ভারতে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়ল দ্বিগুণ, প্রভাব বেনাপোল বন্দরে 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯, ০৯:৫৬ এএম ভারতে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়ল দ্বিগুণ, প্রভাব বেনাপোল বন্দরে 
বেনাপোল দিয়ে আসছে ভারতীয় পেঁয়াজ

ভারতীয় কৃষিপণ্য মূল্য নির্ধারণকারী সংস্থা ‘ন্যাপেড’ শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) থেকে হঠাৎ করে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে ৮৫২ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করায় তার প্রভাব পড়েছে বেনাপোল বন্দরে। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ পড়ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। আর পাইকারি বাজারে সেটা বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা দরে। আর খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজের দাম ৫৭ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুই-এক ট্রাক পেঁয়াজ বন্দরে এলেও সেগুলো আগের এলসির পেঁয়াজ। এতদিন প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ৩০০ থেতে ৪১০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হলেও এখন থেকে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ৮৫২ মার্কিন ডলারে ব্যবসায়ীদের আমদানি করতে হবে। আগের এলসিগুলো পুনরায় এ্যামানমেন্ড করে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। 

এদিকে, ভারত সরকার পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দেওয়ায় দেশের খোলা বাজারে পেঁয়াজের দাম তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে প্রায় দশ টাকা। ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৪১০ মার্কিন ডলারে। সে সময় কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজ সঙ্কট থাকায় বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করতেই পেঁয়াজ আমদানিতে মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে দাবি করছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। 

তবে বাংলদেশি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ পেঁয়াজ মৌওসুমে প্রতিবারেই ভারত এ কাজ করে থাকে। শুধু পেঁয়াজ না প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যে এ কাজটি করে।

বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মা স্বরশতি এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বাপ্পা মজুমদার জানান, বন্যার কারণে গত এক মাসের ব্যবধানে ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সে সময় পেঁয়াজ রপ্তানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ভারতের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বাজারে পেঁয়াজের মূল্য সহনশীল রাখতেই ভারত সরকারের কৃষিপণ্য মূল্য নির্ধারণকারী সংস্থা 'ন্যাপেড রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। 

তিনি আরও জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দিল্লী থেকে পেট্রাপোল কাস্টমসে পাঠানো ফ্যাক্স বার্তায় পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি জানানো হয়। সেখানে বলা ছিল, ‘এখন থেকে পেঁয়াজের কোনো চালান দেশের বাইরে রপ্তানি করতে হলে বর্তমানে নির্ধারণ করা ৮৫৫ মার্কিন ডলারে কার্যকর হবে।’ আগের কোন এলসি থাকলে সেগুলোও বাড়তি মূল্য এ্যামানমেন্ড করতে হবে।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক খুলনার হামিদ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে প্রতি মেট্রিক টন ৮৫৫ ডলার মূল্যে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ১২২ মে.টন পেঁয়াজ আমদানি করি। ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে পেঁয়াজ আমদানি হতো নাসিক থেকে। সেখানে বন্যার কারণে এখন আমদানি হচ্ছে সাউথ (দক্ষিণ) থেকে। পরিবহন খরচ ও ক্রয় মূল্য বেশি পড়ে যাওয়ায় সেখানে দাম বেড়েছে। বেনাপোল বন্দর পর্যন্ত আমদানি খরচ পড়ছে প্রতি কেজিতে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। খুলনায় পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা দরে। পেঁয়াজের চাহিদা থাকায় তারা বেশি মূল্য দিয়েও আমদানি করছেন।

বেনাপোলের সিএন্ডএফ এজেন্ট রয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করতেই কৌশল হিসাবে মূল্য দ্বিগুণ করেছে। এমন চলতে থাকলে দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকবে। তবে সে দেশের সরকার যদি তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তবে বাজার মূল্য আবার আগের জায়গায় ফিরে আসবে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে এক হাজার ১১৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। মূল্য বৃদ্ধির পর পেঁয়াজ আমদানি কিছুটা কমে গেছে। তবে বাংলাদেশি অনেক আমদানিকারকের এলসি ভারতের রপ্তানিকারকদের কাছে পড়ে আছে। অনেকে বাড়তি মূল্য এ্যামানমেন্ড করে পেঁয়াজ আমদানি করছে।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের একজন কর্মকর্তা জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অনেক কম। বাজার সহনশীল রাখতে ও পেঁয়াজের আমদানি গতিশীল করতে কাস্টম হাউজ ২৪ ঘণ্টা খোলা আছে। যেহেতু পেঁয়াজের কোন শুল্ক নেই সে কারণে আমদানিকারকরা যে মূল্য ঘোষণা দিচ্ছে আমরা সে মূল্যে শুল্কায়ন করে দিচ্ছি।

কেএসটি

আরও সংবাদ