• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২১, ০৮:২৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ২৩, ২০২১, ০৮:২৭ পিএম

‘করোনাকালে সাড়ে ৩ লাখ পোশাক শ্রমিক কাজ হারিয়েছে’

‘করোনাকালে সাড়ে ৩ লাখ পোশাক শ্রমিক কাজ হারিয়েছে’

করোনার মহামারিতে দেশের সাড়ে ৩ লাখ পোশাক শ্রমিক কাজ হারিয়েছে বলে দাবি করেছে গবেষণা সংস্থা সিপিডি। এটি পোশাক খাতের মোট শ্রমিকের ১৪ শতাংশ জানিয়েছে সংস্থাটি।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এবং ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি) যৌথ আয়োজিত “কোভিড মহামারির বিবেচনায় আরএমজি খাতে ক্ষতি, ক্ষমতা এবং পুনরুদ্ধার : মাঠ জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ দাবি করে সিপিডি।

আলোচনা সভায় এক জরিপে পাওয়া এই তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সঙ্কট শুরুর সাত মাস পর গত অক্টোবরে জরিপ পরিচালনা করে শ্রমিকদের বেকারত্বের এই চিত্র পায় সিপিডি।

করোনার এই সঙ্কটকালে পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য জরুরি তহবিল গঠন করা উচিত বলে মনে করেন তারা।

সিপিডি’র গবেষণায় উঠে আসে, কিভাবে বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ কমে গিয়েছিল, যার মধ্যে ২৩% কারখানার সঙ্গে অনিয়মিত যোগাযোগ হয়। এর ফলে কারখানাগুলো ক্ষতির মুখোমুখি হয়। ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে ৬০% কারখানা আবেদন করে। আলোচনায় দেখা যায়, কিভাবে এ খাতের শ্রমিকেরা, বিশেষ করে নারীরা চাকরিচ্যুত হয়েছে।

ম্যাপড ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সৈয়দ হাসিবুল হোসাইন সভাটি সঞ্চালনা করে বলেন, কোভিড পরিস্থিতি থেকে আরএমজি খাতটির পুনরুদ্ধার এবং স্থিতিস্থাপকতার প্রক্রিয়াটিকে চিহ্নিত করার লক্ষ্যেই এই সমীক্ষা জরিপ পরিচালিত হয়েছে। ঢাকা, গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জ ছিল জরিপ অঞ্চল। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে ৩ হাজার ২১১টি নথিভুক্ত কারখানার মধ্যে ৬১০টি কারখানা নিয়ে জরিপ চালানো হয়। জরিপে দেখা যায়, ৮২ শতাংশ কারখানা বিজেএমই-এর অন্তর্ভুক্ত এবং ১৮ শতাংশ এর বাইরে। করোনাকালে এর গড় আকার ১০ শতাংশ কমেছে।

সৈয়দ হাসিবুল হোসাইন আরো উল্লেখ করেন, জরিপ অনুযায়ী বেশিরভাগ সরবরাহকারী অল্পসংখ্যক ক্রেতার সঙ্গে ব্যবসা করেছে। একক ক্রেতার ওপর নির্ভরতা (৯০—১০০%) কেবল ছোট কারখানাগুলোতেই নয়, মাঝারি ও বড় উদ্যোগগুলোতেও দেখা গেছে। একক উৎসের ওপর এই অধিক নির্ভরতা একটি বড় দুর্বলতা, যা সঙ্কটের সময়ে বড় চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকায় অবস্থিত কারখানায় একক উৎসের ওপর নির্ভরতা বেশি। এবং কোম্পানিগুলো সব থেকে বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতির সমুখ্খীন হয় এপ্রিল—মে এ দিকে, যা কিনা ৭৮ শতাংশ।

আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন ইস্ট ওয়েস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর পরিচালক মিরান আলী, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স সলিডারিটি-এর সমন্বয়ক তাসলিমা আক্তার এবং বিজিএমইএর পরিচালক এবং ফ্যাশন নিট গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. রহিম বি তালুকদার সমাপনী বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিপিডর গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

শিরীন আখতার বলেন, পোশাক খাতে সরকারের দেওয়া প্রণোদনাগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগী হয়ে কাজ করতে হবে।

এসময় তিনি শ্রম আইন কার্যকর করার পাশাপাশি শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও কারখানা পরিচালনার পরামর্শ দেন।

মহামারির সময়ে কোভিড সম্পর্কিত স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে অর্থনীতির সামগ্রিক ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক।

শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের ওপর কোভিড মহামারির প্রভাব নিয়ে আরো গবেষণার পরামর্শ দিয়ে তাসলিমা আক্তার বলেন, জাতীয় এ সঙ্কটের সময়ে শ্রমিকদের জন্য জরুরি তহবিল গঠন করা উচিত।

রহিম তালুকদার বলেন, সীমাবদ্ধতা বিরাজ করবে তবে আরএমজি খাত সম্পর্কিত সমস্ত খাতের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ দরকার। ক্রেতা এবং উদ্যোগের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করা উচিত।

সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান এই মহামারির সময়েও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এক জায়গা থেকে কাঁচামালের উৎস হলে এটা করবেই। তাই কাঁচামালের উৎসে বৈচিত্র্য আনতে হবে।