লক্ষ্মীপুর মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরার ভরা মৌসুম এখন। কিন্তু নদীতে জলদস্যু ও ডাকাতের ভয়ে মাছ ধরতে পারছেন না জেলেরা। প্রতিদিনই জলদস্যুরা হামলা চালিয়ে জাল, নৌকা ও মাছ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কখনও জেলেদের মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণের ঘটনা ঘটছে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি ও রুজি-রোজগারের তাড়নায় নৌকা নিয়ে নদীতে নামছে জেলেরা।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মার্চ-এপ্রিল ২ মাস মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। বর্তমানে নদীতে ইলিশের ভরা মৌসুম। লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪২ হাজার ৮শ। তাদের অধিকাংশই মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১শ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে থাকে।
জানা গেছে, জলদস্যু ও ডাকাত আতঙ্কে জেলার রামগতির চরগজারিয়া, বয়ারচর, চর আবদুল্লাহ, তেলিরচর, মতিরহাট এবং তার আশপাশের জেলেরা নদীতে যাচ্ছে না। কিছু জেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে গেলে মারধর করে মাছ, জাল ও নৌকা নিয়ে যায়। বাধা দিলে ধরে নিয়ে আটকে রাখে এবং মুক্তিপণের জন্য তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। অনেক সময় এদের হাতে জেলেদের প্রাণও দিতে হচ্ছে।
সম্প্রতি রামগতি উপজেলার মেঘনা নদী এলাকার চরআবদুল্লাহ থেকে জলদুস্যরা ৭ জেলেকে অপহরণের করে নিয়ে যায়। পরে মুক্তিপণ আদায়ের পর মাঝ নদীতে ছেড়ে দেয়া হয়। ৫ জন সাতার কেটে কূলে আসলেও ২ জন নিখোঁজ হয়। এর ২দিন পর সাইফুল হাওলাদার নামে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এভাবে প্রায়ই জলদস্যুদের হাতে হামলার শিকার হতে হয় জেলেদের।
জলদস্যুদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার কারণে তাদের ওপর জেলেরা ভরসা রাখতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন জেলেরা। এছাড়া কালা জাকের, বাদশা, মহিউদ্দিন পলাশসহ ২০/২৫ জলদস্যু নদীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রায়ই জেলেদের ওপর হামলা করে নৌকা, জাল ও মাছ এবং নগদ টাকা লুটে নিয়ে যায়।
কমলনগর উপজেলার ফজুমিয়ার হাট, সাহেবেরহাট এলাকার জেলে আব্দুল করিম, আবুল হাশেম, ননা মিয়াসহ কয়েকজন জেলে জানান, জলদস্যুদের কারণে জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করতে পারছে না। প্রায়ই তারা জেলেদের ওপর হামলা করে মালামাল লুটে নেয়। পাশাপাশি অপহরণ করে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করে। বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে তাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে হয়। তাদের অত্যাচারে বর্তমানে অতিষ্ট জেলেরা।
জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ভরা মৌসুমেও নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে কম। এরপরও জেলেদের মধ্যে রয়েছে জলদস্যু আতঙ্ক। অনেকে ভয়ের কারণে নদীতে মাছ ধরতে নামছে না। এ বিষয়ে প্রশাসন আরও আন্তরিক হলে জেলেরা উপকৃত হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম মহিবউল্যাহ বলেন, ২ মাস ইলিশ ধরা বন্ধ থাকার কারণে সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা চাল দিয়েছেন। বর্তমানে জলদস্যুদের ভয়ে জেলেরা আতঙ্কিত। জলদস্যুদের গ্রেপ্তারের জন্য কোস্টগার্ড নদীতে অভিযান পরিচালনা করছে।
তবে পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বলেছেন, জেলেরা যেন নির্বিঘ্নি নিরাপদে মাছ শিকার করতে পারে সেজন্য নদীতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজন জলদুস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
একেএস