• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০১৯, ০৯:২৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৭, ২০১৯, ০৯:২৬ এএম

রাজধানীর মালিবাগ ও গুলিস্তানে বোমাহামলার উৎস খুঁজছে গোয়েন্দারা

রাজধানীর মালিবাগ ও গুলিস্তানে বোমাহামলার উৎস খুঁজছে গোয়েন্দারা
রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে বোমা বিষ্ফোরণে আহত পুলিশের নারী এএসআই রাশেদা বেগম, (ডানে) ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশের গাড়ি - ছবি : ইন্টারনেট

রাজধানীর গুলিস্তানে পুলিশের ওপর বোমা হামলার পর এবার ব্যস্ততম মালিবাগে পেট্রোল পাম্পের অদূরে ফ্লাইওভারের পাশে পুলিশের গাড়িতে বোমা বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দুটি ঘটনাই রাতে ঘটানো হয়েছে। বিষ্ফোরণে পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছেন। বোমা হামলার উৎস খুঁজতে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা। 

মালিবাগ মোড়ে রোববার (২৬ মে) রাত ৯টার দিকে হামলার ঘটনাটি ঘটে। বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে পুলিশের নারী এএসআই রাশেদা বেগম ও একজন রিকশাচালকসহ ৪ জন আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশের গাড়ির পেছনের অংশ বিধ্বস্ত হয়েছে। গাড়িচালক কনস্টেবল শফিক বলেন, ফ্লাইওভারের ওপর থেকে কে বা কারা কী যেন ছুঁড়ে মারে। এতে মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায়। এসময় আশপাশের দালানের কাঁচও ভেঙে গেছে।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, বোমাটি ছুঁড়ে মারা হয়েছে। আজ সোমবার (২৭ মে) সকাল পর্যন্ত হামলার দায় কোনো জঙ্গি সংগঠন স্বীকার করেনি। ঘটনার পর থেকে গোটা রাজধানীতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, মালিবাগে পুলিশের গাড়িতে বিস্ফোরক ছুঁড়ে মারা হয়েছিল, নাকি এটা পরিকল্পিত হামলা তা তদন্ত করে দেখা হবে। রোববার রাতে মালিবাগে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। 

মালিবাগে পুলিশের গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা কীভাবে ঘটল এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মনিরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। ঘটনাস্থলে আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট কাজ করছে, এক্সপার্টরা কাজ শেষে বলতে পারবে আসলে বিস্ফোরকটি ছুঁড়ে মারা হয়েছিল, নাকি প্রি-প্ল্যানের অংশ।

তিনি বলেন, এখানে পাশেই রয়েছে সিটি এসবি ও সিআইডি অফিস। এ মোড়ে সবসময় পুলিশের গাড়ি স্ট্যান্ডবাই থাকে। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিস্ফোরণটি ঘটে। পাশে ট্রাফিকের একজন নারী পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে ডিউটিতে ছিলেন।

তিনি বলেন, এর আগে গুলিস্তানেও পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি হামলার ঘটনা ঘটেছিল, সেটির সঙ্গে এই ঘটনার কোনো যোগসাজশ বা মিল আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুলিস্তানের ঘটনায় কারা জড়িত ছিল তা সুনির্দিষ্টভাবে এখনও বের করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রাথমিক অবস্থায় এই ঘটনার বিষয় নিশ্চিত করে কিছু বলা ঠিক হবে না।

এর আগে ২৯ এপ্রিল রাতে গুলিস্তানে একটি মার্কেটের সামনে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত বোমার আঘাতে ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল ইসলাম ও লিটন গুরুতর আহত হন। এছাড়া আশিক নামে কমিউনিটি পুলিশের এক সদস্যও আহত হন। ঘটনার পর চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষজন আতঙ্কে দৌড়াতে শুরু করে। আহত অবস্থায় ২ পুলিশ সদস্যসহ ৩ জনকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজারবাগ, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ জনের মধ্যে নজরুল ইসলামের মাথায় এবং অন্য দুজনের শরীরে বোমার আঘাত লাগে। 

গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করেছে বলে খবর প্রকাশ করে জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে পরিচিত ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স। হামলা চালানোর ৫ ঘণ্টা পর আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে জানানো হয় সাইট ইন্টেলিজেন্সের পক্ষ থেকে। 

সিটিটিসির গোয়েন্দারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তারা তদন্ত শুরু করেছে। জানার চেষ্টা করছে- পুলিশের ওপর হামলা জঙ্গিরা করেছে কি না? নাকি আইএসের দোহাই দিয়ে ভিন্ন কোনো সুবিধা নেয়ার চেষ্টা। এ ঘটনায় পল্টন থানায় বিস্ফোরক আইন ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

পল্টন থানার ওসি মো. মাহমুদুল হক জানান, গুলিস্তানে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পল্টন থানার সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এস আই ওবাইদুর রহমান বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা, বোমা হামলা চালিয়ে জখম করার ঘটনা উল্লেখ করে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেছেন (মামলা নং ৫৩)। মামলায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। এ ঘটনায় হামলাকারী কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি।

এদিকে পুলিশের গাড়িতে এবং সদস্যের ওপর হামলায় ব্যবহৃত বোমা বেশ শক্তিশালী ছিল বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, গুলিস্তানে বিস্ফোরিত ককটেলটি কোনো সাধারণ ককটেল নয়, অনেক শক্তিশালী। এর সঙ্গে যে-ই জড়িত থাকুক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, উগ্রবাদ ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো মহল উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এই কাজ করছে কি না- তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইএসের দায় স্বীকারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত রয়েছে কি না- সেটিও দেখা হচ্ছে।

আইএস এই ঘটনার দায় স্বীকার করে পোস্ট দেয়ার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কাউন্টার টেররিজম বিস্ফোরণের ধরন, আহত হওয়ার ধরনসহ প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। ঘটনাটি আদৌ জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কি না, নাকি সাধারণ অপরাধীরা এটি করেছে, অথবা তৃতীয় কোনো মহল এটি করতে পারে, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এ ঘটনার পর থেকে ট্রাফিক পুলিশের নিরাপত্তা বাড়ানোর কাজ চলছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, সারা বিশ্বে বৈশ্বিক যে উগ্রবাদের প্রভাব আছে, বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তবে সংঘবদ্ধ বা বড় ধরনের নাশকতা করার ক্ষমতা তাদের নেই। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার পর তাদের বিধ্বস্ত করা হয়েছে। কখনো কখনো তারা বিচ্ছিন্নভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর অপচেষ্টা করে, সেগুলো আমরা নজরদারিতে রাখছি। জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য, দেশের মানুষ রক্ষার জন্য যেকোনো নৈরাজ্য-উগ্রবাদ দমনের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এইচ এম/ এফসি