• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০১৯, ০৬:২৩ পিএম

রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভেষজ ও ব্যায়াম 

রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভেষজ ও ব্যায়াম 
প্রতীকী ছবি

 

কথায় বলে, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। রোগ হলে সুখ চলে যায়। অসুখ যাতে না হয়, কিংবা হলেও কীভাবে ভালো হওয়া যায় এবং ভালো থাকা যায়, তা জানা ও মেনে চলা খুবই দরকারী। স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম ভালো করে জানার আগে একটা কথা মনে রাখতে হবে, শরীর ও মন একসঙ্গে জড়িত। কাজেই দুটোকেই গুরুত্ব দিতে হবে।

সুস্থ থাকার জন্য ইম্যুনিটি বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অক্ষুণœ থাকাটা খুবই জরুরি। এটা ঠিক না থাকলে সহজেই যে কোনো রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এমনকি প্রাণঘাতী কোনো রোগ সহজেই  আপনাকে কাবু করে ফেলতে পারে। মূলত ক্লান্তি, অবসাদ, দুশ্চিন্তা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, সঠিক খাবার গ্রহণ না করা ইত্যাদি নানা কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিশ্চিত করা এবং সম্ভব হলে বাড়িয়ে তোলা সবারই একান্ত কর্তব্য। এমন কিছু খাবার রয়েছে, যা নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। জেনে নেই এমন কিছু খাবারের কথা Ñ

মধু : মধুর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। মধু একাধারে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, দ্রুত ক্ষত সারাতে উপকারী এবং কিছু কিছু অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় কার্যকর। সাধারণ ফ্লু ও হালকা সর্দি-কাশিতে মধু ওষুধের মতো কাজ করে। এছাড়া মধু শক্তিবর্ধক। এটা অ্যাসিড রিফ্লাক্সে সাহায্য করে এবং যৌন স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। নিয়মিত মধু খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

দই : দইতে প্রচুর উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এগুলো আমাদের পাকস্থলী ও খাদ্যনালীকে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু থেকে মুক্ত রাখে। এজন্য দইকে প্রোবায়োটিক ফুডও বলা হয়। দই ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। গবেষণায় বলছে, দৈনিক ২০০ গ্রাম দই খেলে শরীরে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ে। যার ফলে রোগে ভোগার ঝুঁঁকি ৩৩ শতাংশ কমে যায়।

রসুন : রসুনে প্রচুর পরিমাণে অ্যালিসিন থাকে, যা ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। এ ছাড়া অরগানো-সালফার সমৃদ্ধ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফাইটোক্যামিকেলস প্রচুর পরিমাণে থাকার কারণে রসুন ফ্রি-রেডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং কোষঝিল্লি নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। প্রতিদিন সকালে এক মুঠ মুড়ির সঙ্গে দুই কোয়া রসুন খাওয়ার অভ্যাস করলে চোখ ভালো থাকবে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে, কোলেস্টেরল কমবে। পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং শরীর সুস্থ ও সবল থাকবে। এছাড়া রসুন টিউমারের বিরুদ্ধেও কাজ করতে পারে।

আদা : আদিকাল থেকেই আমাদের দেশে পেট খারাপ, মাইগ্রেন, ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি ও খুসখুসে কাশির চিকিৎসায় আদা ব্যবহার হয়ে আসছে। আদা ব্যথানাশক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। আধুনিক গবেষণা বলছে, আদায় প্রচুর পরিমাণে জিঞ্জারলস থাকে, যা ওভারিয়ান ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে পারে। নিয়মিত আদা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

কালিজিরা : কালিজিরাকে বলা হয় মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ওষুধ। আধুনিক গবেষণায়ও এ কথার কোনো ব্যতিক্রম দেখা যায় না। কালিজিরা একাধারে স্থূলতা, ক্যানসার ও হৃদরোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটা কার্ডিও-প্রোটেকটিভ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। কালিজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়তা করে। এটা সাধারণ সর্দি-কাশি, নাক বন্ধ, গলা ব্যথা, জ্বর; যে কোনো ধরনের শারীরিক দুর্বলতা ও পেটের গোলমালে ভালো কাজ করে। কালিজিরার তেল খুবই উপকারী হার্বাল ওষুধ। কালিজিরা এতটাই উপকারী যে, প্রাচীনকালের চিকিৎসকরা কোনো রোগের চিকিৎসা করতে না পারলে রোগীকে কালিজিরা খাইয়ে দিতেন।


শরীরচর্চা বা ব্যায়াম

খাদ্য ও পানীয় গ্রহণে বাছবিচার ছাড়াও শরীর ও মনকে সচল রাখার জন্য দরকার উপযুক্ত ব্যায়াম। ছোটদের বেলায় ব্যায়ামের গুরুত্ব আরও বেশী এ জন্য যে, এর মাধ্যমে তাদের শরীর গঠন ও ব্যক্তিত্বেরও বিকাশ ঘটে। ব্যায়ামের অনেক পদ্ধতি আছে। হাঁটা, দৌড়ঝাঁপ এবং এগুলোর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রকম খেলা এবং সাঁতার হচ্ছে এক ধরনের ব্যায়াম। আবার সাইকেল কিংবা নানা যন্ত্রপাতির সাহায্যে করা হয় আরেক ধরনের ব্যায়াম।

সব ব্যায়ামেই উপকার হয়। তবে বয়স, শারীরিক অবস্থানুযায়ী প্রয়োজন, পরিবেশগত সুবিধা, সময়ের সীমাবদ্ধতা ও মানসিক প্রবণতার কথা ভেবে ব্যায়াম বেছে নেয়া ভালো। কিন্তু কিছু ব্যায়াম আছে যা একেবারে শয্যাশায়ী বা চলাফেরায় অক্ষম না হলে সবার পক্ষেই করা সম্ভব। 

আমাদের উপমহাদেশে উদ্ভাবিত যোগ ব্যায়াম আজ সারা পৃথিবীতে সমাদৃত, অথচ আমরা অনেকে এ বিষয়ে অজ্ঞ। এ ব্যায়ামের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিভিন্ন দেহভঙ্গিমা, যাকে আসন বলা হয়। এক এক আসনে দেহে এক একভাবে চাপ পড়ে, যা দেহের এক এক অংশের উপকার সাধন করে। শরীরের বিভিন্ন অংশে পালাক্রমে চাপ সৃষ্টি এবং তা শিথিল করার মাধ্যমে এ ব্যায়াম সম্পন্ন হয়। এর সঙ্গে অন্যান্য ব্যায়াম চালিয়ে গেলে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। যেমনÑ হাঁটা। প্রতিদিন কমপক্ষে আধঘণ্টা জোরে জোরে হাঁটলে শরীর নমনীয় থাকে ও মগজে প্রচুর অক্সিজেন ঢোকে বলে উদ্বেগ বা টেনশন কমে।

উপযুক্ত ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস এবং প্রফুল্ল মনই হচ্ছে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। আসলে আমাদের জীবনে এত দুশ্চিন্তা বা টেনশন থাকে যে, আমরা হাসিখুশি থাকতে পারি না। সুতরাং ভালোভাবে বাঁচতে চাইলে মনকে প্রফুল্ল রাখতে হবে। এজন্য ভালো চিন্তা ও ভালো কাজের কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে নিজেকে জড়াতে হবে কোনো না কোনো সৃজনশীল কাজের সঙ্গে।


জিএম