পেয়ারার যত গুণাবলী

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ২১, ২০১৯, ০৫:৫৮ পিএম পেয়ারার যত গুণাবলী

পেয়ারা একরকমের সবুজ রঙের বেরী জাতীয় ফল । তবে অন্যান্য বর্ণের পেয়ারাও দেখতে পাওয়া যায়। লাল পেয়ারাকে (Marroonguava) রেড আপেলও বলা হয়। পেয়ারার বৈজ্ঞানিক নাম Psidiun guajava । প্রায় ১০০টিরও বেশি প্রজাতির পেয়ারা বিশ্বের  বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রভৃতি স্থানে পেয়ারা বেশ জন্মে। অনুমান করা হয় ১৭শ’ শতাব্দীতে পেয়ারার উৎপত্তি। এটি একটি পুষ্টিকর ফল।  পেয়ারাতে ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েডস, ফোলেট, পটাশিয়াম, আঁশ এবং ক্যালসিয়াম প্রভৃতিতে সমৃদ্ধ। একশ’ গ্রাম পেয়ারায় দুইশ’ মি.গ্রা. ভিটামনি সি আছে অর্থাৎ পেয়ারায় কমলার চেয়ে ৪ গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে। পেয়ারার খোসায় কমলায় চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে।

পেয়ারায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন রয়েছে। পুষ্টিমানের বিবেচনায় কমলার মান যেখানে ১৮৬ পয়েন্ট সেক্ষেত্রে পেয়ারার পুষ্টি মূল্যমান ৪২১ পয়েন্ট। পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধক। ১০০ গ্রাম পেয়ারায় পানি ৮৬.১০ গ্রাম, শক্তি ৫১ কি.ক্যালোরি, প্রোটিন ০.৮২ গ্রাম, আঁশ ৫.৪ গ্রা. ফসফরাস ২৫ মি.গ্রা. সোডিয়াম ৩ মি.গ্রা. ভিটামিন এ ৭৯২ আই ইউ থাকে। তদুপরি পেয়ারাতে ম্যাঙ্গানিজ, সেলিনিয়াম, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩ ইত্যাদি মূল্যবান খনিজ ও ভিটামিন থাকে। রোগ প্রতিরোধে পেয়ারার অনেক গুণ রয়েছে। পেয়ারার বীজে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ পলিআন-সেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ও আঁশ বিদ্যমান। পেয়ারা পাতার রস ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং সংক্রমণ, প্রদাহ, ব্যথা জ্বর, বহুমূত্র, আমাশয় প্রভৃতি রোগে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

পেয়ারার  উপকারিতা
পেয়ারাতে আছে অতিমাত্রায় ভিটামিন সি এবং আয়রন। এই ভিটামিন সি এবং আয়রন শরীরে ঠাণ্ডা জমতে দেয় না। তাই পেয়ারা খেলে খুব সহজেই ঠাণ্ডা কাশির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। পেয়ারা জ্বর সারাতে খুব ভাল কাজ করে।
 
পেয়ারাতে আছে ভিটামিন বি৩ ও বি৬ যা মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল সহজ করে। মস্তিষ্ক ফ্রেস রাখে। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। 
পেয়ারাতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও বি। যা আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। পেয়ারাতে আছে উপকারি ভিটামিন এ। ভিটামিন এ চোখের জ্যোতি বৃদ্ধিতে কাজ করে।
ত্বকে ন্যাচারাল ক্রিম ও টোনার জেল হিসেবে কাজ করে। পেয়ারা খেলে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। ত্বককে যে কোন সমস্যা থেকে রক্ষা করে। কুচকে যাওয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে ত্বক করে টানটান। রায় আছে ভিটামিন এ,বি,সি ও পটাশিয়াম যা ত্বকে এন্টি-অক্সাইড বৃদ্ধি করে। এন্টি-অক্সাইড ত্বক উজ্জল করে ও বয়সের ছাপ দূর করে।

পেয়ারা রক্ত থেকে অতিরিক্ত কোলস্টোরেল দূর করে। অতিরিক্ত  কোলস্টোরেল দূর করার মাধ্যমে উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। পেয়ারায় বিদ্যমান হাই-ফাইবার রক্তের চিনি কমানোর মাধ্যমেও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। পেয়ারের সব থেকে অবাক করা ও কার্যকারি উপকারিতা হচ্ছে এটি ক্যান্সারের জীবানুর বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিক পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পেয়ারা খায় তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ ভাগ কম থাকে। বিশেষ করে নারীদের স্তনের ক্যান্সার প্রতিরোধে পেয়ারা অনেক কার্যকর।
 
রক্তের চিনি কমানোর দারুন ক্ষমতা আছে পেয়ারাতে। যারা পেয়ারা খায় তাদের ডায়েবেটিকস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।যারা ডায়েবেটিকস রোগে আক্রান্ত তারা রোজ একটি করে পেয়ারা খেলে তাদের ডায়েবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

পেট ভাল রাখতে পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। পেয়ারায় রয়েছে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট ও অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল প্রপার্টিস। যা ডায়ারিয়াতে বেশ ভালো কাজ দেয়।
 
থাইরয়েডের জন্য উপকারি কপারের খুব ভালো উৎস হচ্ছে পেয়ারা। কপার আমাদের দেহের খুব গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি যা দেহের হরমোন ও অর্গান সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে।আর কপার দেহের হরমোন উৎপাদন ও শোষণকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য এবং এর পটাশিয়াম ও শক্তিশালী প্রদাহনিরামক গুণাগুণ থাইরয়েডের কাজকে উন্নত করতে সহায়তা করে। তাই থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা দূর করার জন্য পেয়ারা ও পেয়ারা পাতাকে খাদ্য তালিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে নিতে হবে।
 
এছাড়াও পেয়ারা দেহের শক্তি বৃদ্ধি ও ওজন কমানোর কাজকে সহজ করে দেয়।