জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ইস্যু

সম্ভাবনাময় আগামীর বার্তা দিলেন নরেন্দ্র মোদী

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০১৯, ১১:০৮ পিএম সম্ভাবনাময় আগামীর বার্তা দিলেন নরেন্দ্র মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী- ফাইল ফটো

জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতির উদ্দ্যেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর এই ভাষণে তিনি কাশ্মীরিদের আশায় ভাসালেন, দিয়ে গেলেন সম্ভাবনার বার্তা।

বৃহস্পতিবারের (৮ আগস্ট) এই ভাষণে, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদের জন্য জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের কী লাভ হয়েছে? ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫এ ধারা জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ, পরিবারবাদ ছাড়া আর কিছু দেয়নি। ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫এ ধারায় সংরক্ষণের নিয়ম থাকায় জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের উন্নয়ন হয়নি।

তিনি কাশ্মীরিদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরকে সেরা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সবাইকে কাজ করতে হবে।  জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে আমি আশ্বস্ত করছি, আপনাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার আপনাদের খুব শীঘ্রই প্রতিষ্ঠিত হবে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তান থেকে ভারতে যাঁরা এসেছিলেন, ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তাঁদের সব অধিকার রয়েছে।’  

তিনি বলেন, ‘লাদাখের ভেষজ ঔষধি ও সবজি সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। খেলার দুনিয়ায় কাশ্মীরের যুবকরা দেশের মান আরও বাড়াবে। খেলাধুলোর প্রভূত উন্নতি হবে, সারা বিশ্বে তাঁদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাবে।‘ 

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের যুব সম্প্রদায় অনেক এগিয়ে যাবে। একটা সময় ছিল, সিনেমার শুটিংয়ের জন্য জম্মু-কাশ্মীরই ছিল অন্যতম গন্তব্য। বলিউড, তেলুগু, তামিল সিনেমার লোকজনকে আর্জি জানাব, ফের উপত্যকায় শুটিংয়ে আসতে। এ বার নতুন ব্যবস্থাপনায় সেই অবস্থা আবার ফিরে আসবে। কিন্তু অশান্তির জন্য সেটা বন্ধ ছিল।’  

ভারত নেতা বলেন, ‘আমি মানি না, দীর্ঘদিন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরে চালু রাখার প্রয়োজন হবে। আমার পুরো বিশ্বাস, এই নতুন ব্যবস্থায় আমরা সবাই মিলে জম্মু-কাশ্মীরকে সন্ত্রাসমুক্ত করব। জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে একটা কথা বলতে চাই, আপনাদের দ্বারাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে।’ 

কাশ্মীরিদের আশায় ভাসিয়ে বিজেপির এই নেতা বলে, ‘সড়ক বা রেললাইনের কাজ হোক— সব কাজে গতি আসবে। এছাড়া দুর্নীতি দমন বিভাগ তৈরি হবে। আইআইটি, আইআইএম, এইমস— এই সব প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে। যে সব পরিকল্পনা শুধুমাত্র খাতায় কলমে ছিল, সেটাই এখন মাটিতে নেমে কাজ হবে। যখনই রাজ্যপালের শাসন জারি হয়, তখনই তা কেন্দ্রের অধীনে আসে। ৩৭০ ধারা উঠিয়ে জম্মু-কাশ্মীরকে সরাসরি কেন্দ্রের অধীনে নেওয়া হল।’ 

এর আগে মঙ্গলবার সংসদে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সমাপ্ত করার একটি প্রস্তাব পাস করেছে। ওই রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল: জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে বিভক্ত করার একটি বিলও পাস করানো হয়েছে। 

জম্মু ও কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করার বিল সংসদের উভয় কক্ষে পাস হওয়ার পরপরই মোদী বলেছিলেন যে এটি একটি 'গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত'। ট্যুইট করে মোদী বলেছিলেন, 'আমরা একসঙ্গে, আমরা একসঙ্গে উঠে দাঁড়াব এবং একসঙ্গেই আমরা ১৩০ কোটি ভারতীয়দের স্বপ্ন পূরণ করব! আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি স্মরণীয় সময় এখন, যেখানে জম্মু ও কাশ্মীর সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন নিয়ে পাস করেছে!

জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদাদানকারী ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এমন বড় পদক্ষেপের পর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে কাশ্মীরকে। এনিয়ে যেকোনও প্রতিক্রিয়া রোধ করতে উপত্যকাটি একরকম অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। সেখানকার অধিকাংশ অঞ্চলেই ফোন পরিষেবা এবং ইন্টারনেট সংযোগ স্থগিত রয়েছে। চলছে কারফিউ, নেই গণমাধ্যম বা তাদের কর্মী, সেখানের শীর্ষ কর্মকর্তারা স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করে যোগাযোগ রাখছেন। অল ইন্ডিয়া রেডিও মারফৎ প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ ঘিরে ছড়িয়েছে জল্পনা।

এদিকে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাশ্মীর ইস্যুকে তুলে ধরে ভারতের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে মরিয়া পাকিস্তান। ভারতের সাম্প্রতিক অবস্থানের জেরে দিল্লীর সঙ্গে সমস্ত রকম কূটনৈতিক এবং বাণিজ্য সম্পর্কে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বে বুধবার পাকিস্তানের জাতীয় সুরক্ষা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। ভারত থেকে পাক রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভাষণে মোদী কি বলতে যাচ্ছেন তা নিয়ে ইতোমধ্যেই জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

দেশটির জাতীয় নির্বাচনের আগে গত ২৭ মার্চ মোদী জাতির উদ্দেশ্যে সর্বশেষ ভাষণ দিয়েছিলেন, তখন তিনি একটি লাইভ স্যাটেলাইটকে অ্যান্টি স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র (এ-স্যাট)-এর মাধ্যমে ধ্বংস করায় ভারতীয় ক্ষমতা প্রদর্শন নিয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন। এ 

আগামী বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দেশটির স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশ্যে তার প্রথাগত ভাষণের কয়েক দিন আগেই ফের এই ভাষণ বিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে।

আরও সংবাদ