কোরবানি ঈদের কঠিন কাজ সহজে করবেন যেভাবে 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০১৯, ১২:৫৪ পিএম কোরবানি ঈদের কঠিন কাজ সহজে করবেন যেভাবে 

বছর ঘুরে আবারও এসেছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। এই ঈদে, সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলমান তাদের সাধ্য অনুযায়ী, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। তাই, ঈদে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আনন্দের পাশাপাশি দায়িত্ব এবং কাজের চাপ উভয়ই বেড়ে যায়।

রোজার ঈদে গৃহকর্ত্রীর কাজের চাপ বেশি থাকে। তবে, কোরবানির ইদে তা বেড়ে হয়ে যায় দ্বিগুণ বা তিনগুণ। বলা বাহুল্য, ঈদের সময় হেল্পিং হ্যান্ড যারা থাকেন তারাও ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি চলে যান। ফলে, কাজের চাপ অনেক বেশি থাকে।

কোরবানির মাংস, ভুঁড়ি প্রভৃতি পরিষ্কার করা, রান্না করা, বাড়িতে আসা গেস্ট সামলানো- সব কিছুই এক হাতে করতে হয়। পাশাপাশি, কোরবানির ঈদে ঘরের পুরুষ সদস্যকেও সমান ব্যস্ত থাকতে হয়। পশু কেনা থেকে শুরু করে পশু জবাইয়ের কাজ, কোরবানির মাংস কাটা, সবার মধ্যে মাংস ভাগ বাটোয়ারার দায়িত্ব থাকে ঘরের পুরুষের উপর। ফলে, কোরবানি ঈদে পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে ভীষণ ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

আবার, অনেকের ঘরে থাকেন অসুস্থ সদস্য। তাই, সবকিছু মিলিয়ে যেন কোরবানি ঈদ আনন্দে কাটাতে পারেন সে বিষয়ে থাকবে কিছু পরামর্শ।

ঈদের আগেই গুছিয়ে রাখুন কিছু কাজ

ঈদের দিন, কাজের চাপ যেন কম থাকে সেজন্য, আগে থেকে কিছু কাজ করে রাখলে ঈদের দিন অনেকটা স্বস্তিতে কাজ করা যায়। বিশেষ করে, ঈদের দিন তাড়াহুড়োর সময়, কোনা কাজ যেন অগোছালো না হয়ে যায় বা সব কাজ এক দিনে করতে গিয়ে কষ্ট না হয়, সেজন্য নিচের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা ভালো।
 
বাজারের লিস্ট করুণ আগে ভাগে


 
# ঈদের অন্তত ৫-৭ দিন আগে বাজারের লিস্ট অনুযায়ী বাজার করে রাখুন। যেন কোনো কিছু বাদ পড়লেও আবার আনিয়ে নেয়া যায়।
ঈদের সময় সাধারণত চিনি, পোলাওয়ের চাল, সেমাই, নুডুলস, পাস্তা, গুঁড়ো দুধ, বিরিয়ানির মসলা, আলুবোখারা, কাবাব চিনি, মিক্স মসলা- এই জিনিসগুলো আগেই এনে রাখা যায়।

এছাড়া, যেসব মসলা ঈদের আগে ব্লেন্ড করা হবে যেমন আদা রসুনও আগে এনে ব্লেন্ড করে রাখা যেতে পারে।
 

ঘর পরিষ্কার-পরিছন্নতার কাজ আগেই শেষ করুণ


 
# অল্প অল্প করে ঘর পরিষ্কার-পরিছন্ন করা এবং ধোয়া-মোছার করার কাজটি, ঈদের অন্তত ২-৪ দিন আগেই সেরে নিন।

# ঈদের কিছুদিন আগে একবার ফ্রিজ পরিষ্কার করে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ফ্রিজ থেকে খালি করে ফেলুন। যাতে, ঈদের দিন ফ্রিজে জায়গা করতে সমস্যা না হয়।

কী কী আইটেম রান্না করবেন সেই অনুযায়ী কাজ এগিয়ে রাখুন


 
# ঈদের দিন কী কী আইটেম রান্না করবেন সেটা ঈদের আগেই ঠিক করে নিন।

# যেসব আইটেম রান্না করবেন সেই অনুযায়ী আদা, রসুন, পেয়াজ, পোস্তদানা, বাদাম বা অন্যান্য মসলা ব্লেন্ড করে, ফ্রিজে রাখার কাজটি করে রাখতে পারেন অন্তত ৫ দিন আগে।

# ঈদের দিন রান্নার কাজে যে গোটা মসলাগুলো ব্যবহার করবেন হবে তা আগে থেকে ভালভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। এবার, কোনো ফুড গ্রেড কন্টেইনারে সংরক্ষণ করুন। রাখুন, হাতের কাছেই।

# ঈদের দিন নুডুলস বা পাস্তা রান্না করতে চাইলে, এর জন্য সবজি এবং মাংস আগেই হালকা সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে এয়ার-টাইট বক্সে করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুণ। ঈদের দিন সকালে শুধু নুডুলস বা পাস্তা সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে, আগে থেকেই রেডি করে রাখা সবজি এবং মাংস মিশিয়ে রান্না করে নিন। দেখবেন, কাজ অনেক খানি কম মনে হচ্ছে।

পেঁয়াজের বেরেস্তা করে রাখুন বেশি করে


 
# ঈদের দিন প্রায় প্রতিটি রান্নার কাজে পেঁয়াজ বেরেস্তার ব্যবহার অনস্বীকার্য। তাই, আগে থেকেই একটু বেশি করে পেঁয়াজ বেরেস্তা করে রাখুন। কিছুটা চিনি দিয়ে একটি কাচের বয়ামে করে রেখে দিতে পারেন। এমনিতে ২-৪ দিন ভালো থাকবে। অথবা একটা এয়ার টাইট বক্সে করে, ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। এভাবে, পেঁয়াজের বেরেস্তা আগেই করে রাখলে ঈদের দিন অন্তত কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন।

ঝামেলা এড়াতে চাইলে ব্যবহার করুন ডিস্পোজেবল প্লেট এবং বক্স

# ঈদের দিন এমনিতে অনেক বেশি থালাবাসন জমে যায়। পাশাপাশি, বারবার খাবার গরম করার ঝামেলা তো রয়েছেই। তাই, এই সমস্যা এড়াতে চাইলে বাজার থেকে ফয়েল পেপার দিয়ে তৈরি বড় বড় বক্স কিনে নিতে পারেন। এই ধরনের বক্সে খাবার অনেকক্ষণ ভালো থাকে এবং গরমও থাকে। আর ধোয়ার ঝামেলাও নেই। এছাড়া, চাইলে সুপার সপ থেকে সুন্দর দেখে ডিস্পোজেবল প্লেটও আনতে পারেন। তাতে, অনেক ঝামেলা কমে যাবে।

যেহেতু, ঈদের দিন সব কাজ আপনাকে সামলাতে হবে তাই এই ছোট ছোট কাজগুলো সারাদিনের কাজ থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। 
ঈদের পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে সব কাজ অন্তত একদিন আগে সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। ঈদের আগের দিনটি মোটামুটি ফ্রি রাখুন। ঈদের আগের দিন যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন। কেননা, ঈদের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবসর পাওয়া কঠিন হবে। 

পরিশেষে, বলব কী কী কাজ করবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করে নিন। কিছু কাজ করে এগিয়ে রাখুন। আর বাকি কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী করুন।

সবার ঈদ কাটুক, আনন্দে এবং নিরাপদে।

লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড

আরও সংবাদ