ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতি

রোহিঙ্গা দেশে ফিরে না যাওয়ার সমগ্র ঘটনা অশনিসংকেত

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০১৯, ০৯:০১ পিএম রোহিঙ্গা দেশে ফিরে না যাওয়ার সমগ্র ঘটনা অশনিসংকেত
রোহিঙ্গা সমাবেশ-ফাইল ছবি

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো দ্বিতীয়বারের মত রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন ব্যর্থ হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং প্রত্যাবসনকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা শিবিরে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গার পরিকল্পিত ও সংগঠিত সমাবেশও তাদের দেয়া পাঁচ দফা পূরণ না হলে দেশে ফিরে না যাওয়ার সমগ্র ঘটনাকে অশনি সংকেত বলে অভিহিত করেছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) পার্টির পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই সমাবেশের মূল ব্যক্তি বাংলাদেশের পাসপোর্টে মার্কিন দূতাবাসের উদ্যোগে প্রিয়া সাহার মতো একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছে বলে বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ইউএনএইচসিআর-এর সহযোগিতা ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে সম্প্রতি যে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় সে ক্ষেত্রেও দেশি-বিদেশি এনজিওর প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কথাও জানা যায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রী দাবি করেছেন সরকার বিষয়টি জানতেন না। অথচ রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিয়োজিত আছে। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের উক্ত সমাবেশের পূর্বানুমতি ছিল বলে জানা যায়। জনমনে আশঙ্কা ও বিভ্রান্তি দূর করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ব্যাখ্যা দিতে হবে। রোহিঙ্গা শিবিরে দেশি-বিদেশি অস্ত্রের বিস্তার ও সন্ত্রাসী তৎপরতায়ও স্থানীয়রা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। শিবিরে খুনাখুনির ঘটনা ঘটছে, বিস্তার ঘটছে মাদকের। সম্প্রতি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা স্থানীয় যুবলীগ নেতাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। এর বাইরে পাহাড় ও বনাঞ্চল ধ্বংস করা জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, শ্রমের বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করায়’ স্থানীয় জনগণ চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এর ফলে সংঘাত-সংঘর্ষের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান বিশ্বে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন তাও বিশ্ব-কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে। কিন্ত আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির কারণে জাতিসংঘও নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনও উদ্যোগ নিতে পারেনি। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা মানবিক সাহায্যেই মূলতঃ সীমিত থেকেছে, তাও পর্যাপ্ত নয়। পক্ষান্তরে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে  ‘রোহিঙ্গা’ স্থান প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ কমিটিতে। একই সময় এই সমস্ত অঞ্চলজুড়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীসমূহও বিশেষভাবে তৎপর রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এর ফলে সমস্ত অঞ্চল জুড়েই অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে।’’ 

ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘পার্টি রোহিঙ্গা সমস্যার অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা এই সমস্যা এই অঞ্চলে নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে পূর্বেই সতর্ক করেছিল। এখন যখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তারপর আর বসে থাকা চলে না। এটা এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, পরিবেশ ও জনজীবনের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই জরুরি হয়ে পড়েছে।’’

ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন, ভারত, জাপানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো কেবল আশ্বাস দিয়ে চলেছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতিসহ তাদের মৌল দাবিসমূহ মেনে নিয়ে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে কিছু হচ্ছে না।’’

ওয়ার্কার্স পার্টি আশা করে রোহিঙ্গা সমস্যা শান্তি-স্থিতিশীলতাও নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে ওঠার আগেই আন্তর্জাতিক বিশ্ব মিয়ানমারকে এ বিষয়ে বাধ্য করতে দৃশ্যমানও কার্যকর উদ্যোগ নেবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতিতে আসন্ন সংসদ অধিবেশনে এ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেবল বিবৃতিদান নয়, একটি দিন নির্দিষ্ট করে আলোচনাও বিতর্কের দাবি জানান হয়।

টিএইচ/এসএমএম

আরও সংবাদ