যদি শুদ্ধভাবে যেন সেটা চর্চা করা হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। রবীন্দ্রসংগীতের ক্ষেত্রে স্বরলিপি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সংগীতায়োজনের ক্ষেত্রে যদি কখনো বাণী সুরটাকে ছাপিয়ে যায় তাহলে মূল জায়গাটা ম্লান হয়ে যায়।

জাগরণ : এখন তো রবীন্দ্রসংগীতে একটা আধুনিকতার লেবাস পরানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। 

দেবলীনা : তা ঠিক। এমনভাবে সুর করা উচিত নয় সেটা মূল গানের মাধুর্যতা নষ্ট করে দেয়। তবে বিশ্বভারতী কিছু কিছু নিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে। সে জন্য শিল্পীরা রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করছেন। বুঝে কিছু করা আর না বুঝে কিছু করার মধ্যে পার্থক্য আছে। 

জাগরণ : আপনি তো আধুনিক গানও করেন। এ ধরনের গানে বাণী সব সময় আধুনিক হয়ে থাকে। তবে অনেকে কাব্যগুণ-বিবর্জিত কথা লিখে দাবি করেন, আধুনিক গান। বিষয়টি নিশ্চয়ই আপনি লক্ষ করেছেন।

দেবলীনা : আসলে যার বোধের জায়গা যেমন সে তেমন গান লিখবেন, এটাই স্বাভাবিক। এখন ধরুন, কবীর সুমন কিংবা অঞ্জন দত্তকে দিয়ে তাদের ধারার বাইরে গান লেখাতে পারবেন না। তারা তাদের ভাবধারার গান লিখবেন। অনেকের মধ্যে একধরনের সস্তা মানসিকতা কাজ করে। অল্পতে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চায়। সে কারণে এ ধরনের গানের চর্চা হচ্ছে। 

জাগরণ : আপনি নিজেও তো গান লেখেন। নিজের ক্ষেত্রে গান লেখার সময় কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখেন?

দেবলীনা : আমি গান লিখি, তবে পেশাদার গীতিকার নই। গান লেখার জন্য আমার মনের ভেতর একটি অনুভূতি খেলা করতে হয়। সেই অনভূতি যখন তীব্র হয় তখন গান লিখে ফেলি। বলতে পারেন, কোনো বিশেষ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। 

জাগরণ : শিল্পীর পাশাপাশি আপনি একজন উপস্থাপকও বটে। ভালোলাগার জায়গা কোনটি?

দেবলীনা : অবশ্যই সংগীতশিল্পী। গানের মধ্যেই আমার বেড়ে ওঠা। গানের বাইরে আমি যে কথা বলতে বা উপস্থাপনা করতে পারব, সেই বিশ্বাস বাংলাদেশে আসার আগে ছিল না। ভাবিনি কোনো অনুষ্ঠান আমাকে উপস্থাপনা করতে হবে। তবে উপস্থাপনা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। 

জাগরণ : আপনি চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন। কিন্তু সংখ্যাটা কম। কেন?

দেবলীনা : এটা আমার জন্য দুঃখজনক। আমি মূলত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। আমাদের দেশে হয়তো অনেকের ধারণা, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীরা প্লেব্যাকের জন্য উপযুক্ত নন। সেই ধারণা থেকে হয়তো আমার কাছে প্লেব্যাকের প্রস্তাব সেভাবে আসে না।

জাগরণ : এমন ধারণাকে মনস্তাত্ত্বিক সংকীর্ণতা বলবেন?

দেবলীনা : আমি একটা সিস্টেম বা মানসিকতাকে একদম বদলে দিতে পারব না। তবে আশা করব এ ধরনের মানসিকতা দূর হয়ে যাবে। ভালো কিছুর জাগরণ ঘটুক। তবে এসবে আমি প্রভাবিত হতে চাই না।