• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০১৯, ০৩:২৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১১, ২০১৯, ০৩:২৯ পিএম

বাজার দর

মসলার বাজার বেজায় গরম 

মসলার বাজার বেজায় গরম 
ভিড় এখন মসলার বাজারে -ছবি : জাগরণ

বছরের অন্য সময়ের চেয়ে মসলার চাহিদা থাকে বেশি কোরবানির ঈদে। আর এই সুযোগে মসলার দাম বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আমদানিকৃত মসলার দাম। বিশেষ করে এলাচের দাম আকাশচুম্বী। আগে থেকেই পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, জিরা ও জয়ত্রীসহ প্রায় সব মশলার দামই ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ঈদ কেন্দ্র করে এসব পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়ে গেছে। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শাহজাহানপুর, মালিবাগ, রামপুরা, নতুন বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ বছরের বাজেটের পর কিছু কিছু মসলা পণ্যের দাম দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। রোজার ঈদের সময় আদা-রসুনের বাড়তি দাম এখনও চলছে। বন্যার অজুহাতে বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম এখনও কমেনি।

পাইকাররা বলছেন, দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য আমদানিকারকরা দায়ী। উল্টো দিকে আমদানিকারকরা বলছেন, প্রতিবেশি দেশ ভারতেও এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। সাথে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ভ্যাট। শেষ পর্যন্ত বাড়তি খরচের চাপ নিয়েই মসলার বাজারে ঢুকতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

মসলার খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিকেজি আস্ত শুকনা মরিচ ১৬০-১৮০ টাকা, আস্ত হলুদ ১৬০-১৮০ টাকা, গুঁড়া হলুদ ১৭০-২০০ টাকা, আস্ত ধনিয়া ১১০-১২০ টাকা, ধনিয়া গুঁড়া ১৪০-১৫০ টাকা, মানভেদে আস্ত জিরা ৩২০-৩৮০ টাকা, জিরার গুঁড়া ৪৪০-৪৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এসব মসলার প্রতিটিতে ঈদ উপলক্ষে ২০-৩০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

‘‘বন্যার কারণে সবজির বাজার আগে থেকেই চড়া। বাড়তি চাহিদা থাকা পণ্যের দাম আরও বাড়তি রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা’’

প্রতিকেজি দারুচিনি ৪২০ টাকা যা আগে ছিল ৩৫০ টাকা, এলাচ ২৮০০ টাকা যা আগে ছিল ২৪০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার টাকা, সাদা গোলমরিচ ৮০০ টাকা, কালো গোলমরিচ ৬০০ টাকা, জায়ফল ৬০০ টাকা, জয়ত্রী ২৪৫০ টাকা ও আলুবোখারা ৩৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। কাঠবাদাম ৮৬০ টাকা, কিসমিস ৩৫০ টাকা ও চিনাবাদাম ১১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, কোরবানির ঈদের সময় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মসলার দাম বাড়িয়ে দেন। কারওরান বাজারে মসলা কিনতে আসা ক্রেতা সুরুজ আলী বলেন, সকল প্রকার মসলার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়িয়ে দিয়েছেন দোকানিরা। কেজি প্রতি মসলার দাম বেড়েছে ৩০-৪০ টাকা আবার কোনও ক্ষেত্রে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এই বিষয়গুলো দেখার জন্য কেউ নেই। তাই আমাদের বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে।

মসলা ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, কোরবানি ঈদের সময় মসলার যোগান অনুযায়ী চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। তাই তাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয় বলে বিক্রিও হয় বেশি দামে। কারওয়ান বাজারের মসলা বিক্রেতা স্বপন মিয়া বলেন, প্রতিকেজি হলুদ, মরিচ ও দারুচিনি আমাদের বেশি দামে কিনে নিয়ে আসতে হয়েছে। এখন বেশি দামে না বিক্রি করলে আমার বাঁচব কিভাবে। আড়তদাররা দাম না কমালে আমরা কিভাবে কমাব।

মসলার খুচরা বিক্রেতা সালাম বলেন, আমরা ছোট ব্যবসায়ী। দাম বাড়ানোর সিন্ডিকেট হয় বড় পর্যায়ে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ালে আমাদেরও বাড়াতে হয়। 

‘‘রোজার ঈদের সময় আদা-রসুনের বাড়তি দাম এখনও চলছে। বন্যার অজুহাতে বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম এখনও কমেনি’’

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, কোরবানির ঈদকে ঘিরে মসলার বাজারে যে সিন্ডিকেট হয়, তাতেই দাম বাড়ে। সরকারের উচিত এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে দামের বিষয়ে নজর রাখা। কিন্তু দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে না বলে কোরবানির ঈদ আসলেই বেড়ে যায় মসলার দাম।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বাজারদরের তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে আদা ও রসুনের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক মাসে রসুনের এই দাম বৃদ্ধির পরিমাণ ২৮ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ঈদে দেশি রসুনের দাম ১৭২ শতাংশ এবং আমদানি করা রসুন ১১৯ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর এই সময়ে দেশি রসুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ৭০ থেকে ৯০ টাকা ছিল। বর্তমানে বাজারে আদার দাম বাড়তি। গত বছরের তুলনায় এবার আদার দাম ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

সুগন্ধি চালের দাম গত ঈদে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এবার বাড়েনি। এখন প্রতি কেজি ভালো মানের চাল ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারগুলোতে মানভেদে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায় বেশিরভাগ চাল বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

বন্যার কারণে সবজির বাজার আগে থেকেই চড়া। ঈদে বাড়তি চাহিদা থাকা পণ্যের দাম আরও বাড়তি রয়েছে বলে জানান শাহজাহানপুরের বিক্রেতা নুরুন্নবী। তিনি প্রতি কেজি টমেটো ১০০ টাকা, শসা ও গাজর ৬০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। এই বাজারে প্রতি হালি লেবু ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। 

এইচএম/এসএমএম

আরও পড়ুন