করোনা আতঙ্ক

রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছে, যেন ৩৭০-পরবর্তী কাশ্মীর!

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০, ০৮:৫৪ এএম রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছে, যেন ৩৭০-পরবর্তী কাশ্মীর!
উহান শহর ● ইন্টারনেট

গত এক বছর চীনের যে শহরটিতে থাকি, তার নাম হাংঝউ। ই-কমার্সের সম্রাট আলিবাবার সদর দফতর এই সুন্দর ও শান্ত শহরে। কিন্তু নিরিবিলি শহরটি যে এভাবে একেবারে চুপচাপ হয়ে যাবে, ভাবতে পারিনি। 

উহান শহর থেকে সাড়ে ৭০০ কিলোমিটার দূরে হলেও নতুন করোনাভাইরাসের ছোঁয়া এখানেও লেগেছে। প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে সংবাদমাধ্যম বলতে এখানে মূলত সোশ্যাল মেসেজিং অ্যাপ ‘উইচ্যাট’। সেখান থেকেই জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কত, কত জন মৃত, কত জন রোগমুক্ত হল— এই সব। যেমন আমার পাওয়া সূত্র আমার শহরেই আক্রান্ত ১৫১। আর এই সংখ্যাগুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রায় গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে সবাইকে। অনেকটা কাশ্মীরের মতো— শুধু সেনা নেই আর মোবাইল-ইন্টারনেট চালু রয়েছে। কিন্তু ক্যামেরায় ছবি তুললে রাস্তাঘাটের চেহারাটা প্রায় একই রকম দাঁড়াবে। আনন্দবাজার।  

২৫ জানুয়ারি চীনা নববর্ষ। সেই উপলক্ষে প্রায় সমস্ত দফতর ও স্কুল-কলেজে এক সপ্তাহ আগে থেকে ছুটি পড়ে যায়। পূজার ছুটির মতোই বেশ লম্বা এই ছুটি। বিশ্ববিদ্যালয়েও ১৮ জানুয়ারি থেকে ছুটি পড়ে গিয়েছিল। ক্যাম্পাসে যারা ছিলেন, তাদের জন্য শুধু একটি ক্যান্টিন খুলে রাখা হয়েছিল। নববর্ষের পরে সব কিছু খুলে যাওয়ার কথা, কিন্তু নিজেদের কোয়ারেন্টাইন করে রাখার জন্য সকলকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাস প্রবাসীদের নাম, ইমেল ও ফোন নম্বর নিয়ে রেখেছে। জানিয়েছে, আমাদের ওপরে নজর রাখা হবে। আমার বিভাগও আমাদের শারীরিক অবস্থা গত মাসের ভ্রমণ বৃত্তান্ত রেকর্ডে রেখেছে। রাস্তায় বেশ কয়েকটি জায়গায় থার্মাল চেকিং পয়েন্ট বসানো হয়েছে। গাড়ি থামিয়ে চালক ও আরোহীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন পুলিশকর্মীরা।

উহান থেকে দূরে থাকলেও আমাদের এই শহরে থাকা প্রবাসীদের উদ্বেগ একটু অন্যরকম। যেহেতু আমরা সংক্রমণের কেন্দ্র থেকে একটু দূরে, আমাদের পক্ষে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়াটা অতটা সহজ হচ্ছে না। অনেকেই ভয় পাচ্ছেন, শেষে বিমানবন্দর থেকেই না সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া অনেকে আর একটা দিকও ভেবে দেখছেন। যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, তারা চীনেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। অনেক ভারতীয় তাই ভাবছেন, ভারতের থেকে চীনে ঠিকমতো চিকিৎসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেহেতু রোগের উপসর্গ সাধারণ সর্দি-কাশির মতো এবং ১৪ দিনের আগে নতুন করোনাভাইরাসের প্রভাব আছে কিনা সুনিশ্চিত করা যায় না, তাই দেশে ফিরে যদি সংক্রমণ ধরা পড়ে, তখন ঠিক মতো চিকিৎসা পাওয়া মুশকিল হতে পারে। উহানের বাইরে যারা এখন ঘরে ফিরতে চান, তাদের জন্য দূতাবাস থেকে নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশও নেই। 

তাই অনেকেই এখানেই রয়ে যাচ্ছেন, গৃহবন্দি জীবন মেনে নিয়েই।

এসএমএম