• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১, ০৫:৪৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১, ১২:৩০ এএম

মুনিয়ার মৃত্যু: আগাম জামিন মেলেনি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির

মুনিয়ার মৃত্যু: আগাম জামিন মেলেনি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির

জামিন মেলেনি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের। কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ অভিযোগে তার বোনের দায়ের করা মামলায় আনভীরের আগাম জামিনের আবেদনে সাড়া দেয়নি হাইকোর্ট।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার আনভীরের আবেদনটি আদালতের কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।

তবে আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সায়েমের আবেদন মঞ্জুর করে তাকে এ মামলায় ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছে হাইকোর্টের এই বেঞ্চ।


আদালত বলেছে, মুনিয়ার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘আঘাতের চিহ্ন’ থাকায় প্রথম আবেদনকারীর (আনভীর) বিষয়ে হাই কোর্ট বেঞ্চ আপাতত হস্তক্ষেপ করবে না। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এম হাসান ইমাম ও বদিউজ্জামান তরফদার।

আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন শুনানিতে মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়ার করা ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলা থেকে আনভীরের অব্যাহতি পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, বাদী পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করে। আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগে কী- বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক তা জানতে চাইলে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন মামলার অভিযোগ থেকে পড়ে শোনান।

পরে আদালত রষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য জানতে চাইলে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের কোনো অবস্থান নেই।”

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম তখন বলেন, ‘আগাম জামিনের আবেদনকারী এক-এর (সায়েম সোবহান আনভীর) বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, দুইয়ের (আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সায়েম) বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। আমরা শুধু দুই নম্বরকে দিচ্ছি, ছয় সপ্তাহ।”

এরপরও আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন শুনানি চালিয়ে যেতে থাকলে বিচারক বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা হস্তক্ষেপ করব না। শুধু এক জনকে জামিন দেব। আমরা আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে ডিলিট করে দিচ্ছি।”

এরপরও ইউসুফ হোসেন হুমায়ন তার শুনানি চালিয়ে যেতে থাকলে আদালত পরবর্তী ক্রমিক ডেকে সে মামলার শুনানি শুরু করেন।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, “মিস্টার ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে ভিকটিমের চারটা ইনজুরি আছে। অনেক মামলা আছে, এগুলো আমাদের শেষ করতে হবে। আমরা একজনকে দিচ্ছি। আরেকজনকে ডিলিট করে দিচ্ছি। আরও পরে আসেন, এখন না।” 

মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া এর আগে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলা করেছিলেন বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে। পুলিশ ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ অভিযোগ এনে আনভীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা করেন তানিয়া।

ঢাকার ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মাফরুজা পারভীন গত ৬ সেপ্টেম্বর বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

বসুন্ধরার এমডি আনভীরের পাশাপাশি তার বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, মা আফরোজা সোবহান, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সায়েম, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের সাবেক স্ত্রী সাইফা রহমান মিম, ফ্ল্যাট মালিক ইব্রাহিম আহমেদ রিপন এবং তার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের এ বেঞ্চ থেকেই ইব্রাহিম আহমেদ রিপনকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেওয়া হয়। গুলশানের যে ফ্ল্যাট থেকে গত এপ্রিলে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল, রিপন সেই ফ্ল্যাটের মালিক।

মুনিয়া ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লার মনোহরপুরে; পরিবার সেখানেই থাকেন। মৃত্যুর মাস দুয়েক আগে এক লাখ টাকায় ভাড়া নেওয়া ওই ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন তিনি। মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধারের পর সেখান থেকে তার মোবাইলসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধার করে পুলিশ, যার মধ্যে ছয়টি ডায়েরি ছিল। সিসিটিভির ভিডিও পরীক্ষা করে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের ‘প্রমাণ পাওয়ার’ কথাও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।

তবে তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে মুনিয়ার ‘আত্মহত্যায়’ আনভীরের ‘সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ার’ কথা বলা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

জাগরণ/এমইউ