রুম্পা হত্যার বিচারের দাবি

আজও রাস্তায় নামার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০১৯, ০৯:০৬ এএম আজও রাস্তায় নামার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের
রুবাইয়াত শারমীন রুম্পা -ফাইল ছবি

স্ট্যাম্পফোর্ডের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমীন রুম্পার হত্যার বিচারের দাবিতে আবারো শনিবার (৭ ডিসেম্বর) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ বিক্ষোভ মিছিল রাজধানীর সিদ্ধেশরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসের ফটক থেকে শুরু হয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সামনে যাবে।  রুম্পা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের গ্রেফতারের পাশাপাশি দাবি না মানা পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করার কথা জানায় শিক্ষার্থীরা। 

রুম্পার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে এরইমধ্যে ঘটনাস্থলের আশপাশের ৩ ভবনের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে রমনা থানা পুলিশ। পাশাপাশি রুম্পার প্রেমিক সৈকতকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। শর্ত সাপেক্ষে মুচলেকা নিয়ে ছাড়লেও তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া রুম্পার সমপাঠী এবং বন্ধুদের সঙ্গে এ বিষয়ে পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। 

শুক্রবার ছুটির দিনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রুম্পার একজন বন্ধু ও একজন সহপাঠীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা। অপরদিকে রুম্পার মৃত্যু হত্যা, না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হতে ঘটনাস্থলের পাশের ৩টি বহুতল ভবনের বাসিন্দা ও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। পাশাপাশি পুলিশ গোয়েন্দারা সংশ্লিস্ট ৩টি বাড়ির প্রত্যেক ফ্ল্যাটের সকল কক্ষ এবং বেলকনি ও ছাদ পরিদর্শন করেছেন।

অপরদিকে নিহত রুম্পার মামলার তদন্ত তদারকি সংশ্লিষ্ট রমনা জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তা দৈনিক জাগরণকে বলেন, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে স্থান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সেখানকার ৩টি ভবনের যে কোনো একটির ছাদ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। 

তিনি বলেন, রুম্পা কেন ওই স্থানে গেলেন, কীভাবে ভবনের ছাদে পৌঁছালেন, তাকে হত্যার পর নিচে ফেলে দেয়া হয়েছে নাকি নিজেই ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছেন? এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। আশা করি, শিগগিরই রহস্য উন্মোচন হবে।

এদিকে ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, রুম্পার মরদেহ দেখে মনে হয়েছে যে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমরা এখনও নিশ্চিত নই। আমাদের হাতে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখনও আসেনি। রিপোর্ট এলে নিশ্চিত করে বলা যাবে। তবে আমরা ধর্ষণের বিষয়টি মাথায় রেখে মরদেহ থেকে আলামত সংগ্রহ করেছি।

রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের বিষয়ে ঘটনার মোটিভসহ অন্যান্য বিষয় তদন্তের সফলতা আসবে এমন কিছু হাতে পাওয়া যায়নি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ গুলো না পাওয়া পর্যন্ত কিছু একটা বের না করা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

স্থানীয় অনেকের অভিমত, একই ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সৈকতের সঙ্গে রুম্পার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় রুম্পাকে এড়িয়ে চলছিলেন সৈকত। হয়তো ছেলেটির প্রতারণার বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে রুম্পা আত্মহত্যা করেছেন।

এদিকে নিহত শিক্ষার্থী রুম্পার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বিজয়নগরে চলছে শোকের মাতম। তার বাবা মা আহাজারি করছিল। রুম্পার বাবা পুলিশ অফিসার রুককুন উদ্দিন ও মা নাহিদা আক্তার পারুল তাদের মেয়ে রুম্পার মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। 

স্বজনরা জানায়, রুম্পার বাবা মো. রুককুন উদ্দিন হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। মা নাহিদা আক্তার পারুল গৃহিণী। এক ভাই ও এক বোনের রুম্পা সবার বড়। রুম্পা স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর ছোট ভাই আশরাফুল আলম রাজধানীর ঢাকার ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত। রুম্পা রাজধানীর মালিবাগ শান্তিবাগ এলাকার ২৫৫ নম্বর ফ্ল্যাটে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন।

রুম্পা বাসার পাশেই চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতেন। প্রতিদিনের মতো বুধবার প্রাইভেট শেষ করে বাসার নিচে এসে মাকে ফোন করে চাচাতো ভাইকে দিয়ে এক জোড়া স্যান্ডেল পাঠাতে বলেন তিনি। এরপর চাচাতো ভাইয়ের কাছে মোবাইল, হাতঘড়ি, ব্যাগ ও আংটি দিয়ে একটু পরে ফিরবেন বলে চলে যান। এরপর আর তার খোঁজ পায়নি পরিবার। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি। গত বৃহস্পতিবার রুম্পার মাসহ স্বজনরা রমনা থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে থেকে অজ্ঞাত হিসেবে রুম্পার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ বাদী হয়ে রমনা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। একই দিন দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। সন্ধ্যায় রমনা থানায় তুলে রাখা লাশের ছবি দেখে রুম্পাকে শনাক্ত করে তার পরিবার। গতকাল শুক্রবার ভোরে লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এরপরই ময়মনসিংহের বিজয়নগর গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে রুম্পার লাশ দাফন করা হয়। 

এইচএম/একেএস

আরও সংবাদ