ইভিএম সংরক্ষণ জটিলতায় ইসি 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০১৯, ০৯:৫১ পিএম ইভিএম সংরক্ষণ জটিলতায় ইসি 
ইভিএমে ভোট দেয়ার পদ্ধতি - ফাইল ছবি

নির্বাচনের সনাতন পদ্ধতির বদলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নিতে আগ্রহী নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ অনুযায়ী গত জাতীয় নির্বাচনে ৬টি আসনে সম্পূর্ণ ভোটগ্রহণে এভিএম ব্যবহার করা হয়। জাতীয় নির্বাচনের পর বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনসহ পঞ্চম উপজেলা পরিষদের নির্বাচন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কিছু আসনে ইভিএমে ভোট নেয়া হয়েছে। নির্বাচনি ব্যবস্থা সহজ, নিরাপদ, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করতে ইভিএম এরইমধ্যে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখায় ভবিষ্যতের সব নির্বাচনেও ইভিএমে ভোট নেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ইসি। এরই অংশ হিসেবে দেড় লাখ ইভিএম কেনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক ইভিএম কেনা হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে থাকা বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে। প্রতিটি ইভিএমের দাম পড়ছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে, ইভিএম সংরক্ষণ নিয়ে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, ইভিএম কেনার জন্য ৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যেখানে প্রতিটি মেশিনের পেছনে ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু এত দামি মেশিন কোথায় রাখা হবে, এর জন্য প্রকল্পে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। ফলে যথাযথ যত্ন ছাড়াই এভিএমগুলো রাখা হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতায় সংরক্ষণ করতে হয়। সেখানে ইভিএম একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। আর একটি ভোটিং মেশিনের দামও অনেক। সেখানে এগুলো সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করেই তা ক্রয় করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বর্তমানে কোনো আসনের ভোটগ্রহণ শেষে ইভিএমগুলো সংশ্লিষ্ট উপজেলা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু যথাযথভাবে সংরক্ষণ বলতে যা বোঝায়- তা হচ্ছে না। কেননা, ইভিএম সংরক্ষণের জন্য দরকার নির্দিষ্ট তাপমাত্রার আলাদা কক্ষ। যেখানে দীর্ঘদিন রাখলেও মেশিনগুলোর কার্যক্ষমতা নষ্ট হবে না।

জানতে চাইলে ইসির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, ইভিএম প্রকল্প নেয়ার সময় সংরক্ষণের বিষয়টি ভাবা হয়নি। কিন্তু দেড় লাখ ইভিএম কোথায় রাখা হবে, এই প্রশ্নটি এখন সামনে চলে এসেছে। তাই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়- এমন একটি কার্যকর উপায় এখন খোঁজা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধী। তাদের দাবি, এই যন্ত্র দিয়ে দূর থেকে ভোট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু ইসির কারিগরি কমিটির বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হায়দার আলী জানিয়েছেন, বাস্তবে এর কোনো সুযোগই নেই। তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, বর্তমানের ইভিএমের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো ‘বায়োমেট্রিক অথিনটিফিকেশন’। এটা নির্ভুল আর তা প্রমাণ হয়েছে বিভিন্নভাবে। এই ইভিএমে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে আইডিন্টিফিকেশন করা হয়েছে। ভোটার নিজে না এলে অন্য কেউ তার ভোট দিতে পারবে না। তিনি জানান, অনেক দেশে অনলাইন ব্যবস্থা আছে। তবে বাংলাদেশের ইভিএমটা পরিপূর্ণভাবে অফলাইন করা হয়েছে। আর এতে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় এটি দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

অধ্যাপক হায়দার আলী বলেন, একটা ভোট কেন্দ্রে সম্ভাব্য যতগুলো অনিয়ম হতে পারে- এর সবই ইসির ইভিএম মোকাবিলা করতে পারে।

এই ইভিএমে আগে থেকেই কোনো দলের ভোট সংখ্যা কমান্ড দিয়ে রাখা যায় বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যে সন্দেহ, এরও জবাব দিয়েছেন ইসির এই বিশেষজ্ঞ। হায়দার আলী বলেন, এটা যদি সম্ভব হয় তা হলে প্রচলিত পদ্ধতিতেই সম্ভব। ধরুন, পেশিশক্তি ব্যবহার করে কোনো একটা পক্ষ একটা কেন্দ্র দখল করে নিল। অথবা একটা বুথ দখল করে নিলে একশ পাতার একটা ব্যালট পেপারে সিল মারতে তাদের কয়েক মিনিট লাগবে। ইভিএমে এটা ঠেকানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভোটকেন্দ্র দখল করে, সব এজেন্ট বের করে দিয়েও কেউ একটা ভোটও দিতে পারবে না। কারণ ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে অথিন্টিফিকেশন না করা হলে এ মেশিনে ভোট দেয়া সম্ভব নয়। অবশ্য জোর করে কাউকে কেন্দ্রে নিয়ে এসে এটা করা সম্ভব। কিন্তু ভেবে দেখুন, এভাবে ১০০ লোককে ধরে আনা কি সম্ভব?

ইভিএমে ভোট দেয়ার ডিভাইস   - ফাইল ছবি

বর্তমানে ব্যবহার হওয়া ইভিএম সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাও একাধিকবার দাবি করেছেন, এই ইভিএম আগেরগুলোর চেয়ে উন্নতমানের। কোনোভাবেই হ্যাক করা সম্ভব নয়। এছাড়া এগুলো ব্যবহারের ফলে দ্রুততার সঙ্গে ফল প্রকাশ করা যায়। আর ইভিএম ব্যবহারের ফলে ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগও বন্ধ হচ্ছে।

প্রসঙ্গগত, বাংলাদেশে ইভিএম ব্যবহারের চেষ্টা হয় বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া নির্বাচন কমিশনের আমলে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে এই ইভিএম ব্যবহার করা হয়। পরে কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে কমিশন ২০১২ সালে কুমিল্লায় এবং ২০১৩ সালে পাঁচ সিটি নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে। এই যন্ত্রটি তৈরি করেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। কিন্তু সেই যন্ত্রে কিছু সমস্যা ছিল। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে ইভিএম ব্যবহার করছে, তাতে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি।

এইচএস/ এফসি

আরও সংবাদ