চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০১৯, ০৬:৩৯ পিএম চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

শেষ হয়ে আসছে চৈত্রের দিন।  চৈত্র সংক্রান্তি হালখাতা উৎসব চড়ক মেলার মতো  আদিবাসীদেরও বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলছে। পাহাড়-সমতলের আদিবাসীদের সাকরাইন, বৈশাবি, বিজু , বিউসহ বিভিন্ন উৎসব ভর করে আছে বাংলা পঞ্জিকার শেষ মাস চৈত্র সংক্রান্তির মধ্যে। বাজছে নতুন বঙ্গাব্দের আগমনী বার্তা। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে নতুন বাংলা বছর ১৪২৬ বঙ্গাব্দ বরণের নানামুখী তৎপরতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নতুন রঙে আর আঁকিবুকিতে চলছে  বর্ষবরণের আমেজ। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলছে । শোভাযাত্রার ব্যয় মেটাতে চারুশিক্ষার্থীরা টেবিলে ছড়িয়ে দিয়েছে রংয়ের কৌটা। সেগুলো থেকে রং তুলে চলছে চিত্রকর্ম সৃজন। এই শিল্প সৃজনের মাঝে কথা হয় অনুষদের অঙ্কন বিভাগের ছাত্র রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ওই ছাত্র বলেন, আমরা আমাদের কাজ শুরু করে দিয়েছি ১৮ মার্চ থেকে।তারপর থেকে চলছেই। তবে পহেলা বৈশাখ যত কাছাকাছি আসছে আমাদের ব্যস্ততা ততো বাড়ছে। এটা আমরা অনুশীলন হিসেবে নিচ্ছি। আঁকার অনুশীলন আমাদের সব সময়ে চলে। তবে বৈশাখ উপলক্ষে যে সবার-ই ইচ্ছা হয় নতুন ও আকর্ষণীয় কিছু আঁকতে। যেহেতু এটা শৈল্পিক বিষয়। তাই আগে থেকেই সময় নিয়ে শুরু করেছি। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে।  সেখানে অংশ নেবে আপামর জনসাধারণ।

এবারের ¯শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘মস্তক তুলিতে দাও উদাত্ত আকাশে’ । কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অমেয় বানীকে সামনে রেখে তৈরী হচ্ছে মাঙ্গলিক উৎসব। এবারের শোভাযাত্রার মূল সিম্বল হিসাবে বাঘ ও বককে নির্ধারণ করা হয়েছে। চারুকলার এই আয়োজন রাজধানী শহর ঢাকার পহেলা  বৈশাখ উদযাপনকে সবচেয়ে বেশি বর্নাঢ্য করেছে। চারুকলা থেকে বর্ষবরনের এই শোভাযাত্রা আজ বিশ্ব ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি অনুষঙ্গ হিসাবে মনোনীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রাটি প্রথম যাত্রা করে ১৯৮৯ সালে। প্রথম বছরেই নববর্ষ উৎসব উদযাপনকারীদের নজর কেড়ে নেয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। প্রথম শোভাযাত্রায় ঠাঁই পায় পাপেট, ঘোড়া ও হাতির শিল্পকাঠামো। পরের বছরে চারুকলার সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এ শোভাযাত্রায়ও নানা ধরনের শিল্পকর্মের প্রতিকৃতি স্থান পায়। এরপর থেকে এটা বাংলা বর্ষবরণের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রা নাম বদলে পরিণত হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য়। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ  শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়। বরাবরের মতো বাংলার লোকজ সংস্কৃতির সব অনুষঙ্গই যুক্ত হবে নববর্ষ উদযাপনের সবচেয়ে বেশি রঙ ছড়ানো এ আয়োজনে। আগামী ১৩ এপ্রিল, চৈত্রসংক্রান্তির দিন পর্যন্ত চলবে এ প্রস্তুতি পর্ব।

চৈত্রের শেষ দিন পর্যন্ত মানে ইংরেজি ১৩ এপ্রিল অবধি দেশ বরেণ্য শিল্পীরা এবং চারুকলা অনুষদের ছাত্র-শিক্ষকরা ছবি আঁকা, সরা চিত্রিত করা ও মুখোশ তৈরীসহ নানা ধরণের হাতের কাজ  করে তা সাজিয়ে রাখেন চারুকলার একটি অস্থায়ী বিক্রয় কেন্দ্রে। এসবের বিক্রয়লব্ধ অর্থ  দ্বারা যোগান দেয়া হয় মাসব্যাপি এ মহাযজ্ঞের।  দিনরাত শ্রম দিয়ে নবীন - প্রবীন শিল্পীরা লোকজ আঙ্গিকে বিশালকায় সব রঙিন অনুষঙ্গ নির্মান করছে। হাতি- ঘোড়া -বাঘসহ লোকজ ঐতিহ্যের সব অনুষঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে। এসবের মধ্য দিয়ে আগামী মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪২৬ এর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে চারুকলা ইনস্টিটিউট।


মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রস্তুতি কার্যক্রম চলছে অজস্র শিল্পীদের সমন্বয়ে খুব  গতিতে । মঙ্গল শোভাযাত্রার বেশ আগের রীতি হলো বেশ আগে থেকেই রীতি হচ্ছে চারুকলার ২য় বর্ষের ছাত্ররা সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বর্নাঢ্য করে তোলে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।  সেই সুবাদে নতুন রং লেগেছে শিল্পাচার্য জয়নুলের স্মৃতিধন্য সবুজ-শ্যামল আঙিনায়। নববর্ষের মাসখানেক আগেই যেন এখানে হাজির হয়েছে পয়লা বৈশাখ। বাঙালীর প্রাণের উৎসবকে বরণ করতে সচল হয়েছে শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়। ছড়িয়েছে প্রাণে দোলা দেয়া ঢাক-ঢোলের মুখর শব্দধ্বনি। আর এসব কিছুর মধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে কল্যাণের বারতা দেওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। এবারও অনুষদের চারুশিক্ষার্থী ও শিক্ষক- শিল্পীদের নিবিড় প্রয়াসে বের হবে এই শোভাযাত্রা। অশুভকে হটিয়ে মঙ্গলালোকে সিক্ত হবে লাল-সবুজের বাংলাদেশ।