ক্যান্সারের চিকিৎসা হচ্ছে, কিন্তু মান নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ৯, ২০১৯, ০৪:২২ পিএম ক্যান্সারের চিকিৎসা হচ্ছে, কিন্তু মান নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই


বাংলাদেশে মরণব্যাধি ক্যান্সারের চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। মান নিশ্চিতে কমপক্ষে ১৭০টি সমন্বিত চিকিৎসা কেন্দ্র প্রয়োজন। বাস্তবে আছে মাত্র ২৬টি। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী নিম্ন বা মধ্য আয়ের। তাদের পক্ষে দেশের ব্যয়বহুল বেসরকারি বা বিদেশে চিকিৎসা করানো সম্ভব না। তারা ধর্ণা দেন সরকারি হাসপাতালগুলোয়। ফলে বছরজুড়ে সরকারি হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগে চাপ বেসামাল পরিস্থিতিতে থাকে। এজন্য মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শেখ গোলাম মোস্তফা জাগরণকে বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসায় মান নিয়ন্ত্রণ খুব প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার নিয়ম অনুযায়ী- প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি চিকিৎসাকেন্দ্র দরকার। সেই হিসাবে ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে ১৭০টি কেন্দ্র দরকার। সংস্থাটির মতে- অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে থাকবে দক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান।

মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাস্কিন বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসায় সমন্বিত চিকিৎসা দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকস বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়- দেশে ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র আছে ২৬টি। এর মধ্যে সরকারি ১৬টি। ব্যক্তি মালিকানাধীন ও এনজিও পরিচালিত ১০টি।

দেশের ক্যানসার চিকিৎসার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। ৩০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ভীড় লেগেই থাকে। রোগী ও তাদের স্বজন হাসপাতালের নিচতলায় গাদাগাদি করে শুয়ে বসে থাকেন, অনেকে এখান থেকে ওখানে ছুটোছুটির মধ্যে থাকেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার টাকা জমা দেয়ার কাউন্টারে লম্বা সারি যেন শেষই হতে চায় না।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. মোয়াররফ হোসেন বলেন, আমরা ৬টি যন্ত্রে প্রতিদিন ৫৫০ রোগীকে থেরাপি দিই। এতে মারাত্মক চাপ পড়ে মেশিনের ওপর। কিন্তু রোগীকে তো ফিরিয়ে দেয়া যায় না। এসব দরিদ্র রোগী কোথায় যাবে?

ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয় বলেও জানান পরিচালক।

রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাস্কিন বলেন, ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে বছরজুড়ে রোগীর চাপ বেশি থাকায় মানসম্মত সেবা দেয়া যায় না। 

এসবের পরও জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানেই ভীড় জমান দেশের দরিদ্র রোগীরা। এটাই তাদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগ প্রতিটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার ইউনিট খোলার এবং প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, অল্প খরচে সব ধরনের সেবা শুধু এখানেই পাওয়া যায়। তাই সারা দেশের রোগীও এখানেই আসেন। রোগী তুলনায় শয্যা কম। ঢাকায় অবস্থান করতে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। যা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। যদি সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে পরিস্থিতি অনেক বদলাবে।

আরএম/ এফসি