• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২০, ২০২১, ০৪:৩৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২১, ২০২১, ০২:১৬ পিএম

ছবির মতোই সুন্দর ‍‍‘পুতুল গ্রাম‍‍’

ছবির মতোই সুন্দর ‍‍‘পুতুল গ্রাম‍‍’

ছোট্ট শিশুরা পুতুল কিনে বাড়িতে নিয়ে আসে। শখের পুতুলকে কোলে করে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। রাতেও পাশে রেখেই ঘুমিয়ে পড়ে। প্রায় সবার বাড়িতেই ছোট্ট শিশু থাকলে এই চিত্র দেখা যায়। কিন্তু যদি একটি পুরো গ্রাম পুতুলের সঙ্গে বাস করে, তবে ওই চিত্রটা কেমন হবে বলুন তো! কোনো গল্প নয়, এমন একটি গ্রাম সত্যি রয়েছে।

গ্রামটি হচ্ছে জাপানের নাগোরো। দেখতে ছবির মতোই সুন্দর। কেননা, এর পুরোটা জুড়েই এখন পুতুলদের দখলে। তাই একে ‘পুতুল গ্রাম’ও বলা হয়। একসময় তিন শতাধিক গ্রামবাসী এখানে থাকতেন। কিন্তু এখন বসবাসরত মানুষের সংখ্যা মাত্র ২৫-৩০। যাদের অনেকেই মধ্যবয়সী বা বয়স্ক। এই গ্রামে সর্বশেষ শিশুর জন্ম হয় প্রায় ১৯ বছর আগে।

১৯৫০-৬০ সাল নাগোরো গ্রামে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এরপরই পানিরশূন্যতা দেখা দেয়। একে একে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে যান অন্য শহরে। যারা বসবাস করতেন তাদেরও অনেকে মারা গিয়েছেন।

৬৮ বছর বয়সী সুকিমি আইয়ানোর এই গ্রামের অধিবাসী। পড়াশোনা করেছেন নিকটবর্তী শহর ওসাকায়। বিয়ে, সংসার, ছেলেমেয়ে নিয়ে তার দিন ভালোই কাটছিল। ২০০২ সালে বাবার অসুস্থতার খবরে সুকিমি গ্রামে ফিরেন। ফিরে দেখেন গ্রামের পরিচিত প্রায় অনেকেই মারা গেছেন। প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম। অনেকেই ছোট্ট এই গ্রামটি ছেড়ে চলে গেছেন অন্য় শহরে। কিন্তু মায়ার টানে সুকিমি থেকে গেলেন এই গ্রামেই।

সুকিমির বাবা বাগানে মূলা আর মটরশুঁটির চাষ করতেন। কিন্তু কোনোভাবেই গাছগুলো বড় হতে দিচ্ছিল না পাখিরা। জনশূন্য গ্রামে পাখিরা সুযোগ পেলেই গাছের চারা খেয়ে নিত। সুকিমি অনেকে ভেবে এর সমাধান খুঁজে পান। তার বাবার মুখের আদলে একটি কাকতাড়ুয়া বানিয়ে ওই বাগানে দিয়ে রাখেন। আর সেই পুতুলকে মানুষ ভেবে পাখিরাও বাগানে আসে না। এ ঘটনার পরই সুকিমি নতুন করে চিন্তা শুরু করেন। তিনি প্রাণহীন গ্রামের চাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেন। 

২০০৩ সালের কথা। মানুষশূন্য গ্রামের জন্য় তিনি বিভিন্ন মানুষের চেহারার আদলে শুরু করেন পুতুল বানানো। পরিচিত প্রতিবেশীদের মুখের আদলে বানান আরও কিছু পুতুল। পুতুলগুলো সাজিয়ে রাখলেন প্রতিবেশীদের বাড়ির সামনেই। দেখে মনে হচ্ছে একে অন্যের সঙ্গে খোশগল্পে মেতেছেন। বিষয়টি বেশ উপভোগ করলেন সুকিমি। একে একে হারানো মানুষগুলোর আদলে পুতুল বানানো শুরু করেন তিনি। পুরো গ্রামে ছড়িয়ে রাখেন এই পুতুলগুলো। এরপরই এই গ্রামের নাম হয়ে যায় পুতুল গ্রাম।

জাপানের এই গ্রামটি দেখতে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। মুগ্ধ হন মানুষের আদলে তৈরি করা এই পুতুলগুলো দেখে। মাঠে কৃষিকাজে, নদীর পাড়ে,  গাছের ছায়ায় বসে থাকা, বিবাহিত দম্পতি, ছোট্ট সন্তান আর বাবার মাছ ধরা, গায়ে কোট পরা ও মাথায় টুপি পরে গল্প করছেন, এমন অনেক দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে এখন ওই গ্রামটিতে। মানুষ রূপে পুতুলগুলো দেখতেও একদম বাস্তব মনে হচ্ছে।

গ্রামের স্কুলের জন্যও সুকিমি পুতুল বানালেন। ছাত্রছাত্রীদের আদলে পুতুলগুলো ক্লাসরুমের বেঞ্চে বসে রয়েছেন। সামনে রয়েছে বই, খাতা। সেখানে আছেন শিক্ষক, বাবা-মাসহ অন্য় চরিত্রগুলোও।

গ্রামে একটি কমিউনিটি সেন্টারও রয়েছে। সেখানেও পুতুল দিয়ে সাজিয়েছেন সুকিমি। বর-বধূ বেশে পুতুলগুলোর পরনে রয়েছে ওয়েস্টার্ন আর জাপানিজ পোশাক। স্বজনদেরও রেখেছেন সঙ্গে। ৬টি ছোট বালকও রয়েছে সেখানে।

দর্শনার্থীরা সেখানে গিয়ে পুতুল বানানোর দেখার সুযোগ পান। কাঠ, তুলা, নমনীয় কাপড়, বোতাম, তার ও কাগজ দিয়ে বানানো হয়েছে এই পুতুলগুলো। এভাবেই মানুষশূন্য গ্রামে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে এই পুতুলগুলো।

ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামটি এখনও বসবাসের তেমন যোগ্য হয়ে ওঠেনি। পুরো গ্রামে কোনো দোকানপাট, হাসপাতাল খুঁজে পাওয়া যাবে না। পথের অবস্থাও বেশ খারাপ। এমন অবস্থায় দর্শনার্থীরাও কৌতূহলে বশে সেখানে গিয়ে মুগ্ধ তো হচ্ছেন, তবে বারবার যাওয়ার আগ্রহটা হারিয়ে ফেলছেন।