সত্তা
নৈঃশব্দ্য পাথরের মত
বুকে চেপে বসে
এই বিনিদ্র রাত্রিতে
আমাকে ব্যাধির বিপন্নতায়
শয্যা থেকে তুলে এনে
দাঁড় করায় তারাময়
অন্ধকার আকাশের নিচে।
বহুকাল আগে
কে যেন বলেছিল
মরে গেলে মানুষ
আকাশে তারা হয়ে যায়।
তারাদের ভীড়ে
মৃত পিতাকে খুঁজতে চেয়ে
ইশারাহীন ক্লান্তির অবসাদে
হঠাৎ খুঁজে পাওয়া
বহুমূল্যবান বস্তুর মত
নিজের একক সত্তার উপলব্ধি
আমাকে বিহ্বল করে তোলে।
মনে পড়ে
কতদিন আমি আকাশ দেখিনি
তারা দেখিনি
কত দীর্ঘদিন
নিজের সাথে কথা বলিনি
কতদিন আমি কাঁদিনি
কতদিন নিজের জন্য বাঁচিনি!
ঈশ্বর জানে
এই ঘর, গৃহস্থালি
প্রিয় সন্তানের মুখ
এরচেয়ে বড় সুখ ,বড় সত্য
আর কিছু নেই আমার!
তবু
কোন এক বোধ
অশিরীরী আত্মার মতন
এই মধ্যরাতে
আমাকে নিয়ে চলে
একাকিত্বের পথে
আমাকে জানান দেয়
এই আত্মস্থ জীবন
ঠিক যেন আমার নয়!
অনভ্যস্থ শরীরে
বারো হাত শাড়িতে
অভ্যস্থ হতে হতে
হয়তো কোনো ভাজে
নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি কোথাও!
প্রেম
‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি
পৃথিবীর পথে....."
আসলে পথ ফুরোয় না কারো।
বনলতার চোখের অনুরূপ
শান্তিময় আশ্রয় হয়ে
সমস্ত উদ্বেগ, অস্থিরতার অবসানে
কেউ অপেক্ষারত থাকে না
জীবনের কোথাও কোনো বাঁকে ।
তাই
পরাবাস্তবতার ঘোর থেকে জেগে
প্রবল বিতৃষ্ণার পথে জীবনানন্দ
হেঁটে চলেন ট্রামের ধার ঘেঁষে।
আর একজন কায়েস আহমেদ
দূর্বোধ্যতার অভিমান বুকে নিয়ে
নিভৃতে ঝুলে পড়েন সিলিঙে।
মাঝে মাঝে
একটা যৌণতাবিহীন প্রেম অথবা
কামনার উত্তাপহীন একটা নিবিড় আলিঙ্গনের
জন্য আমি ছটফট করে মরি ভেতরে ভেতরে
অথচ জানি
পৃথিবীতে কোনো প্রেমিক নেই।
প্রেমিকের বেশে পুরুষের দস্যুতার
ইতিহাস জেনেছি ঢের।
তবু কখনও কখনও
শুধু একটু শান্তির প্রয়োজনে
এই অবহ হৃদয়ভার প্রশমনে
কারও নির্ভরতার ছায়ায় বসে কিছুটা
অশ্রুপাত অনিবার্য হয়ে পড়ে।
কিন্তু আমি জানি
কোথাও কেউ নেই।
কেউ কোথাও থাকে না
কারও জন্য এখানে।
কাল সারাটারাত আমি
অরুন মিত্রকে বসিয়ে রেখেছিলাম শিয়রে।
প্রকৃতপ্রস্তাবে কবি ছাড়া
আমার কোনো প্রেমিক নেই।