বিশ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বন্যার্তরা

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০১৯, ০৮:৪০ এএম ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বন্যার্তরা


দেশের ২০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।। এ সকল জেলায় বিপদ সীমার অনেক উপর দিয়ে পানি অতিবাহিত হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর অবস্থা নাজুক। 

নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, ফেনী, বান্দরবান, বগুড়া, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

আজ-কালের মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস থেকে তথ্য দেয়া হয়েছে। তবে আগামী সোমবার থেকে বন্যার পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করবে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। 

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের দেয়া তথ্যানুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশের ২০ জেলার ১৭৪টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। ১০ জুলাই থেকে বন্যা শুরু হওয়ার পর এই এলাকাগুলোতে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দুই হাজার জন। এছাড়া সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ জন। সাপের কামড়ে চারজনের মৃত্যু ঘটেছে। চোখের প্রদাহে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮০ জন। বিভিন্ন ভাবে আঘাত পেয়েছেন ১২৩ জন বানভাসী মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১হাজার ৬৬ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, ডেঙ্গু, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, সাপে কাটা, পানিতে ডোবা ও আঘাতপ্রাপ্ত বানভাসী রোগীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। 

বিভিন্ন জেলা থেকে সিভিল সার্জনদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এই তালিকা করা হচ্ছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।  সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর সিভিল সার্জনদের দেয়া তথ্য মতে, বন্যার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া রোগীদের সেবা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত ওষুধ সামগ্রী ও ওরস্যালাইন বরাদ্দ রয়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকরা বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় ব্যাপক হারে পানিবাহিত রোগ ও ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে সে রকম ব্যবস্থা না থাকায় রোগাক্রান্তরা চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে ভিড় জমাচ্ছেন। 

এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের সাধ্যমত সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়- পেটের পীড়া, ডায়রীরয়া, প্রচন্ড জ্বর, সর্দি, কাশিসহ চর্মরোগে ভোগছেন তারা। চিকিৎসকরা আরও জানান, ইদানিং পানিবাহিত রোগ আক্রান্ত এবং ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শিশু রোগীর সংখ্যাও বেশি।

অপরদিকে গত তিনদিনের বন্যার পানিতে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে রংপুর ও কুড়িগ্রামের বিস্তৃত এলাকা। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, উলিপুর, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার সোমবার হতে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ভাঙ্গনের তাণ্ডব লক্ষ্য করা যায়। এ সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে ২ শতাধিক পরিবারের ভিটেমাটি, সহায়সম্বল, গাছপালা, পাট, আখ। গ্রামের মানুষ তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই ঘরবাড়িসহ কোন কিছু সরিয়ে নেওয়ার সময় পাচ্ছে না। অপর দিকে গাইবান্ধার সুন্দলপুর ও যাদুরচর দিগলাপাড়া নামক স্থানে বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে ভিতরে পানি ঢুকছে। কেউ সরকারি সড়কে,অন্যের ভিটায়, এমনকি অনেকে খোলা আকাশের নিচে ছোট ছোট শিশুসহ গরু মহিষ ছাগল ভেড়া হাঁস মুরগি নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। 

রংপুরের উলিপুরের ষাটের উর্ধ্বে বয়সী বৃদ্ধা লাইলী বেগম জানান, এমুন নদী ভাঙন বাপের জন্মেও দেহি নাইরে বাপু। আমার ৮ পোলা তারা কিছুই নিতে পারে নাই। অনেক রাত্রিরে কোন রহমে ছোট ছোট নাতি-নাতনি গো লইয়া ভাগি আইছি। এহন মানসের বাড়িত থাহি। খাওয়া নাই, থাকার জায়না নাই। এমনি করি কয়দিন যে চলবে, ক্যারা জানে। আপনেরা আমাদের জন্যি কিছু এডা করেন। নইলে বাঁচমো ক্যামনে?’ 

বন্যার দুর্গতদের জন্য সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসনের ত্রাণভান্ডার হতে জিআর এর ৪০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডালিয়া বিভাগের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ দিন ধরে উজানের ঢলে তিস্তার নদীর পানি তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার (৬৩ দশমিক ৪০) ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসায় তিস্তা নদীতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে তিস্তা অববাহিকার রংপুরের উলিপুর, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, চিলমারী, ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চর ও গ্রাম প্লাবিত হয়ে ২৩ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। 

এইচএম/আরআই

আরও সংবাদ