• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১, ০৪:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১, ০২:১৪ পিএম

পুরোনো জাদুঘরের শহর সেন্ট্রেনড্রে

পুরোনো জাদুঘরের শহর সেন্ট্রেনড্রে

মোটামুটি ইউরোপের সব দেশে পর্যটনের জন্য উত্তম সময় হচ্ছে গ্রীষ্মকাল। তবে আবহাওয়া ভ্রমণের উপযোগী হলে যেকোনো সময়ে দূরে বা আশপাশের এলাকা ঘুরে আসা যেতে পারে। শীতের সময়ে ভ্রমণের বিশেষ আনন্দ আছে, কিন্তু তার জন্য থাকা চাই প্রচণ্ড মনোবল আর ইচ্ছাশক্তি। সেই সাথে শীতের সময়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে পোশাকের বিষয়ে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। হাঙ্গেরিতে এখন নিয়মিতভাবে তুষারপাত হচ্ছে। এই সময়ে কেউ যদি সেন্ট্রেনড্রে যেতে চান, তাদের কিছু বিষয়ে খোঁজখবর করে যাওয়াই ভালো। বিশেষ করে ভ্রমণের দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস মাথায় রেখে ঘর থেকে বের হওয়া উচিত।

 

শহর পরিচিতি

সেন্ট্রেনড্রে হচ্ছে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট এবং পিলিস-ভিশেগ্রিড পর্বতমালার মাঝামাঝি পেস্ট কাউন্টির একটি নদীতীরে অবস্থিত। এই শহরটির নানা চত্বরে অনেকগুলো বেশ পুরোনো জাদুঘর রয়েছে। বলা হয়ে থাকে শহরটি ওপেন-এয়ার এথনোগ্রাফিক জাদুঘর এবং শিল্পী ও মানুষের ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন ধরনের গ্যালারির জন্য বেশ পরিচিত। 

সেন্ট্রেনড্র এলাকার প্রবেশপথে লেখক

সেন্ট্রেনড্রে শব্দটির ইংরেজি শব্দ হচ্ছে Szentendre। এই শব্দটি লিখে গুগুলে খোঁজ করলে সেন্ট্রেনড্রের অনেকগুলো স্থানীয় এবং বিদেশী শব্দের দেখা পাওয়া যাবে। হাঙ্গেরির প্রতিবেশী দেশসমূহে সেন্ট্রেন্ড্রে শহরটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলায় সমার্থক শব্দ হিসেবে সেন্ট্রেনড্রে পাওয়া যায়। আবার “স” এর পরিবর্তে কেউ কেউ “জ” ব্যবহার করে থাকেন। হাঙ্গেরিতে মূল ইংরেজি শব্দের সাথে “জেড” ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। যেমন ইংরেজি Bus শব্দটিকে তারা লিখে Busz হিসেবে। উচ্চারণে তখন বাস হয়ে যায় বুজ! তাই সেন্ট্রেনড্রেকে জেন্ট্রেনড্রে লিখলে অবাক হবার কিছু নাই।

সেন্ট্রেনড্রের ছোট শহরের আয়তন প্রায় ৪৪ বর্গকিলোমিটার বা প্রায় ১৭ বর্গমাইল। এই নির্দিষ্ট আয়নের শহরে মোটা জনসংখ্যা প্রায় ২৬ হাজারের ওপরে। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯২ ভাগ হচ্ছে হাঙ্গেরীয়। সেই সাথে জার্মান, স্লোভাক, রোমান এবং সার্বিয়ার জনগোষ্ঠী রয়েছে। একই সাথে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ ভাগ হচ্ছেন রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী। পাশাপাশি এই শহরে ক্যালভিনিস্ট, লুথারিয়ান এবং গ্রিক ক্যাথলিকসহ অন্যান্য ধর্মের লোকজন বসবাস করেন।

এই শহরকে এক কথায় জাদুঘর এবং গ্যালারির শহর বললে ভুল হয় না। ছোট আয়নের এই শহরে ১০টি জাদুঘর রয়েছে। মোট গ্যালারী আছে ৬টি। জাদুঘর এবং গ্যালারিকেন্দ্রিক সংস্কৃতির অবদান হিসেবে এই শহর জন্ম নিয়েছে হাঙ্গেরির কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তি। তাদের মধ্যে আছেন হাঙ্গেরি ছাড়াও সার্বিয়ার ঔপন্যাসিক এবং কবি, ভাস্কর ও চিত্রশিলী। 

রেল থেকে নেমে পায়ে হাঁটার পথে সেন্ট্রেনড্রে পৌছানো যায়। এই শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ করলে বেশ সাজানো বাড়িঘর দেখতে পাবেন। কয়েকশ বছরের পুরোনো বাড়িঘরের আশপাশ বেশ পরিষ্কার-পরিছন্ন। সেই সব বাড়িঘরের কোনটা যে জাদুঘর আর কোনটা যে মানুষের বসত বাড়ি, নামফলক না দেখলে বুঝে ওঠা কঠিন।

সেন্ট্রনড্রে শহরের ডান দিকে তাকালে নদীর দেখা পাবেন। ছোট ফেরি পার হয়ে শহরের পশ্চিমে গেলে ঘন বন পথের দেখাও পাবেন। প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর ফেরি পাওয়া যায়। স্থানীয় মানুষ ছাড়া অন্যদের কাছ থেকে হাঙ্গেরির মুদ্রা ২৫০ ফরিন্ট ফেরি পারাপারের ভাড়া আদায় করা হয়।

যারা ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে সেন্ট্রেনড্রে যাবার পরিকল্পনা করছেন, তাদেরকে হাত মোজা অবশ্যই সঙ্গে নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। সেই সাথে অতিরিক্ত গরম কাপড়ের কোন বিকল্প নাই।

 

যেভাবে যাবেন

পুরো হাঙ্গেরিতে গণপরিবহন ব্যবস্থা অসাধারণ। বিশেষ করে শহরের আশপাশের এলাকাসূমহে ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রতি ঘন্টায় বাস বা রেল সেবা পাওয়া যায়। ভ্রমণের খরচও হাতের লাগালে। সেন্ট্রেনড্রে শহরে যেতে হলে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট থেকে মেট্রো-২ পথে আপনি প্রথমে ব্যাথিনি টার (Batthyány tér) এলাকায় যাবেন। সেখান থেকে H5 রেলে চড়ে সেন্ট্রেনড্রের জন্য মোটামুটি ৩০-৩৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। আপনার কাছে যদি শিক্ষার্থী হিসেবে বুদাপেস্টের মাসিক ভ্রমণ পাস থাকে তাহলে জনপ্রতি টিকিটের মূল্য নেবে হাঙ্গেরির মুদ্রায় মাত্র ১৫৫ ফরিন্ট। এ ছাড়া ৩৫০ ফরিন্টের একক টিকিট কেটেও আপনি সেন্ট্রেনড্রে ভ্রমণ করতে পারেন। এ ছাড়া রেলের বিকল্প হিসেবে কেউ চাইলে বাস যোগে এই শহরে বেড়াতে যেতে পারেন।

লেখক: পিএইচডি গবেষক, কর্ভিনাস ইউনিভার্সিটি অব বুদাপেস্ট, হাঙ্গেরি।