আজ চৈত্রসংক্রান্তি

জাগরণ প্রতিবেদক প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২১, ০৯:৪৫ এএম আজ চৈত্রসংক্রান্তি

আজ বাংলা বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ৩০ চৈত্র মঙ্গলবার। বিদায় নিচ্ছে বাংলাবর্ষ ১৪২৭। শুরু হবে নতুন বছরের বৈশাখ।

চৈত্র মাসের এই দিনটিকে বলা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। বাংলার নানা ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে এই দিনটি। বাংলার বিশেষ লোকজ উৎসব এই চৈত্রসংক্রান্তি। পুরনোকে বিদায় ও নতুন বর্ষকে বরণ করতে প্রতিবছর হয় নানা উৎসব আয়োজন। এই দিনটিতে স্মৃতির ঘরে ঠাঁই নেবে বিদায়ী বছরের আনন্দ-বেদনা, পাওয়া- না পাওয়া, হাসি-কান্নার নানা ঘটনা।

সনাতন ধর্মের অনুসারীরা এই চৈত্রসংক্রান্তিকে পুণ্যের দিন হিসেবে গ্রহণ করেন। তাদের শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে এই দিনের স্নান, দান, ব্রত, উপবাস করা পুণ্যের কাজ বলে মনে করেন।

শুধু তা-ই নয়, সারা দেশেও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পালন করে এই দিনটি। গ্রামবাংলায় হয়ে উঠে উৎসবমুখর। মেলা, ঘুড়ি উৎসব, রকমারি সব ঘুড়ির প্রদর্শনী, গ্রামবাংলার জনপ্রিয় লাঠিখেলা, পুঁথিপাঠ, পুতুলনাট্য, পালাগান, গম্ভীরা ও রায়বেশের মতো লোকসংস্কৃতির কতই না আয়োজন থাকে এই দিনে।

চৈত্রসংক্রান্তির দিনে সবচেয়ে বড় আয়োজন চড়ক পূজা। পুরো মাসজুড়ে সন্ন্যাসীরা উপবাস, ভিক্ষান্নভোজন প্রভৃতি নিয়ম পালন করেন। সংক্রান্তির দিন তারা শূলফোঁড়া, বাণফোঁড়া ও বড়শিগাঁথা অবস্থায় চড়কগাছে ঝোলেন। এমনকি আগুনের ওপর দিয়েও হাঁটেন।

সব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এসে ভিড় করেন চড়কমেলা-গাজনের মেলায়। শিবের গাজন, ধর্মের গাজন, নীলের গাজন, এমন বিভিন্ন হিন্দু পৌরাণিক ও লৌকিক দেবতার নামেই রাখা হয়েছে এই মেলার নাম।

চৈত্রসংক্রান্তির গোধূলিলগ্নে বেসমা পূজা করা হয়। পূজার পর্বে ঘরের দরজায় বাগাচূড়া (চ্যাপ্টা পাতা ও কাঁটা যুক্ত বনজ লতা), বিষ ঢেঁকিয়া (ফার্ন), বিষ কুণ্ডলী (বিষকাঁটালী), রসুন, পেঁয়াজ একসঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো অশুভ শক্তি নাশের প্রতীক বলে বিশ্বাস করে এ অঞ্চলের লোকেরা।

তবে এ বছর চৈত্রসংক্রান্তির এমন  চিত্র দেখা ভার। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া অনেকটা নীরবেই কেটে যাবে বাঙালির এবারের উৎসব।ঋতুচক্রের পালাবদলে ১৪ এপ্রিল বুধবার নতুন আশা নিয়ে শুরু হচ্ছে ১৪২৮ বঙ্গাব্দ। কোনো আয়োজন ছাড়াই কেটে যাবে এই উৎসব। করোনায় সব ম্লান হয়ে গেছে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (অনুষ্ঠান) অসীন কুমার দে জানান, কোভিড-১৯-এর কারণে নানা আয়োজন ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এবার নির্ধারিত বাংলা বর্ষ বরণের অনুষ্ঠানমালা হচ্ছে না।

এছাড়া সারা দেশে ১৪ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ফলে চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। তবে বাঙালিরা নিজের ঘরেই নানা আয়োজনে উৎসব করবে এই উৎসব। নতুন বছরকেও বরণ করবে নিজেদের আঙ্গিকে।

এদিকে নববর্ষ বরণে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতীকী কর্মসূচির আয়োজন করছে। চারুকলা অনুষদের শিল্পীদের তৈরি মঙ্গল শোভাযাত্রার বিভিন্ন মুখোশ ও প্রতীক প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।