• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০১৯, ০৮:৫১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৯, ২০১৯, ০৮:৫১ পিএম

৮ দিনের মাথায় ধর্ষণ মামলার আসামিকে জামিন, এলাকায় অসন্তোষ

৮ দিনের মাথায় ধর্ষণ মামলার আসামিকে জামিন, এলাকায় অসন্তোষ

শরীয়তপুরে এক ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি মেয়রপুত্র মাসুদ বেপারীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। ধর্ষণের মাত্র ৮ দিনের মাথায় তাকে জামিন দেওয়া হলো। আসামি জামিনের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ধর্ষিতার পরিবার। একজন নারী বিচারক এমন একটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার আসামিকে জামিন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকার সুশীল সমাজ। জেলা মহিলা সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে বুধবার তারা এ বিষয়ে জেলা শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে।

গত ২৯ জুন বিকেলে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ বেপারীর বিবাহিত ছেলে মাসুদ বেপারী হতদরিদ্র প্রান্তিক কৃষকের কলেজপড়ুয়া এক ছাত্রীকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। নিজের বুদ্ধি আর সাহসিকতার জোরে মেয়েটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

বিষয়টি রাত ১০টার দিকে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতে পারলে মাসুদ বেপারীকে রাত আড়াইটার দিকে আটক করা হয়। ৩০ জুন দুপুরে ওই মেয়েটি ও তার বাবা জাজিরা থানায় হাজির হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ১ জুলাই ধর্ষক মাসুদকে আদালতের মাধ্যমে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

৭ জুলাই (রোববার) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাসুদের জামিন প্রার্থনা করেন তার আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষ মাসুদের জামিনের বিরোধিতা করে ৭ দিনের রিমান্ড দাবি করে। কিন্তু আদালত মাসুদের জামিন নামঞ্জুর করেন এবং রিমান্ড আবেদটিও নামঞ্জুর করেন। ৮ জুলাই (সোমবার) মাসুদের আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পুনরায় তার জামিনের আবেদন করলে একজন নারী বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ) মরিয়ম মুন মুঞ্জুরী ধর্ষক মাসুদকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন।

ধর্ষক মাসুদ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ধর্ষিতা মেয়েটির পরিবার এখন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন প্রভাবশালী লোকদের মাধ্যমে ওই পরিবারকে ভয়-ভীতি এবং চাপ দেওয়া হচ্ছে মামলা তুলে নিতে।

মেয়েটির হতদরিদ্র প্রান্তিক কৃষক পিতা বলেন, ‘আমি আমার মেয়ের সর্বনাশকারীর ফাঁসি চাই। আমার বাড়িতে রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন লোক এসে মামলা তুলে নিতে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। তারা বলছে, মাসুদ জেল থেকে বেরিয়ে গেছে। এই মামলায় মাসুদের কিছুই হবে না। ভালো থাকতে চাইলে কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে মামলা তুলে নাও।’

জাজিরা উপজেলার মূলনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘মেয়েটিকে যেদিন ধর্ষণ করা হয়েছিল, সেদিনও মেয়েটির বাবা আমার কাছে ফোন করে এর বিচার চেয়েছিলেন। আমি মেয়েটি ও তার বাবাকে থানায় নিয়ে মামলা করিয়েছিলাম। গতকাল আসামির জামিন হওয়ার পরও মেয়েটির দরিদ্র বাবা আমাকে ফোন করে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছিলেন। আমি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে এ ধরনের অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

শরীয়তপুর জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট রওশন আরা বলেন, ‘একজন নারী বিচারক কীভাবে এমন একটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার আসামিকে জামিন প্রদান করেন তা জানার পরে আমি স্তম্ভিত হয়েছি। আমরা আগামীকাল বুধবার (১০ জুলাই) ধর্ষকের যথাযথ বিচার দাবি ও পুনরায় গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে জেলা শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করব।’

শরীয়তপুর জেলা জজকোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট মির্জা হযরত আলী বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপক্ষ ৭ তারিখে আসামির জামিনের বিরোধিতা করেছিলাম এবং তাকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদনও করেছিলাম। সেদিন আদালত তার জামিন এবং রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরের দিন জজকোর্ট থেকে আসামি জামিন পেয়েছে।’

এনআই

আরও পড়ুন