৫০ জঙ্গির প্রোফাইল ইমিগ্রেশনে, সীমান্ত ও বিমানবন্দরে সতর্কতা 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ৮, ২০১৯, ১০:২৮ এএম ৫০ জঙ্গির প্রোফাইল ইমিগ্রেশনে, সীমান্ত ও বিমানবন্দরে সতর্কতা 
আইএসের হয়ে সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়া তাজ আবদুল মজিদ


সিরিয়া ও ইরাকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়ার পর বিশ্বের অনেক দেশ থেকে নাগরিকরা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। সেই তালিকায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি রয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে জন্ম নেয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকরাও রয়েছে। আইএস উৎখাত হয়ে যাওয়ার পরে এই বিদেশি জঙ্গিরা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের ১ জনকে গত  রোববার (৫ মে) রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) গোয়েন্দারা।

জানা গেছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আফগান যুদ্ধ ফেরত ও আইএসের সঙ্গে জড়িত এই ৫০ জনের অনেকেই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রবেশ করছে। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা এদের ‘ফরেন টেরোরিস্ট ফাইটার’ বলে বর্ণনা করছেন। তাদের নামের তালিকাসহ পুরো প্রোফাইল শাহজালাল বিমান বন্দরসহ দেশের সকল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে পাঠানো হয়েছে।

পাশাপাশি এ তালিকা স্থল বন্দর ও সীমান্ত এলাকার চেকপোস্ট, বিজিবি বিওপি এবং জেলা পুলিশ সুপারের বরাবরে পাঠানো হয়েছে। আর এ কারণে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।

সিটিটিসির উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মহিবুল ইসলাম খান বলেন, এছাড়াও বাইরে থেকে এই তালিকাটি ইমিগ্রেশনে দেয়া আছে। ফলে তারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলেই আমরা জানতে পারবো। যদিও এই তালিকার অনেকেই সিরিয়া বা ইরাকে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা গেছেন বলে বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

মহিবুল ইসলাম খান আরও বলেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএসের হয়ে সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশে ফেরত এক জঙ্গিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি। সিরিয়া ফেরত ওই জঙ্গির নাম মুতাজ আব্দুল মজিদ কফিল উদ্দিন বেপারি ওরফে মুতাজ (৩৩)। 

সৌদি আরব থেকে সে সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে গিয়েছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। গ্রেফতারকৃত মুতাজকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ জঙ্গি তৎপরতার তথ্য।

সোমবার তাকে আদালতে সোপর্দ করে ৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সন্ত্রাসী বিরোধী আইনে দায়ের হওয়া ওই মামলায় মুতাজ ছাড়াও অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এসআই আশরাফুল হক বাবু বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। এফআইআরে মুতাজের সিরিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করা এবং ঢাকায় এসে সরকার উৎখাতসহ নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

মহিবুল ইসলাম খান বলেন, সিটিটিসির গ্রেপ্তারকৃত এই সন্দেহভাজন জঙ্গি সৌদি আরবে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানকার দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট গ্রহণ করে তিনি সিরিয়ায় গিয়ে আইএসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।

এর আগে গুলশানের হোলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে অভিযুক্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরীও সিরিয়া-ইরাকে গিয়েছিলেন। তিনি আইএস এর গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণও নিয়ে ছিলেন বলে জানা যায়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন ব্রিটিশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, যিনি আইএসের জন্য সদস্য সংগ্রহ করছিলেন বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন। 

এ বিষয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিশ্লেষক তাসনিম খলিল বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা সিরিয়া বা আইএসে যোগ দিতে গিয়েছেন, তাদের সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য রয়েছে। তারা হয়তো তাদের প্রবেশ ঠেকাতে পারবেন। কিন্তু বিদেশে জন্ম নেয়া যেসব বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা যুদ্ধ করতে বা আইএসে যোগ দিয়েছেন, তাদের সম্পর্কে বাংলাদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তেমন সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই।
 
তিনি বলেন, মুতাজ নামে যে ব্যক্তিকে নিরাপত্তা বাহিনী আটক করেছে, তিনি গত পহেলা ফেব্রুয়ারি দেশে প্রবেশ করেন। গত ৩ মাস ধরে বাংলাদেশে তার কর্মতৎপরতা চালিয়েছে। জঙ্গি মিটিং করার সময় তাকে আটক করার কথা বলা হচ্ছে অর্থাৎ তিনি এতদিন ধরে নির্বিঘ্নে তার তৎপরতা চালিয়েছেন। এ রকম আরও অনেকে থাকতে পারে, যাদের কথা হয়তো নিরাপত্তা বাহিনীর আড়ালে রয়ে গেছে।

জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকেই সিরিয়া ও ইরাকে আইএস কোণঠাসা হতে শুরু করে। এখন তারা সর্বশেষ ঘাঁটিগুলোও হারিয়েছে। জঙ্গি কর্মকাণ্ড ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, সিরিয়া ও ইরাকে নিজেদের অবস্থান হারিয়ে আইসিস এখন বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে হামলার নীতি নিয়েছে।

বাগদাদীর সর্বশেষ ভিডিওতে দেখা গেছে, যে আইসিস এখন সিরিয়া ও ইরাকের বাইরে ৫/৬ জন মিলে হামলার নীতি নিয়েছে। এখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন একজন আমির নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে তাসনিম খলিল বলেন, সম্প্রতি ঢাকার গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাটি তাদের নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠার একটি উদাহরণ। ফলে বোঝা যাচ্ছে, তারা বাংলাদেশে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে আমাদের আরও বেশি সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

এ বিষয়ে সিটিটিসি কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম খান বলেন, এটি আমাদের জন্য অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জ, তবে এ বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। এই সমস্যা মোকাবেলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যা আমরা ঘোষণা করতে চাই না।

এইচ এম/ একেএস