প্রস্তাবিত বাজেট অগ্রহণযোগ্য ও কাল্পনিক : ফখরুল

জাগরণ প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২১, ০১:৪৮ পিএম প্রস্তাবিত বাজেট অগ্রহণযোগ্য ও কাল্পনিক : ফখরুল

বাজেটে সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (৪ জুন) সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাজেটের ওপর দলের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।

“বিএনপি মনে করে এই বাজেটে মহামারিকালে মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “এই সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই। সেজন্য সাধারণ মানুষ যারা সংখ্যায় বেশি, দিন আনে দিন খায় তাদেরকে খুশি করার কোনো দরকার নেই।”

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “এজন্যে যাদের খুশি করলে তাদের দুর্নীতিটা বহাল থাকবে, দুর্নীতি করতে পারবে ঠিক মতো সেটাই তারা করেছে। তাদের চারিত্রিক যে বৈশিষ্ট সেই বৈশিষ্ট অনুযায়ী বাজেট হয়েছে। সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের অর্থনীতি চাই যা এই বাজেটে অনুপস্থিত।”

বৈষ্যমহীন, জনবান্ধব, কল্যাণমুখী ও জবাবদিহিমূলক একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই দেশে ‘জনআকাঙ্ক্ষার’ বাজেট প্রনয়ন সম্ভব বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, “জনগণকে করোনা মহামারির সংকট থেকে রক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটে দিকনির্দেশনা নেই। অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটের শিরোনাম করেছেন, জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে। বাজেট নাকি দেওয়া হয়েছে ‘মানুষের’ জন্য। শুনতে ভালো শোনায়। কিন্তু বাজেটে দিন আনে দিন খায় এমন জীবন-জীবিকা রক্ষার নগদ অর্থের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। এখানে পুরাতন ক্রটিপূর্ণ ব্যাংক নির্ভর ঋণের কথাই বলা হয়েছে।”

“এই বাজেটে হৃত দরিদ্র ও শ্রমিকদের প্রত্যাশিত প্রণোদনা উপেক্ষিত হয়েছে। অনেক দেশে প্রণোদনার বরাদ্দ ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু সেখানে সরকারের বরাদ্দ দুই শতাংশের নিচে। এটা লোক দেখানো প্রণোদনা। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সম্প্রসারণের নামে যে সামান্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। মধ্যবিত্তদের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি যা মধ্যবিত্তকে হতাশ করেছে।”

প্রস্তাবিত বাজেটে বেকার ও শহর থেকে গ্রামে চলে যাওয়া মানুষজন ও প্রবাসীদের সহায়তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দের ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

স্বাস্থ্য খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “স্বাস্থ্য খাত নিয়ে এতো কথা বলা হলেও এই খাতে বরাদ্দ জিডিপির সেই এক শতাংশের মধ্যেই আছে। এটা খুবই দুঃখের কথা। এই বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতে চাহিদা মিটবে না। স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির ৫% বরাদ্দ করতে হবে।”

করোনা টিকা প্রদানের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকার ২৫ লাখ মানুষকে মাসে টিকা দেওয়ার কথা বলেছেন। সেটা কবে থেকে কার্যকর হবে, কিভাবে হবে, সে সম্পর্কে কিছু নিশ্চিত করে বলা হয়নি।”

বাজেটে এসএমই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান এই খাতে। কিন্তু সরকারের প্রণোদনা পেলেন মূলত বড় শিল্প মালিকেরা।”

মুদ্রাস্ফীতির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অনেক আগেই মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। গত এপ্রিলে গড়ে মূল্যস্ফীতি ছিল পাঁচ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এবারের বাজেটে তা ধরা হয়েছে পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ। এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবভিত্তিক নয়।”

বাজেটে মৎস্য চাষ খাতে প্রস্তাবিত কর বাতিল এবং ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয়সীমা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির দাবিও জানান তিনি।

করপোরেট ছাড় প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “করপোরোট কর হার কমানো হয়েছে, ব্যবসায়িক টার্নওভার কর হারও কমেছে। অর্থমন্ত্রী দুই হাত ভরে দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের। উনি নিজেও ব্যবসায়ী। বাজেটে হতাশ মধ্যবিত্তরা, খুশি ব্যবসায়ী মহল।”

“বাজেটে উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানের আমদানিতে আগাম কর (আগাম ভ্যাট) কমানো হয়েছে। সময়মতো ভ্যাট রিটার্ন না দিলে জরিমানার পরিমান কমানো হয়েছে, ভ্যাটের টাকার ওপর সুদের হারও কমানো হয়েছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা সব সুযোগ নিচ্ছেন এই বাজেটে।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংসদ ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। 

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো. শামসুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।

আরও সংবাদ