দগ্ধ ভস্ম ভেদ করে জেগে ওঠা এক ফিনিক্স পাখি

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২০, ০৬:৪৩ পিএম দগ্ধ ভস্ম ভেদ করে জেগে ওঠা এক ফিনিক্স পাখি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - গ্রাফিক্স ডেস্ক।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কথিত সংস্কার আর স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার নামে সবচেয়ে বিধ্বংসী ষড়যন্ত্রের নীলনক্সার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল আজ থেকে ঠিক ১৫ বছর আগে, ২০০৭ সালের এই দিনে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে 'মাইনাস টু পলিসি'র নামে- দুর্নীতিবাজ আর আর রাষ্ট্রদ্রোহিদের পৃষ্ঠপোষকের সঙ্গে এক কাতারে নামিয়ে আনা হয়েছিল দেশের গণতান্ত্রিক স্থিতি ও মানুষের অধিকার আদায়ে রাজপথের সবচেয়ে লটাকু ও আদর্শ যোদ্ধাকে। নরকদগদ্ধ ভস্মে চাপা দেয়ার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল- তৎকালে রাষ্ট্রের অর্জিত সার্বৌভমত্ব ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার বৈপ্লবিক সংগ্রামের নেতৃত্বকে।

১৬ জুলাই ২০০৭ সাল, ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকার বিরাজনীতিকরণকে পোক্ত করতে মাইনাস ফর্মূলার অংশ হিসেবে মিথ্যা মামলা করে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে। এর মূল লক্ষ ছিলো বিরাজনীতিকরণ এবং অগণতান্ত্রিক শক্তি যেন দীর্ঘদিন দেশ শাষণ করতে পারে তারই নীরব আয়োজন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা রাজপথে থাকাবস্থায় তা সম্ভব ছিলো না। ওয়ান ইলেভেন সরকার আসার পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি দ্রুত নির্বাচন চান এবং জনগনের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর চান। আর এ কারণে দলের ভিতরে এবং বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল।

সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ঘরের বাইরে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু এই গ্রেপ্তার শেখ হাসিনার জন্য শেষ বিচারে একটা আশীর্বাদ হয়েছে। এই গ্রেপ্তারের পর শেখ হাসিনা রাজনীতিতে নানামুখীভাবে লাভবান হয়েছেন। এক কথায় প্রবল প্রতিরোধের বিরুদ্ধে বাংলার আপামর জনতার গণতান্ত্রিক মুক্তি অর্জনের তীব্র প্রতিজ্ঞা আর হার না মানা সাহস বুকে নিয়ে যে বিপ্লবী সংগ্রাম শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সে সময় করেছিলো, সেটা তাকে একজন বিশ্বমানের রাজনীতিক, দুঃসাহসী দেশপ্রেমিক, বিচক্ষণ এবং দূরদর্শী একজন নেতা হিসেবে অতুলনীয় উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করে। আর স্বাভাবিকভাবেই এমন শক্তিমান একজন রাষ্ট্র নেতা, একজন সরোকার প্রধান হিসেবে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে গোটা জাতির অর্জন আর সাফল্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তোলে। 

পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, তারপর জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে তিনি গণতন্ত্রের জন্য নির্বিক সৈনিক। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পরে শেখ হাসিনা যখন দেশে আসেন তখন থেকেই তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রাম করছিলেন। গণতন্ত্রের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। ২০০৭ সালে এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক হয়ে উঠেন। দেশের মানুষ বুঝতে পারে, গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্যই তাঁকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই গ্রেপ্তারের পরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক আলোচনার পাদপ্রদীপে আসেন। গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্য একটি অনির্বাচিত সরকার যখন তাঁকে গ্রেপ্তার করে তখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, শেখ হাসিনা জনগনের অধিকারের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। গণতন্ত্রের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কারাভোগ করতে হচ্ছে। এর আগেও তাঁকে জোড়পূর্বক বিদেশে পাঠানো হয়েছে, দেশে প্রবেশ করতে না দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছিল যে শেখ হাসিনা গণতন্ত্র সমর্থক। অগণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান বাধা হলো শেখ হাসিনা। যার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে তিনি গণতন্ত্রের সৈনিক এবং জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠার নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

পাশাপাশি দলীয় পর্যায়েও প্রাপ্তি অনেক। এরফলে দলে তাঁর অবস্থান সংহত হয়। দলে তিনি একচ্ছত্র নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ওয়ান ইলেভেনে মাইনাস ফর্মূলা যে শুধুমাত্র তত্বাবধায়ক সরকার করেছিল তা নয়। এর পেছনে ছিলো দেশের সুশীল (!) সমাজ নামক কিছু স্বার্থান্বেষীও। ঠিক কিছুদিন আগেও এমনই একটি সুশীল সংঘের নীতি ভঙ্গের উদাহরণ দেখেছি।

আওয়ামী লীগের একটা অংশও, যারা দলের হেভিওয়েট নেতা হিসেবে পরিচিত, তারাও এই মাইনাস ফর্মূলাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। তখন আওয়ামী লীগের চার নেতা পৃথক পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে মাইনাস ফর্মূলার পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন, আওয়ামী লীগে গণতন্ত্র এবং সভাপতি পদে পরিবর্তনের পক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃণমূলের আপামর কর্মীরা এই চার নেতার সংস্কার প্রস্তাবকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলো এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এটি ছিলো আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট।

সেই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের একক অবিসংবেদিত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার যে কোনো বিকল্প নেই এবং শেখ হাসিনা ছাড়া যে আওয়ামী লীগ কী সেটা এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছিল। তৃণমূলের আবেগ ভালোবাসা এবং সংস্কারপন্থীদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ, ঘৃণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর এর মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের নবযাত্রা হয়েছিল।

এখন শেখ হাসিনা যে সারাদেশে একক জনপ্রিয় নেতা এবং তাঁর যেমন কোনো বিকল্প নেই, তেমনি তাঁকে চ্যালেঞ্জ বা তাঁর কর্তৃত্বকে বাধাগ্রস্থ করার মতো আওয়ামী লীগে মধ্যেও কেউ আছে বলে মনে করেন না বিঘ্য রাজনৈতিক ভাষ্যকারেরা। এটা সম্ভব হয়েছে ওয়ান ইলেভেনে এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে। এই গ্রেপ্তার শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে পূর্ণতা দিয়েছে। তাঁকে করেছে অবিসংবেদিত নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক।