পদ্মা সেতুতে ‘কাটা মাথা’র গুজব ফেসবুকে

গুজব প্রচারকারীদের ধরতে সক্রিয় গোয়েন্দারা

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০১৯, ০৯:৫৮ এএম গুজব প্রচারকারীদের ধরতে সক্রিয় গোয়েন্দারা
পদ্মা সেতুর ব্যাপারে গুজব ছড়ানোকারী আব্দুল সহিদ হাওলাদার -ছবি : জাগরণ

পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ পরিচালনায় মানুষের কাটা মাথা লাগবে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যারা গুজব ছড়িয়েছেন তাদের ধরতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ১৭ জনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মোবাইল ফোনের কল, ফেসবুকে পোস্ট ও ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে মাথা কাটার এবং ছেলে ধরার গুজব ছড়ানো আব্দুল সহিদ হাওলাদারকে (২৪) আটক করে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত একটি স্মার্ট ফোন জব্দ করা হয়।

আটক আব্দুল সহিদ হাওলাদার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর মাদ্রাজ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আলী হাওলাদারের ছেলে।

বুধবার (১০ জুলাই) বিকাল ৩ টার দিকে তাকে চরফ্যাশন উপজেলার চর মাদ্রাজ থেকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
 
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, যারা এই পোস্টটি উৎপত্তি ও ছড়িয়ে এটি নিয়ে ইস্যু তৈরি করেছে তাদের শনাক্ত করতে পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ করছে। গত সোমবার রাত থেকেই গুজব রটনাকারীদের শনাক্তে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি টিম। এরইমধ্যে ভোলার চরফ্যাশন থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্য মতে, এ ঘটনায় আরও ২ জন জড়িত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ২ জনকে গ্রেফতার করতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক এলাকায় গোয়েন্দারা অভিযান চালাচ্ছে।

সিটিটিসি সূত্র জানিয়েছে, ফেসবুকে পোস্ট শেয়ার করে ভাইরাল করেছেন এমন ১২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে তাদের সন্ধান চেয়ে পোস্ট দেয়া হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ইউনিট এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি। তাদের প্রোফাইল, টাইমলাইন, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং অন্যান্য তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পোস্ট শেয়ারকারীদের মধ্যে কয়েকজন তরুণীও রয়েছেন। এরইমধ্যে কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেলেও তাদের নিয়ে ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এছাড়াও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ইউনিট টিমও অপরাধীদের শনাক্তে কাজ করছেন। এ বিষয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ১৫টি ফেসবুক গ্রুপ শনাক্ত করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ১০ লাখের বেশি মেম্বার রয়েছে। সেসব গ্রুপে যারা গুজবের পোস্টটি শেয়ার করেছেন তাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। এছাড়া অনেকে কাটা মাথার ছবি শেয়ার করেছেন, সেগুলোর সোর্স জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এরমধ্যে মিয়ানমারের রাখাইনের নানা ছবি শেয়ার করার প্রমাণ পেয়েছেন তারা। এছাড়া পদ্মা নদী ও সেতুর নির্মাণকাজের ছবিকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে ফটোশপের মাধ্যমে মানুষের কাটা মাথার ছবি টেবিলের ওপর বসানোর প্রমাণও পাওয়া গেছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এমরানুল হাসান বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো গুজব রটনাকারীদের শনাক্ত ও আটক করা হচ্ছে। র‌্যাব এ বিষয়টি মনিটরিং করছে। যারা এসব রটিয়েছেন, তাদের কয়েকজনকে আটক এবং নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

এদিকে গুজবের বিষয়ে গত মঙ্গলবার তথ্য অধিদপ্তরে দেয়া একটি চিঠিতে পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লিখেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ পরিচালনায় মানুষের মাথা লাগবে বলে একটি কুচক্রীমহল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা প্রকল্প কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এটি একটি গুজব। এর কোনো সত্যতা নেই। এমন অপপ্রচার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

চরফ্যাশন উপজেলার চর মাদ্রাজ থেকে আটক সহিদের বিষয়ে চরফ্যাশন থানা পুলিশের ওসি সামছুল আরেফিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল সহিদ হাওলাদার ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামের মানুষকে ফোন করে ও ফেসবুকে পোস্ট এবং ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে শিশুদের মাথা কেটে নেয়া হচ্ছে ও ছেলে ধরারা বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। গত ২/৩ দিন ধরে তাকে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছিল, কিন্তু সে একের পর এক স্থান পরিবর্তন করায় তাকে ধরা যায়নি। তিনি আরও জানান, আমরা অভিযান চালিয়ে গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত স্মার্ট ফোনসহ তাকে আটক করি।

ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে দোষ স্বীকার করেছে এবং এ কাজে তার সঙ্গে আরও দু’জন রয়েছে বলে জানায়। আপাতত তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না। ওই দু’জনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, পদ্মা সেতু দেশের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পের সঙ্গে বাংলাদেশের ইমেজ জড়িত। একটি মহল এই উন্নয়ন ব্যাহত করার জন্য এ ধরনের গুজব রটিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, যা একটি গুরুতর অপরাধ। অনেকে না বুঝেই এটি শেয়ার করে অপরাধের অংশীদার হয়েছেন। তাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। শনাক্তের পর ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে জড়িতের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। মূল সেতুর ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ২৯২টি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ৪২টি পিয়ারের মধ্যে এরইমধ্যে ৩০টি পিয়ারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে, যা এখন দৃশ্যমান। ৩০ জুন পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৮১ শতাংশ, নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৫৯ শতাংশ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭১ শতাংশ।

বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি তৈরির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ নামক একটি কোম্পানি। কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। প্রাথমিকভাবে এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।

জেডএইচ/একেএস

আরও সংবাদ