• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০১৯, ১১:৩৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৭, ২০১৯, ১২:২৩ পিএম

মালিবাগে পুলিশ ভ্যানে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে আইএস

মালিবাগে পুলিশ ভ্যানে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে আইএস
সাইট ইনটেল গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে মালিবাগে পুলিশ ভ্যানে বিস্ফোরণের দায় স্বীকারের কথা জানিয়ে টুইট - ইন্টারনেট

রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের একটি গাড়ির কাছে বিস্ফোরণের ঘটনার দায় স্বীকার করেছে কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস)। রোববার (২৬ মে) রাতে ওই বিস্ফোরণে পুলিশের নারী এএসআই রাশেদা বেগম ও একজন রিকশাচালক আহত হয়েছেন। জঙ্গি সংগঠন আইএসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, আইএস ওই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।

টুইটারে সাইট ইনটেল গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে এ দায় স্বীকারের কথা জানিয়ে টুইট করা হয়েছে।

মতিঝিল থানার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শিবলি নোমান জানান, মালিবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের একটি গাড়ির কাছে রাত ৯টার দিকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তখন কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক বিভাগের নারী এএসআই পায়ে এবং একজন রিকশাচালক মাথায় আঘাত পান। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে বোমা বিষ্ফোরণে আহত পুলিশের নারী এএসআই রাশেদা বেগম, (ডানে) ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশের গাড়ি - ছবি : ইন্টারনেট

পুলিশ জানায়, এ সময় পুলিশের ওই গাড়িতে আগুন ধরে যায়। পরে কাছের একটি পেট্রোল পাম্প থেকে অগ্নিনির্বাপণের সরঞ্জাম এনে আগুন নেভানো হয়।

গাড়িচালক কনস্টেবল শফিক বলেন, ফ্লাইওভারের ওপর থেকে কে বা কারা কী যেন ছুঁড়ে মারে। এতে মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায়। এসময় আশপাশের দালানের কাঁচও ভেঙে গেছে।

যেখানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, এর পাশেই রয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বিশেষ শাখার কার্যালয় (এসবি) প্রধান কার্যালয়। 

এর আগে ২৯ এপ্রিল রাতে গুলিস্তানে একটি মার্কেটের সামনে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত বোমার আঘাতে ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল ইসলাম ও লিটন গুরুতর আহত হন। এছাড়া আশিক নামে কমিউনিটি পুলিশের এক সদস্যও আহত হন। ঘটনার পর চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষজন আতঙ্কে দৌড়াতে শুরু করে। আহত অবস্থায় ২ পুলিশ সদস্যসহ ৩ জনকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজারবাগ, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ জনের মধ্যে নজরুল ইসলামের মাথায় এবং অন্য দুজনের শরীরে বোমার আঘাত লাগে। 

গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করেছে বলে খবর প্রকাশ করে জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে পরিচিত ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স। হামলা চালানোর ৫ ঘণ্টা পর আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে জানানো হয় সাইট ইন্টেলিজেন্সের পক্ষ থেকে। 

সিটিটিসির গোয়েন্দারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তারা তদন্ত শুরু করেছে। জানার চেষ্টা করছে- পুলিশের ওপর হামলা জঙ্গিরা করেছে কি না? নাকি আইএসের দোহাই দিয়ে ভিন্ন কোনো সুবিধা নেয়ার চেষ্টা। এ ঘটনায় পল্টন থানায় বিস্ফোরক আইন ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

পল্টন থানার ওসি মো. মাহমুদুল হক জানান, গুলিস্তানে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পল্টন থানার সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এস আই ওবাইদুর রহমান বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা, বোমা হামলা চালিয়ে জখম করার ঘটনা উল্লেখ করে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেছেন (মামলা নং ৫৩)। মামলায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। এ ঘটনায় হামলাকারী কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি।

এদিকে পুলিশের গাড়িতে এবং সদস্যের ওপর হামলায় ব্যবহৃত বোমা বেশ শক্তিশালী ছিল বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, গুলিস্তানে বিস্ফোরিত ককটেলটি কোনো সাধারণ ককটেল নয়, অনেক শক্তিশালী। এর সঙ্গে যে-ই জড়িত থাকুক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, উগ্রবাদ ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো মহল উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এই কাজ করছে কি না- তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইএসের দায় স্বীকারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত রয়েছে কি না- সেটিও দেখা হচ্ছে।

আইএস এই ঘটনার দায় স্বীকার করে পোস্ট দেয়ার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কাউন্টার টেররিজম বিস্ফোরণের ধরন, আহত হওয়ার ধরনসহ প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। ঘটনাটি আদৌ জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কি না, নাকি সাধারণ অপরাধীরা এটি করেছে, অথবা তৃতীয় কোনো মহল এটি করতে পারে, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এ ঘটনার পর থেকে ট্রাফিক পুলিশের নিরাপত্তা বাড়ানোর কাজ চলছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, সারা বিশ্বে বৈশ্বিক যে উগ্রবাদের প্রভাব আছে, বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তবে সংঘবদ্ধ বা বড় ধরনের নাশকতা করার ক্ষমতা তাদের নেই। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার পর তাদের বিধ্বস্ত করা হয়েছে। কখনো কখনো তারা বিচ্ছিন্নভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর অপচেষ্টা করে, সেগুলো আমরা নজরদারিতে রাখছি। জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য, দেশের মানুষ রক্ষার জন্য যেকোনো নৈরাজ্য-উগ্রবাদ দমনের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এফসি