নাম পাল্টে সুপ্রভাতই হচ্ছে আকাশ 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০১৯, ১০:১০ এএম নাম পাল্টে সুপ্রভাতই হচ্ছে আকাশ 
সুপ্রভাত পরিবহনের বাস

নাম পাল্টে সড়কে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে সুপ্রভাত। নতুন নাম ‘আকাশ পরিবহন’। তবে নাম পাল্টালেও পরিবর্তন হচ্ছে না তাদের রুট। সেই একই রুটে চলাচল করবে তারা অর্থাৎ প্রগতি সরণিতে চলাচল করবে এই বাস। এরইমধ্যে আকাশ পরিবহন নামে সড়কের চলাচলের জন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে পরিবহন শ্রমিক নেতারা।  

সম্প্রতি রাজধানীর প্রগতি সরণিতে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। এ ঘটনায় সুপ্রভাত এবং অন্য আরেকটি সড়ক দুর্ঘটনায় জাবালে নূরের বাস ঢাকায় চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তাতে তোয়াক্কা করেননি মালিক পক্ষ। তারা বাসের নাম ও রঙ বদল করে সড়কে নামার প্রস্তুতি শেষ করে  এনেছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু সড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে। এই বাস চলাচল করছে গাজীপুরা থেকে ঢাকার সদরঘাট পর্যন্ত। 

চলছে খোলস পাল্টানো কাজ
বাসের চাপা মানুষ মরছে তো কি হয়েছে। বাস তো আর বন্ধ থাকবে না। ঝামেলা হলে নাম পাল্টাও, পুরান রঙ তুলে নতুন রঙ লাগাও। বেশ সব ঠিক। ঠিক তেমনটাই হচ্ছে সুপ্রভাত পরিবহনের ক্ষেত্রে। রঙ ও নাম পরিবর্তন করে সড়কে নামলো বলে আকাশ পরিবহন ওরফে সুপ্রভাত।

গত রোববার ঢাকা-ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউনে সরেজমিন দেখা গেছে, বেশ কয়েকি বাসের রঙ পরিবর্তন করা হচ্ছে। বাসগুলোর সুপ্রভাত পরিবহন কোম্পানি। মডেল টাউনের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে ৫০ গজ দূরে হাতের বামে অন্তত ৭০টি বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। পুরনো রঙ তুলে ফেলার কাজ চলছিল এবং বাসের নতুন নাম আকাশ এন্টারপ্রাইজ লেখা হচ্ছিল। এই মডেল টাউনের ভেতরের এক ফেরিওয়ালা সেলিম এ প্রতিবেদককে জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে এখানে বাসগুলোর রঙের কাজ চলছে। সারা দিন সুপ্রভাত পরিবহনের বাসগুলো মডেল টাউনের ভেতরে পার্কিং করা থাকে। প্রথমদিকে কমপক্ষে
২০০ বাস ছিল। তবে বেশ কিছু রঙ করে নিয়ে যাওয়াতে এখন সংখ্যা কমে গেছে। এই মডেল টাউনের ভেতরেই রাতভর চলে রঙের পরিবর্তন। যে সব গাড়ির কাজ শেষ হয়ে সেগুলো সকাল সকাল সরিয়ে ফেলা হয়। আবার নতুন করে সুপ্রভাত পরিবহনের বাস এনে ঘষা-মাজা করে রঙ করা হচ্ছে। সরেজমিনে বাস মালিকদেরও তাদের বাসের নাম মুছে ফেলতে দেখা গেছে। তবে কী কারণে বাসের নাম পাল্টানো হচ্ছে এ বিষয়ে কেউ  কিছু বলতে পারেননি।  

মমিন নামে সেখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে সুপ্রভাত বাসের চাপায় বিইউপি ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন। তাই বাস মালিক কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের ভাঙচুরের হাত থেকে বাঁচতে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করার জন্য এ কৌশল অবলম্বন করেছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসচালক ও তাদের সহকারীরা জানান, সুপ্রভাত বাস সার্ভিসটি সদরঘাট থেকে উত্তরা পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি ছিল। তবে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের হাত করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে রুট প্রলম্বিত করে গাজীপুর মহানগরের গাজীপুরা পর্যন্ত নিয়মিত চলাচল করছি। এ পরিবহনের ৫০ থেকে ৬০টি বাসের অনুমতি থাকলেও দুই থেকে আড়াইশ বাস প্রতিদিন ঢাকা থেকে গাজীপুরা চলাচল করেছে। এর বেশিরভাগই ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। এসব বাস আগের নামে নিষিদ্ধ হলেও নতুন নামে চলার  ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। কারণ যে কোনো পরিবহন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে অন্য পরিবহন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করতে পারে। তবে যে প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করবে, সেই প্রতিষ্ঠানটির বৈধ লাইসেন্স থাকতে হয়। আকাশ এন্টারপ্রাইজের বৈধ কাগজপত্র আছে বলেই তারা নতুন নামে রাজধানীতে বাস নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারি বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে প্রশ্ন করা হলে তার উত্তর বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তবে তিনি বলেছেন,  এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তবেই খতিয়ে দেখবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাস মালিক বলেন, লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এ খাতে। একটা গাড়ির অপরাধে সব গাড়ি বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত অনেকটা হাস্যকর। কথা প্রসঙ্গে তারা বলেন, তরকারি খারাপ হয়েছে বলে বউকে তালাক দিতে হবে। এটা যেমন ঠিক নয়, তেমনি সড়কে গাড়ি দূর্ঘটনা হতে পারে, তাই বলে পুরো লাইনের গাড়ি বন্ধ করে দিতে হবে? এটা তো হতে পারে। বিশ্বে কোথাও এ ধরনের নজির নেই। 

ঢাকা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা ওসমান আলী বলেন, গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে বাড্ডা এবং রামপুরা ও পল্টন সদরঘাট পর্যন্ত রাজধানীর আকাশ পরিবহনের রুট পারমিট আগেই ছিল। কিন্তু পরিবহন সংকট ছিল। ‘সুপ্রভাত’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই সুযোগ নেয় আকাশ পরিবহন। তারা ওই স্থানটি দখল করে নেয়। ওই রুটে আকাশ পরিবহনের বৈধতা আছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট পরিবহন নেতা। 

এইচএম/এসএমএম