আবারো তিনি দেশবাসীর মন জিতে নিয়েছেন। আবারও তার কাঁধেই থাকবে দেশের ভার। বিরোধীদের সব কৌশল, চেষ্টাকে বিফল করে উনিশের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন এনডিএ ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে তিনি বলেছেন, এটা তার বা তাদের দলের জয়ই শুধু নয়, দেশের জয়, গণতন্ত্রের জয়। এবার লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের টার্গেট ছিলেন তিনিই। কিন্তু তার উত্থান আটকাতে পারেননি কেউই। উনিশের নির্বাচন নিঃসন্দেহে একটা বড় পরীক্ষা ছিল নরেন্দ্র মোদীর। সেই পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উতরে গিয়ে মোদী আরও একবার প্রমাণ করলেন, তার বিজয়রথের চাকা থামেনি, বরং তা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
সালটা ২০১৩, সেপ্টেম্বর মাস। সে সময়ই দেশের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নাম ঘোষণা করে বিজেপি নেতৃত্ব। তারপর থেকে আর কখনই পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি নমোকে। মনমোহন সরকারকে উৎখাত করে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসলেন মোদী। তারপর থেকেই ক্রমাগত নিজের শক্তিবৃদ্ধি করে গিয়েছেন মোদী।
ঘরে-বাইরে :
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই জনপ্রিয়তা বেড়েছে মোদীর। সেবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সাক্ষী ছিলেন ৮ দেশের প্রতিনিধি। প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর ভাষণ শুনতে ভারতে পা রেখেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ম্যাডিসন স্কোয়ারে মোদীর সভা সব লাইমলাইট কেড়ে নেয়। বিশ্ব দরবারে মোদী একটা ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতাদের সঙ্গে মোদীর সম্পর্কের সেতু মজবুত হয়েছে। রেডিওতে নমোর ‘মন কি বাত’-এ মজেছেন আম-আদমি। ‘মন কি বাত’-এর দৌলতে একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে যান মোদী। বিরোধীদের থেকে লাগাতার আক্রমণ তার দিকে ধেয়ে এলেও, তা সুদৃঢ় হাতে মোকাবিলা করেছেন নমো। দুর্নীতি ইস্যু থেকে জঙ্গি দমন, কিংবা দেশের উন্নয়নের কথা বলে মানুষের মন জিতে নিয়েছেন মোদী।
অাচ্ছে দিন :
২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে মোদীর মুখে শোনা গিয়েছিল ‘অাচ্ছে দিন’। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি দেশ বদলে দেবেন। ঘোষণা করেছিলেন স্বচ্ছ ভারত অভিযান। পাশাপাশি নির্মল গঙ্গা মিশন, মুদ্রা যোজনা, বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াওয়ের মতো মোদী সরকারের কর্মসূচিতে মজেছে জনতা-জনার্দন। তিন তালাক নিষিদ্ধও একটা উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত। সবমিলিয়ে ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ মন্ত্রেই দেশবাসীর মন জিতেছেন নমো। যদিও মোদীর অচ্ছে দিন নিয়ে কম কটাক্ষ করেনি বিরোধীরা।
রিস্ক নিতে জানেন মোদী :
বরাবরই সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোদী, কখনও পিছপা হননি। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থই হোক কিংবা দল, সবক্ষেত্রেই মোদী ‘রিস্ক’ নিয়েছেন। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বাছাইয়ে মোদীর সিদ্ধান্ত উল্লেখযোগ্য। মহারাষ্ট্রে যেখানে মারাঠিদের দাপট রয়েছে, সেখানে দেবেন্দ্র ফড়নবীশের মতো একজন ব্রাহ্মণকে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছেছেন। অন্যদিকে, জাট না হওয়া সত্ত্বেও মনোহরলাল খট্টরকে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়েছেন নমো। দেশের সুরক্ষার প্রশ্নে ২০১৬ সালে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক কিংবা হালের এয়ার স্ট্রাইকে মোদী ঝড়ের বেগ আরও তীব্র হয়েছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। তাছাড়া সবথেকে চর্চিত নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত তো ‘নজিরবিহীন’। উল্লেখ্য, উনিশের নির্বাচনে মোদীকে হঠাতে নোট বাতিল ইস্যুকে হাতিয়ার করেছিল বিরোধীরা। একইসঙ্গে ছিল জিএসটি চালুর মতো সিদ্ধান্তও।
দলিতদের পাশে মোদী :
দলিতদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে বিজেপি, বিরোধীদের এ অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রামনাথ কোবিন্দকে দেশের রাষ্ট্রপতির আসনে বসিয়ে মাস্টারস্ট্রোক দেয় মোদীবাহিনী। দলিত আইকন বি আর আম্বেদকরের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করে দলিত শ্রেণির আরও কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন নমো। অন্যদিকে গরিবদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে জন ধন যোজনা, উজ্জ্বলা প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, আয়ুষ্মান ভারতের মতো প্রকল্প চালু করেছে মোদী সরকার।