তীব্র তাপদাহ 

বাড়ছে রোগ-বালাই, উপস্থিতি কমছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ১১, ২০১৯, ০৯:০৮ এএম বাড়ছে রোগ-বালাই, উপস্থিতি কমছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে 

রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ তাপদাহে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। দিনের অধিকাংশ সময় পড়ছে প্রখর রোদ। গরমে অতিষ্ট হয়ে নাভিশ্বাস নগরবাসী। ব্যহত হচ্ছে নগরবাসীর স্বাভাবিক কাজকর্ম। প্রখররোদ উপেক্ষা করেই চলতে হয় পথচারীদের। এতে অস্বাভাবিক গরমে পরিবহনগুলোর ভেতরের তপ্ত পরিবেশে অস্থির হয়ে ওঠে যাত্রীরা। তাপদাহে জর্জরিত মানুষের কাছে বেড়ে যায় ঠান্ডা পানির চাহিদা। যত্রতত্র পানি পানে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আইসিডিডিআরবিসহ রাজধানীর হাসপাতাল গুলোতে। 

এদিকে তাপদাহে রাজধানীর একাধিক স্কুলে কয়েক শিশুর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। টানা গরমে ক্লাস ও পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েই অচেতন হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। গত তিন দিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্কুলে শিক্ষার্থীর অসুস্থতার খবর পাওয়া গেছে। কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পরে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছে। এ ঘটনার পর পরই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের অধীন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনায় নতুন নির্দেশনা জারি করে। এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় পর্যায়ে তাপ প্রবাহের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি বিদ্যালয়ের নির্ধারিত শ্রেণী কার্যক্রমের সময়সূচি পুনর্বিন্যাস করতে পারেন। এর অংশ হিসেবে বিদ্যালয় পরিচলনা কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে মর্নিং স্কুল চালু করা যাবে। আর যেসব স্কুলে দুই শিফটে ক্লাস হয়, সেখানে ক্ষেত্র বিশেষে প্রাত্যহিক সমাবেশ স্থগিত করে নির্ধারিত সময়ের আগেই শ্রেণীর কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। 

             রোধ থেকে বাঁচতে ওড়না দিয়ে মুখ ডেকে হাঁটছেন পথচারীরা 

তীব্র গরমে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দিয়েছে মাউশি। এদিকে তীব্র গরমে হিটষ্ট্রোক, সর্দি-কাশি, জ্বর, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হিটষ্ট্রোক ও ডায়রিয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। গত বছর এ সময়ে হিটষ্ট্রোকে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। 

তাপদাহের কারণে রাজধানীতে ইতোমধ্যে নতুন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। তাপমাত্রা বাড়লে ডায়রিয়ার জীবাণুগুলোর সংক্রমণের ক্ষমতা বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়রিয়ামুক্ত থাকতে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। আর হিটষ্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা যাবে না। অতি প্রয়োজন না হলে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। রোদে কাজ করার সময় মাথা ও শরীরে ঢাকনা দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণ তরল জাতীয় কিছু খেতে হবে। ঢিলাঢালা পোশাক বিশেষ করে সূতি কাপড় পরিধান করতে হবে। হিটষ্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ছায়ায় শুইয়ে দিতে হবে। ঠান্ডা পানি (রেফ্রিজারেটরের পানি নয়) দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। এতে উন্নতি না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এদিকে দেশে গত কয়েকদিন ধরেই তীব্র গরম পড়ছে। আবহওয়া অধিদফতর জানাচ্ছে, সামনের দিকে আরও দুদিন তাপমাত্রা আরও বাড়বে। সবশেষ আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়েছে, আরও ২দিন দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং অন্য অংশে ১-২টি মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কিংবা মাঝারি (৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপ প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। 

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন চার হাজার ৩৩৮ জন। এর মধ্যে পহেলা মে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৯৪ জন, ২ মে ৭০১ জন, ৩ মে ৫৪৯ জন, ৪ মে ৫৩৩ জন, ৫ মে ৬২৭ জন, ৬ মে ৬৩৯ জন এবং ৭ মে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৯৫ জন। এদিকে আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী ও ইউনিট প্রধান ড. মো. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে গেলেই এ দেশের মানুষের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। যতটা সম্ভব প্রখর রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। বেশি মাত্রায় পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। 

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, দিনের বেলায় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে মানুষের শরীরে। ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হিটষ্ট্রোক হতে পারে। সাধারণত মানবদেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রক্ত ভূমিকা রাখে। আবহাওয়া উষ্ণ হলে রক্তনালী প্রসারিত হয় এবং শরীরের তাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। ফলে শরীরের স্বাভাবিক ক্ষমতা হারিয়ে হিটষ্ট্রোক হয়। এটাকে অবহেলা করার সুযোগ নেই, হিটষ্ট্রোকের কারণে মৃত্যুও হতে পারে। 

এইচ এম/বিএস