বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে যেসব কারণে

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০১৯, ০৬:৫৭ পিএম   বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে যেসব কারণে

 ভালো দাম্পত্য সম্পর্ক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দাম্পত্য জীবন সুখের না হলে পুরো জীবনটাই অসহনীয় হয়ে ওঠে। এত অশান্তি আর কোথাও নেই ,যদি কাছের মানুষটির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থাকে।  সবচে বড় বিষয় হচ্ছে দুজনের বোঝাপড়া। এ  জায়গাতে মিল না হলে জীবন   বিষাদময় হয়ে উঠতে বাধ্য । দাম্পত্য জীবনে ছোট ছোট কিছু ভুল ধীরে ধীরে বড় হয়,এবং এক সময় যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন সম্পর্কের  সঠিক রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ার মধ্য দিয়ে মানুষ মুক্তি খোঁজে। অথচ একটু সচেতন হলে এড়ানো যায় এসব সমস্যা।   

  অনেক স্বপ্ন নিয়ে গড়া সংসারে কিছু সংকট পুঞ্জিভুত হয়ে  নারকীয়অবস্থায় রূপ নেয়।  দুজনে দুজনকে  মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় না পারতে পারতে একটা সময় আলাদা হবার সিদ্ধান্তও চলে যায়।  পশ্চিমা বিশ্বে বিবাহ বিচ্ছেদ একটি শঙ্কার নাম। সেতো অনেক আগের থেকেই। আর আমাদের দেশে সম্প্রতি এটি শংকাময় একটি বিষয়ে পরিনত হয়ে উঠেছে।

ডয়চে ভেলের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় – “ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দু’টি এলাকায় ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় ২৩০৯টি, যার মধ্যে ১৬৯২টি স্ত্রী কর্তৃক আর স্বামী কর্তৃক ৯২৫টি৷ ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত তালাকের সংখ্যা ৩৫৮৯টি৷ এর মধ্যে ২৩৮১টি স্ত্রী কর্তৃক আর স্বামী কর্তৃক হয়েছে ১২০৮টি৷ এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, তালাক দেয় পুরুষ ৩০ শতাংশ, আর নারী ৭০ শতাংশ ৷”
অন্যদিকে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় বিবিসির একটি রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলা হয় –

“ঢাকায় প্রতি ঘন্টায় গড়ে একটি তালাকের ঘটনা ঘটছে”। সংবাদমাধ্যমগুলোর এমন প্রতিবেদনের বিভিন্ন কেস স্টাডিতে দেখা যায় কোন একটি নির্দিষ্ট পক্ষ সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। বরং দুজনই বা কখনো কখনো সন্তানের উপরও এর প্রভাব পড়ছে।
 দাম্পত্য কলহের পরিনামে তালাক কিংবা বিচ্ছেদের ঘটেই চলছে । এর পেছনে মূলত দায়ী আমাদের  কিছু ভুল। সেব ভুলগুলো্ জেনে নিজেদের শোধরানোর পথ আছে। এগুলো দেখে সব দম্পতিরা সাবধান হবেন এমন প্রত্যাশা আমাদের ।


 নেতিবাচক মনোভাব

 মানুষের ভিতরে ভালো গুনাবলী যেমন থাকে মন্দ দোষও থাকে। আমাদের দেশে প্রচলিত মএকটি কথা আছে দোষে - গুনে  মানুষ। এসব জেনেই জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে । সঙ্গীর ভালো দিকগুলো  অবিষ্কার করা জরুরি। সেগুলোরন  প্রশংসা করতে হবে। তাকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। আপনার সঙ্গীকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে তাঁর সেই ভালো দিকগুলোর জন্যে আপনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। কোন ধরনের নেতিবচক  মনোভাব পোষণ করা থেকে বিরত থাকুন ।
 যে মানুষের ভালো দিক আছে, তিনি ভালোর গুরুত্ব  বুঝবেন নিশ্চয়ই। একই সাথে আপনার সঙ্গীর মধ্যে নেতিবাচক যে দিকগুলো রয়েছে সেজন্য নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে নেই। তার দোষের জন্য তাকে দোষারোপ না করে  সেসব শুধরে তাকে ভালো হবার জন্যে সাপোর্ট দিন। একসাথে পথ চলার একমাত্র সমাধান হলো কম্প্রোমাইজ করেসংকটের সমাধান করা।  

 সঙ্গীর কথা না শোনা
 সারাজীবন  যে  মানুষের সাথে কাটাবেন তিনি যখোন কথা বরবেন আপনাকে মনযোগ দিয়ে শুনতে হবে। এটা না শুনিলে মনে করা হয় আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। যেটা তার কাছে খুব অপমানজনক মনে হয়। ব্যক্তিত্বে ব্যাপকভাবে ধাক্কা দেয় এসব আচরণ। 
এতে করে তার মনে হতেই পারে – আপনি প্রতিনিয়ত তাকে অবজ্ঞা করছেন। মনে হতে পারে, আপনি তাকে যথাযথ উপায়ে বুঝতে পারছেন না। আপনি যদি কাউকে বুঝতে চান তাহলে আপনার প্রথম কাজ হবে তাকে শোনা। আর আপনি যদি আপনার প্রিয় মানুষটিকে বুঝতেই না পারেন তাহলে হয়ত আপনি নিজেও পূর্ণ হতে পারবেন না।


অসততা

কমিটমেন্টের সবচেয়ে বড় জায়গাটি হলো সততা। আপনি যদি আপনার সঙ্গীর সাথে সৎ থাকতে পারেন তাহলে দুজনের মধ্যে খুব ভালো একটা বোঝা-পড়া গড়ে উঠবে। তবে অবশ্যই এই বিষয়টি দুজনের মধ্যে থেকেই আসতে হবে।

এতে করে আপনার সঙ্গী নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করবে আপনার মত একজনকে পেয়ে। সুতরাং আপনি তার পাশে থাকলে আপনা থেকেই তার মধ্যে একটা তৃপ্তি চলে আসবে। এক ছাদের নিচে থাকার জন্যে আত্মতৃপ্তিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

নিজেকে সঙ্গীর সব মনে করা

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, “বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলে দেয়”। যথাযথভাবে সঙ্গীকে গুরুত্ব দেয়া নিয়ে আমাদের সবার খুব ভালো রকমের একটা সমস্যা আছে। যেমন: স্বামী যখন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে দুপুরের খাবারটা সারতে পারেননি, তখন স্ত্রী ক্ষেপে আগুন। কেন? কারণ স্বামী কেন দুপুরের খাবারের ফাঁকে কথা বলল না।
স্ত্রী তখন ভেবে নিতে আরম্ভ করে তিনি তার স্থানটি হারিয়ে ফেলছেন।  এসব বিষয়ে সাবধান থেকে অন্তর থেকেই তার খবর নিন বোঝাপড়া আরো ভালো হয়ে উঠবে।

খোটা দেওয়া

দাম্পত্য জীবনে এটা হয়ত সবচেয়ে বেশি ঘটে।  কোন ভুলকে আপনি বিভিন্ন কথার ভেতরে টানলে এটা যেকোন মানুষের ব্যক্তিত্বে বাধে,এতে বাড়ে বিরক্তি। যদিও এসব আমাদের সংস্কৃতিতে এমনভাবে চলে এসেছে যে তাতে তেমন কোন প্রভাব পড়ে না। কিন্তু আপনার সঙ্গী কিন্তু এসব নিয়ে একটা সময় বাধ্য হয়ে ভাবতে শুরু করে। আড়াল করে কষ্টও পায়।
এসব খারাপ লাগা দিনে দিনে জমতে জমতে বড় ধরনের খারাপ লাগা শুরু হয়। যেটা এক সময় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। সম্পর্কের বাঁধন এতে হাল্কা হতে থাকে।

আগ্রহ হারিয়ে ফেলা

ডেল কার্নেগীর একটা লেখায়  লিখেছেন, অফিস থেকে বাড়িতে যাওয়ার সময় একটা গোলাপ ফুল নিয়ে যাবেন। গোলাপ ফুল নিয়ে যাওয়ার কারণ আহামরি কিছু না। শুধু আপনার সঙ্গীকে একটু জানান দেওয়া আপনি এখনো তাকে ভালোবাসেন, আপনাদের প্রেম এখনো পুরোনো হয়ে যায়নি।
এতে আপনার প্রতি তার আগ্রহ জন্মাবে। একই লেখায় কার্নেগী চল্লিশ হাজার বিবাহ বিচ্ছেদ নিষ্পত্তি করা জজ জোসেফ সারাফ বরাত দিয়ে বলেন, বৈবাহিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি এসব ছোট ছোট সম্ভাষণ, ছোট ছোট অনুভূতি। কারণ এগুলো ভালো সম্পর্কের চেইন।

 

ডিভোর্স ভাবনা
 অল্পতেই ডিভোর্সের কথা মাথায় আনতে নেই। মাথায় একবার আনলে ভেতরে এটা ক্রমশ বড় হতে থাকে। এক সময মাথায় বিঁধে যায় । তখন পান থেকে চুন খসলেই আপনি ডিভোর্স চাইবেন। আপনার এমন আবদার অপর মানুষটিকে সম্পর্কের প্রতি ক্লান্ত করে তুলবে। আপনি যতবার এটি চাইবেন ততবার এই ঘটনার পুরনাবৃত্তি হবে। শেষমেশ  কিছু একটা ঘটেও যেতে পারে।

 “ধন্যবাদ” না বলা

 আপনার একটি ‘ধন্যবাদ’ আপনার প্রিয় মানুষটির সব ক্লান্তিকে দূর করে দেবে। আপনাকে বড় করে তুলবে। আপনাদের জীবনকে করে তুলবে  সহজ আর প্রেমময়। আপনার ভেতর বিন্দুমাত্র ইগো থাকলেও তা ভেঙে যাবে এই একটি শব্দতে।
পাশাপাশি এর কারণে আপনার প্রিয় মানুষটি আপনার সুখের কারণে সুখী হতে পারবে। সম্পর্কের ভীত আরো মজবুত হয়ে উঠবে।

অভাবে-সংকটে

কখনো অভাব ঘরে ঢুকলে দুজনের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান করা যায়। অভাব ঘরে ঢুকলে নিজেরা এক থাকুন,কোন অভাবকে অভাব মনে হবে না । কথায় বলে, “যদি হয় সুজন, তেঁতুল পাতায় ন জন”। অর্থনৈতিক সমস্যা হলে পাশাপাশি বসে সমাধান করুন। সংকট মিটে যাবে