যুবলীগে বয়স ফ্যাক্টর, বাদ পড়তে যাচ্ছেন অনেকে

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০১৯, ১০:০০ পিএম যুবলীগে বয়স ফ্যাক্টর, বাদ পড়তে যাচ্ছেন অনেকে

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়সসীমা ৫৫ বছর বেঁধে দেয়ায় যুবলীগের অনেক নেতাই বাদ পড়তে যাচ্ছেন। যুবলীগ নেতারা মনে করেন, যুবলীগের এবারের সম্মেলন ‘৭ম কংগ্রেস’-এ বয়স হবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ‘নির্ণায়ক’। সেই বয়সের ‘নির্ণায়কে’ বাদ পড়তে যাওয়া ওই নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় বার্ধক্যের কারণে বাদ পড়ে যাওয়া ওই নেতাদেরও এখন সংগঠন থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যুবলীগ নেতারা বলছেন, গণভবনে রোববারের বৈঠকে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা যুবলীগের বয়সসীমায় অবিচল ছিলেন। তবে বয়সসীমা নির্ধারণে দলীয়প্রধানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। 
  
আগামী ২৩ নভেম্বর (বুধবার) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস। এরইমধ্যে নানা কারণে বিতর্কিত যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য চয়ন ইসলামকে সম্মেলন কমিটির আহ্বায়ক ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।   

যুবলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্রে বয়সসীমা নির্ধারণ নেই। এ জন্য সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধনের একটি সাব-কমিটি করে নেত্রীকে দেখানোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সম্মেলনে সংগঠনের কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে গঠনতন্ত্রে এই সংশোধনী আনা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের আদর্শিক নেত্রী, এক্ষেত্রে তিনি যেটা বলবেন, সেটাই হবে। তবে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে লিখিত আকারে আনতে হবে।  

যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২০ অক্টোবর) গণভবনে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের যে বৈঠক হয়েছে তাতে যুবলীগের এক নেতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য যুবলীগের নেতৃত্বে আসার বয়স ৭০ বছর করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু দলীয়প্রধান তাকে বলেন, তরুণদের সংগঠনের আসার সুযোগ করে দিতে হবে। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বয়সসীমা ৬৫ বছর করার প্রস্তাব করলে দলীয়প্রধান তাকে বলেন, অনেক যুবলীগ করেছো, এবার এলাকায় গিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করো।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগে গতি আনার জন্যেই সংগঠনে তারুণ্য নির্ভর নেতৃত্ব আনতে চান দলের হাইকমান্ড। সেজন্যই হয়তো বয়সের সীমারেখা নিয়ে আসা হয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা যারা রয়েছেন তাদেরও যুবলীগ করার সুযোগ তৈরি করতে এমনটা করেছেন দলের হাইকমান্ড। দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীই একে স্বাগত জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে যুবলীগের বর্তমান সময়ে যে ‘বদনাম’ সৃষ্টি হয়েছে তা ধীরে ধীরে মিশে যাবে। একইসঙ্গে যুবলীগের মধ্যে শুদ্ধি অভিজানও চলমান থাকবে।   

যুবলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বয়স নিয়ে বলেন, যদি ৪৫ বছর করা হতো তবে হয়তো যুবলীগের হিসেবে অনেক কম হতো। তবে ৫৫ বছর যুবলীগের জন্য সঠিক বলেই আমার মনে হয়েছে।

যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, রোববার দলীয় প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বয়সসীমা ৫৫ নির্ধারণের পর থেকেই সংগঠনের নেতাদের মধ্যে তারুণ্যনির্ভর কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যুবলীগের তরুণ নেতারা নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন। রোববারের বৈঠকের পর থেকে অনেকেই কর্মীদের সঙ্গে হঠাৎ যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে যারা বয়সের নির্ণায়কে বাদ পড়তে পারেন এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে- তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। অনেকেই সম্মেলনের আগেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে পারেন বলেও যুবলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন।

কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের বয়সসীমা ৫৫ নির্ধারণের কারণে এখন আশাবাদী হয়ে উঠেছেন সাবেক বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাও। তারা ছাত্রলীগ থেকে সাবেক হওয়ার পর কোথাও পদায়িত হননি। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃত্বের সমন্বয়ে যুবলীগের আগামী নেতৃত্ব আসার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন সংগঠনের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, নেত্রী এবার ছাত্রলীগের যারা ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপট ও বিরোধী দলে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাদের অনেককেই সংগঠনের দায়িত্বে আনতে পারেন। যা দীর্ঘ ৭ বছরে যুবলীগের অব্যাহতি পাওয়া চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সময়ে হয়নি। সেক্ষেত্রে হয়তো ওই সাবেক ছাত্র নেতাদের বেশ কয়েকজনের নাম দলীয় হাইকমান্ড থেকে যুবলীগের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তাব করা হতে পারে।

যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদসহ সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর বেশির ভাগ সদস্যের বয়স ষাটোর্ধ্ব। যুবলীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সামসুল আবেদীন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। সত্তরের কাছাকাছি সামসুল আবেদীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম যখন যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন তখনো সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাদ, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, আব্দুস সাত্তার মাসুদ,  আহমদ আল কবির, আবুল বাশারসহ সভাপতিমণ্ডলীর বেশির ভাগ সদস্যের বয়সই ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। সংগঠনের বর্তমান কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে পাঁচ জনের বয়স ৫৫ এর নিচে রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছেন অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন। 

আরও জানা গেছে, যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদকদের অধিকাংশের বয়স ৫৫ বছরের নিচে। আট সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে শুধু একজনের বয়স ৫০ বছরের কম। সহ-সম্পাদক ২০ জনের মধ্যে অধিকাংশই পঞ্চাশের কোটা পার করেছেন। জানা গেছে, যুবলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলুর বয়স ৪১ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এন আই আহমেদ সৈকতের বয়স ৩৯ বছর।

আগামী দিনের নেতৃত্ব বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু দৈনিক জাগরণকে বলেন, বর্তমানে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল এবং ওয়ান ইলেভেনে নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে যারা সাবেক ছাত্রনেতা ছিলেন, যুবলীগে তাদের জায়গা করে দিলেই যুবলীগের আগামী দিনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। একইসঙ্গে যারা ক্লিন ইমেজের রয়েছেন তাদেরও জায়গা করে দিতে হবে।    

আগামী কংগ্রেসের প্রস্তুতি এবং তরুণদের চিন্তার বিষয় জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী যুবলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক এ এইচ এম কামরুজ্জামান কামরুল দৈনিক জাগরণকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অবশ্যই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। তবে সংগঠনে কিছু অভিজ্ঞ নেতাদেরও দরকার রয়েছে, তাহলেই অভিজ্ঞ ও তরুণ নেতাদের সমন্বয়ে একটি ভাল নেতৃত্ব আসবে, এবং সংগঠন গতিশীল হবে।  

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় যুবলীগ। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছয়টি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনটির সবশেষ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে।

এএইচএস/ এফসি

আরও সংবাদ