‘রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাস বিকৃতি হয়ে আসছে’

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২০, ২০১৯, ০৩:৩৭ পিএম ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাস বিকৃতি হয়ে আসছে’
আলোচনায় সভায় নূহ আলম লেলিনসহ বক্তারা

আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ আলম লেলিন বলেছেন, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সব সময় ইতিহাস বিকৃতি হয়ে আসছে। যখন যার প্রয়োজন তখন নিজেদের প্রযোজনেই এদেশে ইতিহাসের বিচ্যুতি ঘটানো হয়েছে। তিনি বলেন, ইতিহাস বিকৃতি শুধু যে বিএনপির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর অবস্থানে জিয়াউর রহমানকে প্রতিস্থাপন করতে করা হয়েছে তা নয়, বিকৃতি করা হয়েছে বামদের পক্ষ থেকেও। আবার করা হয় শো-কল্ড সুশীলদের পক্ষ থেকেও। এ বিকৃতিতে থেকে কেউ পিছিয়ে নেই।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম বোয়াফের আয়োজনে ‘ইতিহাস বিকৃতি ও আমাদের দায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সাবেক বাম নেতা বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা নূহ আলম লেলিন তার বলেন, এদেশে সব সময় আক্রমন এসেছে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে। এটা বাইরে থেকে যেমন এসেছে তেমনি দুঃখজনক হলেও সত্যি এ আক্রমন এসেছে খোদ আওয়ামী লীগ থেকেও।
 
তিনি বলেন, আমাদের দেশে ইতিহাস বিকৃতির যে প্রবণতা তা কিন্তু বাইরে থেকে আসে। বাইরের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এখানে ইতিহাস বিকৃতি চলে। এটা পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই থেকেও যেমন আসে তেমনি আমাদের বন্ধু যারা তাদের কাছ থেকেও এসে থাকে। 

লেলিন বলেন, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের রাজনীতিতে বিভক্তি আনতে পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগকে ভেঙ্গে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করা হয়েছিল। মওলানা ভাসানী, সীমান্ত গান্ধি আবদুল গাফফার খানসহ অনেক শীর্ষ নেতা আইএসআই‘র ফাঁদে পা দিয়ে ন্যাপ গঠন করেছিলেন। হতে পারে তারা হয়ত জানতে বা বুঝতেও পারেননি যে তারা তাদের ফাঁদে পা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, তেমনি স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু, ইন্দিরা গান্ধি, আওয়ামী লীগকে বিব্রত করতে জাসদ সৃষ্টি করা হয়। জাসদ সৃষ্টির মূলেও আমাদের বন্ধুদের ভূমিকা ছিল। জাসদ সৃষ্টিতে ভারতের একজন জেনারেলের নাম আমরা জানি। তিনি হচ্ছেন-জেনারেল উবান। তার ইন্ধনে তৎকালীন সময়ে জাসদ সৃষ্টি হতে পেরেছিল।
 
নূহ আলম লেলিন বলেন, ইতিহাস বিকৃতি করে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করা যাবে না। কারণ বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা যিনি বাঙালি জাতি রাষ্ট্রকে সারা বিশ্বে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু নেতাজী সুভাষ বসুকে খুব ভক্তি করতেন। তিনি একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি ছিলেন। শরৎ বসু একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ এমনকি নজরুল ইসলামও শ্রেষ্ঠ বাঙালি ছিলেন। কিন্তু তারা কেউ আলাদাভাবে বাঙালিদের জাতি রাষ্ট্র গঠনের কথা ভাবেননি। রবীন্দ্রনাথের লেখা আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। কিন্তু তিনি ভারত মাতার কথা বলেছেন। নজরুলও ভারতের স্বাধীনতার কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা যিনি বাঙালি জাতিকে সারা পৃথিবীতে একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করেছেন। 

আওয়ামী লীগের সাবেক এই প্রেসিডিয়াম সদস্য তার দীর্ঘ বক্তব্যে আরও বলেন, ‘৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের আগেই বঙ্গবন্ধু  ড.কামাল হোসেন ও তাজউদ্দিন আহমেদকে দিয়ে একটি সংবিধান তৈরি করে রেখেছিলেন। যখন আইয়ুব খানের সঙ্গে তার পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন নিয়ে আলোচনা চলছিল। তখন বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যদি আলোচনা সফল হয়, তাহলে এ সংবিধান দিয়ে কি হবে। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ধুর মিয়ারা, এটা টিকবে না। আর আমি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হব না। আলোচনা সফল হলে তাজউদ্দিন বা অন্য কেউ দায়িত্ব নেবে। আমি পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রী হব।

তিনি বলেন, ওই সংবিধান তৈরির কথা কামাল হোসেন ও তাজউদ্দিন ছাড়া অন্য কেউ জানতেন না। কিন্তু কেমন করে যেন নানা কৌশলে খন্দকার মোস্তাক এ সংবিধানের কথা জেনে যান। পরে তিনিই তা মিডিয়ার কাছে ডিসক্লোজ করেন। প্রকাশ করে দেন। তিনি বলেন, অনেক আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার কথা ভেবেছিলেন। ৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর কলকাতায় রিপন কলেজে সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সৈয়দ নুরুদ্দিন, তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিলেটের সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, শহিদুল্লাহ কায়সারসহ বিভিন্ন ছাত্রনেতাদের নিয়ে মিটিং করেন। সেখানে তিনি বলেন, মিয়ারা দেশতো স্বাধীন হল, কিন্তু ওই ‘মাউরা’দের সঙ্গে কিন্তু বেশিদিন থাকা যাবো না। ‘৭৪সালে বাংলা একাডেমিতে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার একপাশে ছিলেন কবি জসিমউদ্দিন অন্য পাশে ছিলেন অন্নদা শংকর রায়। সেদিন অন্নদা শংকর সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কবে থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা ভেবেছিলেন। বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, যেদিন থেকে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল, সেদিন থেকে। তাই ইতিহাস বিকৃতি করে বঙ্গবন্ধুর স্থানে কাউকে প্রতিস্থাপন করে বঙ্গবন্ধুকে ছোট করা যাবে না। 

বোয়াফের এ আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন-  সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ওয়ার্ল্ড ইউনির্ভাসিটির ভিসি ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, ইতিহাসের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান প্রমুখ।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বোয়াফের সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়। সঞ্চালনা করেন তুলি হোসেন।

টিএস/বিএস