দশ বছর ধরে ওয়াসার এমডি পদ তাকসিম এ খানের দখলে!

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০১৯, ০৪:১৭ পিএম দশ বছর ধরে ওয়াসার এমডি পদ তাকসিম এ খানের দখলে!
ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান; ফাইল ফটো


ওয়াসার লাইনের পানিকে শতভাগ সুপেয় দাবি করে রাজধানীবাসীর কাছে আলোচিত-সমালোচিত প্রকৌশলী তাকসিম এ খান ওয়াসার এমডির পদেই আছেন প্রায় দশ বছর।

২০০৯ সালের ১০ অক্টোবর এই প্রতিষ্ঠানের এমডির পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে আর এই পদ ছাড়েননি তিনি। ভাগ্যবান এই প্রকৌশলী পর পর পাঁচবার এমডি’র পদে নবায়ন করেন তার নিয়োগ। সর্বশেষ ৩ বছরের জন্য নিয়োগ লাভ করেন গত বছর।

সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে ‘ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ করতে বছরে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস পুড়ছে নগরবাসী’ বলে উল্লেখ করা হয়।

টিআইবি’র এই প্রতিবেদনের প্রতিবাদে গত শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ওয়াসার পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমডি তাকসিম এ খান দাবি করেন- ‘ওয়াসার লাইনের পানি শতভাগ সুপেয়।’

তবে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অকপটে তিনি স্বীকার করেন, ‘লাইনের পানি নয়, তিনি ওয়াসার ‘শান্তি’ জারের পানি পান করেন।’

এই সংবাদ সম্মেলনের পরই রাজধানীতে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ, যারা দীর্ঘদিন ধরে ওয়াসার লাইনের পানি নিয়ে নানা সমস্যায় ভুগছেন, তাদের মঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দেশের সব গণমাধ্যমগুলোও ওয়াসার লাইনের পানি নিয়ে বিশেষ সংবাদ প্রকাশ শুরু করে। এসব প্রতিবেদনে উঠে আসছে ওয়াসার লাইনের ময়লাযুক্ত ও ব্যবহার অনুপযোগী পানির সাত কাহন।

ক্ষুব্ধ মানুষরা মঙ্গলবার নারিন্দা ও রামপুরাসহ কয়েকটি এলাকা থেকে ওয়াসার লাইনের পানি দিয়ে ওয়াসার এই এমডিকে শরবত খাওয়াতে এসেছিলেন কারওয়ান বাজারেরর ওয়াসা ভবনে। বিষয়টি আগেই জানতে পেরে এই দিন তিনি তার দপ্তরেই আসেননি।

ওয়াসার নিয়োগ সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বোর্ডসভায়ই মূলত এমডি নিয়োগের সব বিষয় চূড়ান্ত করা হয়। এই ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, নানা যোগ্যতা, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর মেধা তালিকা করে চূড়ান্ত নিয়োগের একটি সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় সেটি অনুমোদন করে। বর্তমান এমডির ক্ষেত্রে তা হয়নি। সর্বশেষ নিয়োগের কথা উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘উল্টো মন্ত্রণালয় যদি এমডির নাম লিখে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ দেয়ার চিঠি দেয়, সেখানে বোর্ডের কী করণীয় কিছু থাকে?’

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তাকসিম এ খানকে নতুন করে নিয়োগ দিতে গত বছরের ৩১ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের (পাস-২ শাখা) তৎকালীন উপসচিব ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ঢাকা ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়েছিলো।

ওয়াসার সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ১০ অক্টোবর এই প্রতিষ্ঠানের এমডির পদে প্রথম নিয়োগ লাভ করেন প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর আর এই পদ তাকে ছাড়তে হয়নি। পর পর পাঁচবার তিনি এমডি’র পদে নবায়ন করেন তার নিয়োগ। সর্বশেষ ৩ বছরের জন্য নিয়োগ লাভ করেন গত বছর। চলতি বছরের ১১ অক্টোবর তার ১০ বছর বা এক দশক পূর্ণ হবে। তাকসিম এ খান গতকাল বুধবার এসব বিষয়ে দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘আমার নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম ছিলো বলে আমার জানা নেই। সরকারি নিয়ম মেনেই আমাকে ওয়াসার মত জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং নিয়োগ নবায়নও হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমি এই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছি, অনিয়ম বন্ধ করেছি, এতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারাই আমার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।’ আবারও ওয়াসার লাইনের পানিকে শতভাগ সুপেয় পানি দাবি করেন প্রকৌশলী তাকসিম।

আরআই