গ্রামে সবার সঙ্গে ঈদ করার আনন্দই আলাদা। আর এ ঈদকে সামনে রেখে চলছে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের কাজ। কথা একটাই যেকোনো মূল্যে চাই সোনার হরিণ নামক ট্রেনের টিকিট। তবে কাউন্টারে টিকিট না পাওয়া গেলেও পাওয়া যাচ্ছে দালালদের হাতে।
শুক্রবার (২৪ মে) ভোর বেলায় রাজধানীর জুরাইন থেকে টিকিট সংগ্রহে কমলাপুর আসেন আবু তালেব। তিনি বলেন, জুরাইন থেকে ভোর বেলা টিকিটের জন্য স্টেশনে আসছি।ঘণ্টার পার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও মিলছে না টিকিট। অধিকাংশ টিকিট চলে গেছে দালালদের হাতে। প্রতি টিকিটে অতিরিক্ত ৪ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দিয়ে টিকিট নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, এবার কমলাপুর স্টেশনে ২০টি কাউন্টারে এক যোগে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তাও সামাল দিতে পারছে না। এর মধ্যে নানা ধরণের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের।
জিজ্ঞাসাবাদে পরিচয় গোপন রেখে হাসিবুল নামে এক দালাল বলেন, ভাই আমরা এসব দালালি করি পেটের দায়ে। আর যারা আমাদের কাছে টিকিট দিচ্ছে, তারা দিনে প্রচুর টাকা নিয়ে ঘরে ফিরছে। ওরা রেল কর্মকর্তা কসাই,দাম ছাড়ে না। টাকা বেশি হলে ওরা টিকিট ব্যবস্থা করে দিতে মরণ পন চেষ্টা করে।তবে টিকিট না থাকলে তখন দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট দিতে সহযোগিতা করে থাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিকিটের আশায় কমলাপুরে রাত পার করছেন প্রত্যাশীরা। কেউ তার কাঙ্খিত টিকিট পেলে হাফ ছেড়ে বাঁচেন। মহা আনন্দে স্টেশন ত্যাগ করেন,রংপুরের লাইলী বেগম,তিনি বলেন,ভাই সাহরির সময় কমলাপুর স্টেশনে এসেছি।আল্লাহর রহমতে ছেলে মেয়ে নিয়ে দেশে যেতে পারবো কি না নিশ্চতায় আছি।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের কড়া হুঁশিয়ারির পরও অব্যবস্থাপনার চিত্র বদলায়নি,বরং উল্টো ঈদের টিকিট কালোবাজারির হাতে উঠেছে বেশি। স্টেশন ঘুরে কথা হয় কয়েজন যাত্রীদের সঙ্গে। বেশ কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেছেন,কাউন্টারে টিকিট পাওয়া না গেলেও দালালদের কাছে বেশি দামে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। সুরাইয়া নাজনীন নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী যাবেন দিনাজপুরে। তিনি জানান, কাউন্টারে গিয়ে টিকিট পাননি। তবে একজন দালাল ঢাকা- থেকে দিনাজপুরের টিকিট দিয়েছে। দামের চেয়ে ছয়শত টাকা বেশি নিয়েছে। এভাবে একজনের কাছে ছয়শত টাকা নেয়া হলে দিনে কত মানুষের কাছে বাণিজ্য করা হচ্ছে।এর দায় বর্তমান রেলমন্ত্রীকে নিতে
টিকিট বিক্রিতে কাউন্টারে ধীরগতি যাত্রীদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন,আগে ৫ মিনিটে ২টি টিকিট দেয়া হতো এখন একই সময়ের মধ্যে ৪-৫টি টিকিট দেয়া হচ্ছে যাত্রীদের। এরপরও যদি ধীরগতির কথা বলা হয়ে থাকে সেটি কোনো ভাবেই বিশ্বাস করা যাবে না।
অনেকে খুশি, অনেকে রাগ করছেন। তারপরও চেষ্টা করছি সবাইকে খুশি রাখার। দ্রুত টিকিট ছাড়তে বুকিং সহকারীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া আছে। লাইনে দাঁড়ানো বেশিরভাগ টিকিট প্রত্যাশীরা এসির টিকিট পাচ্ছেন না এ ব্যাপারে ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, গাড়িতে সীমিত সংখ্যক এসি সিটের ব্যবস্থা থাকে। আর এসির টিকিটের চাহিদা বেশি থাকায় দ্রুতই টিকিট শেষ হয়ে যায়।এই কারণে সবাইকে এসির টিকিট দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
প্রসঙ্গত, এ বছর অঞ্চলভেদে কমলাপুর স্টেশনসহ পাঁচটি স্থান থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট দেয়া হচ্ছে। ঢাকার কমলাপুর থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী আন্তঃনগর, তেজগাঁও থেকে ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী, বনানী থেকে নেত্রকোণাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেসের ও ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট দেয়া হচ্ছে।
রেল মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, ২৪ মে ২ জুনের, ২৫ মে ৩ জুনের এবং ২৬ মে ৪ জুনের আগাম টিকিট বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া আগামী ২৯ মে ৭ জুনের, ৩০ মে ৮ জুনের, ৩১ মে ৯ জুনের, ১ জুন ১০ জুনের ও ২ জুন ১১ জুনের ফিরতি টিকিট বিক্রি হবে।
টিএইচ/বিএস