মৃত্যুর মুখে মৃত্যুদূত: করোনার আগ্রাসনে বিপর্যস্ত ইসরায়েল

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২০, ১২:১৯ পিএম মৃত্যুর মুখে মৃত্যুদূত: করোনার আগ্রাসনে বিপর্যস্ত ইসরায়েল

ইহুদি অধ্যুষিত ইসরায়েলের বুকে সংক্রমণের গতি সঞ্চার করেছে করোনাভাইরাস। ফিলিস্তিনের প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের কাছে এক যুদ্ধবাজ 'মৃত্যুদূত' খ্যাত ইসরায়েল এখন করোনার মরণগ্রাসের মুখে পতিত। শুরুতে দেশটির বুকে সংক্রমণের গতি একেবারে মন্থর থাকলেও সেখানে হঠাৎ যেন করোনা বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সবচেয়ে মন্থর গতিতে ইসরায়েলের বুকে অনুপ্রবেশ ঘটালেও আকস্মিকভাবেই ভয়াল দানবের মত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস।

শুক্রবার (২৭ মার্চ) পর্যন্ত পাওয়া ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে এরইমধ্যে ইসরায়েলে ২ হাজার ৬৯৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আর প্রাণহাই ঘটেছে ৮ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে ৪৬ জনের অবস্থা সংকটপূর্ণ।

ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের করোনাভাইরাস বিষয়ক কমিটির সংসদের প্রথম বৈঠকে বৃহস্পতিবার এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে নেসেটের রিসার্চ অ্যান্ট ইনফরমেশন সেন্টার।

ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে কমিটির সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল মোশে বার সিমান এ তথ্য স্বীকার করেন। তিনি জানান, আটজনের মধ্যে বৃহস্পতিবার মারা গেছেন পাঁচজন। এর আগে মারা যান তিনজন।

জেনারেল সিমান বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে মোট দুই হাজার ৬৯৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৬ জনের অবস্থা সংকটপূর্ণ। এ পর্যন্ত মারা গেছে আটজন। বৃহস্পতিবার মারা গেছে পাঁচজন।

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছি যেখানে প্রতি তিন দিনে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হচ্ছে।’ তার আশঙ্কা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলে গুরুতরভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুইশোর ঘরে গিয়ে ঠেকবে।

‘এটি আসলে মারাত্মক ঘটনা-বিশেষ করে প্রতিদিন যা ঘটছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে লকডাউন শব্দটা পছন্দ করি না। কিন্তু আমরা পুরো বন্ধের সন্নিকটে’-যোগ করেন ডিরেক্টর জেনারেল মোশে বার সিমান।

নেসেটের ওই প্রতিবেদন বলছে, গত ২০ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত-এই পাঁচ দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ‍মৃত্যৃর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন-এমন রোগীর সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

তবে ইসরায়েলের জন্য আরো ভয়াবহ তথ্যটি হচ্ছে, বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রথম করোনা সংক্রমণের তথ্য জানা গেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা গাজা অঞ্চলে করোনার প্রাদুর্ভাব প্রকট হলে সময়ের সবচেয়ে ভয়াল অভিজ্ঞাতার সাক্ষী হবে বিশ্ব।

ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের মুখে সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়া ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রব্যবস্থার যে পরিস্থিতি- বাস্তবতায় তো দূর, কল্পনাতেও করোনা প্রবাহ প্রতিরোধের কথা চিন্তা করতে পারবে না তাঁরা। আর তাতে করে মহামারীর প্রকোপে মৃত্যুর তাণ্ডব কতটা ভয়াল হতে পারে তা দেখা যাবে। সম্পূর্ণ গাজা পরিণত হবে মৃত্যু উপত্যকায়। আর এই অপ্রতিরোধ্য সংক্রমণের প্রলয় প্রবাহ নিশ্চিত ভাবেই আছড়ে পড়বে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ইসরায়েলের মাটিতে। 

ফিলিস্তিনের জন্য হয়তো লাশের মিছিল নতুন কিছু নয়। কিন্তু যে ভয়াবহতা ইসরায়েলের জন্য অপেক্ষমান, তার নুন্যতম মাত্রা সম্পর্কে কোনো ধারনাই প্রকাশ করতে পারেননি গবেষকরা। 

বিভিন্ন দেশে ২৪ হাজার ৭৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখের বেশি। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৪২ জন।

এসকে