খালেদ গ্রেফতার হলেও থামছে না তার নামে চাঁদাবাজি 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯, ১০:২৭ এএম খালেদ গ্রেফতার হলেও থামছে না তার নামে চাঁদাবাজি 
যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া

রাজধানীর মতিঝিল, খিলগাঁও, শাহজাহানপুর এলাকা ছিল যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার সাম্রাজ্য। তিনি ছিলেন এসব এলাকার ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসদের নিয়ন্ত্রক। বর্তমানে এই যুবলীগ নেতা গোয়েন্দা হেফাজতে থাকলেও ওইসব এলাকায় থামছে না তার নামে চাঁদবাজি। সমান দাপটে আগের মতোই তৎপর রয়েছে তার ক্যাডার বাহিনী।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর খালেদ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর এলাকাবাসী ভেবেছিল তার অনুপস্থিতিতে এসব এলাকায় চাঁদাবাজি আপাতত বন্ধ হবে। কিন্তু বিষয়টি উল্টো হয়েছে। এলাকাবাসীকে হতবাক করে দিয়ে খালেদের ক্যাডার বাহিনী। তারা খালেদের অনুপস্থিতিতেও চাঁদাবাজিও অব্যাহত রেখেছে।

 স্থানীয় বাসিন্দা ও র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, এরইমধ্যে পরিবহন থেকে খালেদের নামে চাঁদা তোলা শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবারও খিলগাঁওয়ের লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও চাঁদা তোলা হচ্ছে খিলগাঁও লেগুনা স্ট্যান্ড, মতিঝিলের ফুটপাত, শাহজাহানপুর বাজারস্থ বিভিন্ন এলাকা। জানা যায়, খালেদের অনুপস্থিতিতে এই চাঁদাবাজিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে তার ঘনিষ্ঠ কর্মী জামাল।

র‌্যাবের কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘কারা কিভাবে চাঁদাবাজি করছে বিষয়গুলো আমরা নজরে রাখছি। এদেরও গ্রেফতার করা হবে।
গতকাল রোববার মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাত মোটামুটি ফাঁকা। তবে কোনো কোনো স্থানে কাপড়-জুতাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে কয়েকজনকে বসে থাকতে দেখা যায়।

ফুটপাত বিক্রেতা আলাউদ্দিন মিয়া জানান, মোটা পলিথিন বিছিয়ে তিনি ফুটপাতে মাল নিয়ে বসেন। বৃষ্টি এলে সেগুলো পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে রাখেন। এতে তিনি বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পান। কিন্তু চাঁদাবাজি থেকে রেহাই মিলছে না। তার দুই ছেলে, এক মেয়ে। দু’জনই স্কুলে পড়ছে। ফুটপাতের এই দোকান করে রোজ ৮০০-৯০০ টাকা আয় করতে পারেন। কিন্তু সেখান থেকে চাঁদা দিতে হয় ২০০-৩০০ টাকা। 
তিনি আরও জানান, ইমরান নামের একজনকে তিনি প্রতিদিন চাঁদার টাকা দেন। গত সপ্তাহে ইমরানকে আসতে দেখেননি। গত শনিবার থেকে আবার চাঁদা নিতে আসছেন আলাউদ্দিন অপর একজন। কিন্তু ইমরান কার লোক তা তিনি জানেন না।
 
জানা যায়, এ ইমরানও গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার লোক। ইমরান, সজীব ও কালুসহ কয়েকজন মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলেন। প্রতিটি দোকান থেকে ২০০-৩০০ টাকা করে নেন তারা। ওই এলাকা থেকে প্রতিদিন লাখ টাকার বেশি চাঁদা ওঠে। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে ফুটপাতে প্রচুর দোকান বসে। সেই দিনগুলোতে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা ওঠে। সেই টাকা এত দিন চলে যেত খালেদ মাহমুদের কাছে। এখন নিজেরাই ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন।

গুলিস্তানের ফুটপাতের টি-শার্টের দোকানি সাইফুল ইসলাম বলেন, খালেদ থাকলেই কী, না থাকলেই কী? আরেক খালেদ জন্ম অইয়া যাইব। আমাগো রক্ষা নাই। যতদিন আইনের লোকজন ঠিক না অইব, ততোদিন চাঁদার অত্যাচার থাইকা কারো রক্ষা নাই।
 
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খালেদ গ্রেফতার হওয়ার পর কয়েক দিন চাঁদাবাজদের দেখা যায়নি। কিন্তু ২/৩ দিন ধরে তারা আবার এলাকায় আসতে শুরু করেছে। এদের মধ্যে জামাল অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। এছাড়া খালেদ গ্রেফতারের পর কয়েক দিন অঙ্কুর, উজ্জল, পোল্ট্রি রিপন, সাধুসহ বেশ কয়েকজনকে এলাকায় দেখা যায়নি। ২/৩ দিন ধরে তারা আবার প্রকাশ্যে আসছে। লেগুনা স্ট্যান্ডসহ আশপাশের এলাকা থেকে আগের মতোই চাঁদা তুলছে।

জানা যায়, খিলগাঁও এলাকার লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে ১২২টি লেগুনা চলাচল করে। এসব লেগুনার প্রতিটিকে দৈনিক ৭০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। শুধুমাত্র খিলগাঁও লেগুনা স্ট্যান্ড থেকেই প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হয় ৮৫ হাজার টাকা। শাহজাহানপুর বাজারসহ আশপাশের এলাকার চাঁদাবাজিতে আগের অবস্থাই বিরাজ করছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন লেগুনা চালক বলেন, ভাই এই সব খবর লইয়া কী করবেন! আমাগো কপালপুড়া। সারাদিন কামাই করতে পারি না পারি হেইডা কোনো কথা না। তাগো চাঁদা দেওনই লাগব। এই জ্বালা থাইকা মুক্তি পাওন যাইব বইলা তো মনে অয় না। তিন-চাইর দিন বন্ধ আছিল চাঁদাবাজি। আবার শুরু হইছে। তিনি আরও বলেন, আমরা কার কাছে বিচার দিমু। বিচার দিলে আমার লেগুনা চালানোডাই বন্ধ কইরা দিবো। মারধর করবো।  

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থেকে খালেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। একই দিন মতিঝিলের ফকিরাপুল এলাকায় তার মালিকানাধীন ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১৪২ জনকে আটক করা হয়। এরপর গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলায় প্রথমে ডিবি পরে র‌্যাব রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে খালেদ মাহমুদকে।

এইচএম/একেএস

আরও সংবাদ