• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০১৯, ০৩:৪১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৬, ২০১৯, ০৯:৪৮ পিএম

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ

‘মশারির লাঠি নিয়ে ৭ মার্চের ভাষণে গিয়েছিলাম’

‘মশারির লাঠি নিয়ে ৭ মার্চের ভাষণে গিয়েছিলাম’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণে লাখ লাখ জনতার মাঝে আমরাও ছিলাম। সেই ভাষণ শুনতে গিয়েছিলাম মশারির টানানোর লাঠি নিয়ে। কেননা আমরা চেয়েছিলাম স্বাধীনতা।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে নির্বাচন ভবন মিলনায়তনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিচারণকালে তিনি এ কথা বলেন।

সিইসি বলেন, আজকে বলবো তাদের কথা যাদের বয়স একাত্তর সালে ১৮ থেকে ২২ ছিল। তারা স্বাধীনতাকে কিভাবে দেখেছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনে কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিভাবে তাদের মধ্যে সংগ্রামী চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। এ বিষয়ে বলতে গিয়ে আমি আমার জীবনের কিছু কথা বলবো। তার মানে এই নয়, আমি আমাকেই মহিমান্বিত করার চেষ্টায় বক্তব্য রাখছি। আসলে আমি বলতে চাচ্ছি একাত্তরে যারা যুবক ছিল তারা প্রত্যেকেই যারা যার নিজের জায়গা থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পথে কোনো না কোনোভাবে ভূমিকা রাখছেন।

তিনি বলেন, ৩ মার্চ একাত্তরে অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ওইদিন ছিল ঢাক স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলা। ইয়াহিয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। আমার ওইদিন মাস্টার্সের ব্যবহারিক পরীক্ষা (ঢাবি) ছিল। আমরাও পরীক্ষা ফেলে পথে নেমে আসি।

সিইসি বলেন, ৭ মার্চে ভাষণে রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আমরা কেউ মশারি টানানোর লাঠি, কেউ বাঁশ এসব নিয়ে ছুটে যাই। সেখানে যে লাখ লাখ মানুষ ছিল, তারমধ্যে আমরাও ছিলাম। রাতে আমার এক স্যারের সঙ্গে দেখা করে বলি-বঙ্গবন্ধু তো দিক-নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন, এখন কী করবো? স্যার বলেন, ঢাকা শহর কারো জন্য নিরাপদ নয় তুমি বরং গ্রামে চলে যাও।

নূরুল হুদা স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি ফরিদপুরের এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের দিকে রওনা হই। গ্রামে পৌঁছে দেখি, সব তরুণ, যুবা, কৃষক-শ্রমিক-জনতা, সবার মধ্যেই যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি। আমরা শুধু মনোবল সঙ্গী করে বাঁশের লাঠিকে রাইফেল ধরে নিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করি। আসলে তখন দেশের সবাই একেকজন যোদ্ধা। এদেশের নদী-নালা, খাল-বিল, গাছ-পালাও ছিল স্বাধীনতার পক্ষে। ওরা (পাক হানাদার বাহনী) সাঁতার জানত না। ফলে নদী পার হতে পারতো না। ওরা গাছে ওঠতে পারতো না। আমাদের গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা তালগাছের ওপর বসেও তাদের আক্রমণ করতো। এভাবে পুরো মুক্তিযুদ্ধটা জনযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে স্বাধীনতা মানে একটা নির্বাচন (৭০ সালের নির্বাচন)। ৭ মার্চে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির মহাকাব্য, স্বাধীনতা যুদ্ধ আর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ।

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, স্বাধীনতা মানে কেবল একটি পতাকা নয়। স্বাধীনতা মানে শহীদদের আত্মত্যাগ, মা-বোনদের সম্ভ্রম হারানো। আর এই হারানোর বেদনাটা আমাদের লজ্জার নয়, গর্বের।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা সৌভাগ্য আমাদের সিইসি একজন সম্মুখ যোদ্ধা। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল স্যার তরুণ যোদ্ধা, মাহবুব তালুকদার স্যার একজন অন্যতম সংগঠক। এ রকম একটি কমিশন আমরা পেয়েছি এজন্য আমার গর্বিত। আমি তখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। ফলে মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধকে আমিও একটি জনযুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করি। এই যুদ্ধে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তারা স্বাধীন দেশের সুফল ভোগ করতে পারেননি। আমরা সৌভাগ্যবান আমরা স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারছি। সেইজন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আমরা চিরঋণী।

হাশা/এসএমএম