২ বছর আগেই টেস্ট খেলা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন সাকিব  

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯, ০৪:০৫ পিএম ২ বছর আগেই টেস্ট খেলা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন সাকিব  
সাকিব আল হাসান। ফটো : ক্রিকইনফো

গতকাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গণমাধ্যমের সামনে বলেছিলেন, সাকিবের টেস্ট খেলার প্রতি কিছুটা অনাগ্রহ রয়েছে। দায়িত্ব ছাড়া নিয়ে সাকিব এখনো বোর্ডকে কিছু জানায়নি। সাকিব বোর্ডকে জানালে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।

গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ছিল, তখনো গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারেও সাকিব আল হাসান টেস্ট খেলতে চান না বলে মন্তব্য করেছিলেন। একইসঙ্গে তিনি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের টেস্ট খেলতে অনিহার কথাও জানিয়েছিলেন।  

পাপনের এমন মন্তব্যে সরগরম হয়ে উঠেছিল দেশের ক্রীড়াঙ্গন। বিষয়টিকে দুঃখজনক বলেও জানিয়েছিলেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান। 

যদিও সাকিব নিজে কখনোই তার টেস্ট খেলার অনাগ্রহের কথা নিজের মুখে বলেননি। বরং সাদা পোশাকে তিনি একের পর এক রেকর্ড গড়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এবং একাধিকবার টেস্ট জয়ের নায়কও হয়েছেন। 

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে একমাত্র টেস্টের আগে এবং পরে সাকিব তার অধিনায়কত্ব করা নিয়ে নিজের অনিচ্ছার কথা জানালেও টেস্ট খেলতে না চাওয়ার বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। কিন্তু তারপরেও বোর্ড সভাপতি মি.অলরাউন্ডারের টেস্ট খেলতে চান না- এমন কথা গণমাধ্যমের সামনে বলেছেন।

আসলেই কি সাকিব টেস্ট খেলতে চান না? বাস্তবতা আসলে কোনটা? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আজ থেকে দুই বছর আগে খোদ সাকিবের একটি সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ তুলে আনা যেতে পারে। ২০১৭ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১২ সেপ্টেম্বর একটি বিশেষ কারণে সাকিব সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন।

এখানে পাঠকদের একটু স্মরণ করিয়ে দেয়া আবশ্যক, সেই বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই সফরে টেস্ট সিরিজ খেলা থেকে বিশ্রাম চেয়েছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। বিসিবি তার বিশ্রাম মঞ্জুরও করেছিল। যদিও সাকিবের টেস্ট খেলতে না চাওয়ার বিষয়টি অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেছিলেন। অনেকে এমন কথাও বলেছিলেন যে, আইপিএলে খেলার জন্যই নাকি তিনি নিজের শরীরকে বিশ্রাম দেয়ার জন্য দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে চান।

নিজের অবস্থান পরিস্কার করতেই সাকিব সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে না চাওয়ার বিষয়ে বলেছিলেন, সব থেকে বড় কারণ হচ্ছে আমি মনে করি আমার আরও বেশ অনেকদিন খেলা বাকি আছে। এবং আমি যদি ওটা খেলতে চাই এবং ভালোভাবে খেলতে চাই, তাহলে এই বিশ্রামটা আমার জরুরি। আমি চাইলেই খেলতে পারি। কথা হচ্ছে, আপনারা কি চান যে আমি আরও ৫-৬ বছর খেলি নাকি ১-২ বছর? নির্ভর করছে সেটার ওপর। আমি যেটা অনুভব করি, এভাবে খেলতে থাকলে ১-২ বছরের বেশি খেলতে পারবো না। ওইভাবে খেলার থেকে না খেলা আমার কাছে ভালো। যতদিন খেলবো, ততদিন যেন ভালোভাবে খেলতে পারি। সেটিই লক্ষ্য আমার। সেই কারণেই এই বিরতিটা পেলে আমি আমার তরতাজা হয়ে, মানসিকভাবে,শারীরিকভাবে যতটা না, তার চেয়ে বেশি মানসিকভাবে চাঙা হয়ে ফিরলে হয়তো পরের পাঁচ বছর আমার টেনশন ছাড়া খেলা সম্ভব হবে। যেটা আমি মনে করি বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি-দুটি ম্যাচ বা একটি-দুটি মাস না খেলা থেকে।  

সাকিবের টেস্ট খেলতে চান না বলে বোর্ড সভাপতি যে মন্তব্য প্রদান করেছেন তা কতটুকু সত্যি? দুই বছর আগের ওই সংবাদ সম্মেলনে সাকিবকে প্রশ্ন করা হয়েছিল টেস্টে ফিরবেন তো ভবিষ্যতে? তার উত্তর ছিল- এমন তো নয় যে আমি আর ক্রিকেটই খেলছি না। অবশ্যই খেলবো। কেন খেলবো না! আমার ইচ্ছা আছে, সবার পরে টেস্ট থেকে অবসর নেবো। তার আগে টি-টুয়েন্টি ও ওয়ানডে থেকে অবসর নেবো। সবার শেষে টেস্ট থেকে। কিন্তু আমার মনের কথা সবসময় সবাইকে বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না। আমার ভেতরে কী আছে, আমি জানি এবং লোকে যেমন সচেতন, আমিও সচেতন যে কী করলে ভালো হয়, কী করা যায়। আমি ওইভাবেই চেষ্টা করবো। গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে যে, আমার কাছে মনে হয় স্রেফ খেলার জন্য ২-১ বছর খেলার থেকে ৫ বছর মন দিয়ে খেলা বেশি জরুরি।

আরআইএস 

আরও সংবাদ