• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১, ০৭:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১, ০৩:৩৭ পিএম

‘সৎ লেখকদের লেখালেখির পরিবেশটাই নেই’

‘সৎ লেখকদের লেখালেখির পরিবেশটাই নেই’

হামিদ কায়সার। বাংলা সাহিত্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ কথাশিল্পী। জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। কর্মজীবন শুরু করেন সাপ্তাহিক ‘সচিত্র সন্ধানী’র মাধ্যমে। কাজ করেছেন দেশের শীর্ষ বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোতে। স্বপ্ন ছিল কবি হওয়ার। কিন্তু তা আর হয়নি। একুশ বছর বয়সে আকস্মিকভাবেই লিখে ফেলেন একটি গল্প। সেই থেকে ছোটগল্পের জগতে বিচরণ। গল্পের সঙ্গে সঙ্গে সমান্তরালভাবে লিখেছেন উপন্যাস। টেলিভিশনের জন্য নাটকও লিখেছেন একসময়। থেমে নেই তাঁর কলম। সাহিত্যের নানা বিষয়ে চলছে অবিরাম লেখালেখি। দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে সেসব লেখা। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে বিশটিরও অধিক বই। সম্প্রতি খ্যাতিমান এই কথাশিল্পীর মুখোমুখি হয়েছেন গল্পকার ও গবেষক ফয়সাল আহমেদ। 


ফয়সাল আহমেদ: আপনার জন্ম ঢাকার লালবাগে, শৈশব, কৈশোর কেটেছে এ-শহরেই। লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সপরিবারে বসবাস করছেন ঢাকাতে। আবার আপনার পৈত্রিক ভিটাও ঢাকার খুব কাছেই। আপনার জীবনে ঢাকা ওতোপ্রাতভাবে জড়িয়ে আছে .. ..।
হামিদ কায়সার:
হ্যাঁ, বছর দুই-তিন আগে আমার এক শুভানুধ্যায়ী কবি ও কথাশিল্পী আবু তাহের সরফরাজের অনুরোধে ওর সম্পাদিত অনলাইন পোর্টাল ছাড়পত্র-এ আমার ভ্রমণিয়া দিন নামের এক আত্মজৈবনিক লেখা লিখতে গিয়ে টের পেয়েছি, ঢাকার মর্মলোকে কী গভীরভাবেই না বাঁধা ছিলাম, বিশেষ করে ও লেখাটায় আমার শৈশব জীবন এসেছে। পরে, ৪১ উমেশ দত্ত রোড নামে একটি গল্প লিখলাম, গল্পটি পড়ে আমার অগ্রজতূল্য গল্পকার ফয়জুল ইসলাম বললেন যে, অপু, আপনি তো এটি উপন্যাসে রূপ দিতে পারেন। আমি দেখলাম, ব্যাপারটা দারুণ হবে। এক কিশোরের যুবক হওয়ার প্রেক্ষাপটের সঙ্গে নগর ঢাকার পরিণতি লাভেরও চিত্র আছে প্লটটিতে। আবার সূক্ষ্মভাবে দেশবিভাগের যন্ত্রণা মিশে গল্পটাকে মহাকালের ইশারায় বেঁধে রেখেছে। ও লেখাটায়ও হাত দেবো। আসলে ঢাকার লালবাগে আমার জন্ম হলেও শৈশব, কৈশোর কেটেছে গাজীপুরের জরুন গ্রামে, আর সে গ্রাম থেকে বছরব্যাপী নানা সময়ই আমাকে ঢাকার ওপর দিয়ে কেরানিগঞ্জ যেতে হতো নানাবাড়ি। সে অবসরেও ঢাকাকে দেখা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অবলোকন থেকে। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই ১৯৮৫ সালে, তখন থেকে ঢাকায়ই হয়ে উঠল হার্দভূমি।

ফয়সাল আহমেদ: বিশ-একুশ বছর বয়সে আপনি প্রথম গল্প লিখলেন, সেটি একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হলো....
হামিদ কায়সার:
আমার লেখালেখির প্রসঙ্গ এলে গল্প লেখার আগের পর্ব থেকেই শুরু করতে হবে। গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে পড়ার সময়, যেভাবেই হোক কবি হিসেবে নাম ছড়িয়েছিল। একদিন আমার এক বন্ধু মাহফুজুল হক বকুল আমাকে কবিতাসমেত নিয়ে গেলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-এ, কবি আবিদ আনোয়ারের কাছে। তাঁর `প্রতিবিম্বের মমি’ তখন বেরিয়ে গেছে। খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। তো, আবিদ ভাই আমার কবিতাগুলো পছন্দ করলেন। মাঝে মধ্যেই তাঁর কাছে উপস্থিত হই, আড্ডা দিই। একদিন আবিদ ভাই বললেন যে, আমি তো পাঁচ বছরের জন্য আমেরিকার মিসৌরি চলে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে চলো তোমাকে হাবীব ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। হাবীব ভাই মানে কবি আহসান হাবীব। তিনি তখন ‘দৈনিক বাংলা’র সাহিত্য সম্পাদক। তো, হাবীব ভাই কবিতা পছন্দ করে রাখলেন ঠিকই, শর্ত জুড়ে দিলেন, আর চারমাস পর তোমার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা। এখন ভালো করে পড়াশোনা করো। পরীক্ষা শেষ করে এখানে আসবে, তখন তোমার কবিতা ছাপব। কিন্তু দুর্ভাগ্য, পরীক্ষা দিয়েই বন্ধু এস কে ইনামুল বাশার মিন্টুর সঙ্গে চলে গিয়েছিলাম ঝিনেদা (ঝিনাইদহ), এক মাসের জন্য। সেখানেই একদিন টিভি নিউজে শোনলাম কবি আহসান হাবীব মারা গেছেন। আর ওদিকে তো কবি আবিদ আনোয়ার চলে গেছেন আমেরিকা। এবার কবিতা নিয়ে কী করব? এর মধ্যেই বাংলা বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। কবি হওয়ার স্বপ্নটা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। দৈনিক বাংলায় যাই কবি নাসির আহমেদের কাছে। অন্যান্য দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার অফিসগুলোতেও ঘুরঘুর করি। তো, এর মধ্যে এক দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক কবিতা ছাপানোর মুলো ঝুলিয়ে তার অফিসে প্রায়ই যেতে বাধ্য করেন। তার ওখানে প্রতি সপ্তাহেই যাওয়া হয়, একদিন তারই রূঢ় আচরণে বিধ্বস্ত হয়ে অন্যদিকে প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত অবস্থায় অবসন্নতার চূড়ান্তে পৌঁছে মতিঝিল থেকে পলাশি এসএম হলে হেঁটে যেতে যেতে আমার মনের ভেতর দিয়ে যে প্রচণ্ড রকমের প্রলয় কাণ্ড ঘটে গিয়েছিল, তারই প্রভাবে সে রাতে ডায়েরিতে লেখা হয়ে গেল প্রথম গল্প। তার আগে কখনো কোনো গল্প লিখব, এটা আমার মাথাতেই ছিল না। সে রাতে শুধু ডায়েরিতে নিজের কথাই লিখতে চেয়েছিলাম। পরদিন দেখি, অন্য এক মানুষের কথা, অন্য নাম, অন্য চরিত্র। কবি নাসির আহমেদ তখন ‘দৈনিক বাংলা’র সাহিত্য পৃষ্ঠায় আছেন কোনঠাসাভাবে। তার মাথার ওপর আরেকজন। নাসির ভাইয়ের হাতে দিয়ে আসলাম গল্পটা। এটা প্রকাশ পেয়েছিল এক বছর পর। কিন্তু তার আগেই তিন-তিনটে গল্প ছাপা হয়ে যায় সচিত্র সন্ধানীতে। যার জন্য আমি কথাশিল্পী হূমায়ূন মালিক এবং কথাশিল্পী সুশান্ত মজুমদারের কাছে চির-কৃতজ্ঞ। জীবনের দ্বিতীয় গল্পটা লিখে হূমায়ূন মালিক ভাইকে এসএ মহলে পাঠ করে শোনাতেই তিনি আমাকে সঙ্গে সঙ্গে নিজের উদ্যোগে সচিত্র সন্ধানীতে নিয়ে গিয়েছিলেন সুশান্ত মজুমদারের কাছে। সুশান্তদা পরের সপ্তাহেই ছাপিয়ে দিয়েছিলেন। এভাবে সাত-আট মাসের মধ্যে আরো দুটো গল্প চটজলটি ছেপে দেন সুশান্ত মজুমদার। তিনি এবং হূমায়ূন মালিক যদি আমার জীবনে না আসতেন, গল্পকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়াটা আমার জন্য এত সহজ হতো কিনা কে জানে!

ফয়সাল আহমেদ: লেখালেখিতে প্রবেশ, বিষয়টা কি খুব সহজ ছিল?
হামিদ কায়সার:
প্রকৃত প্রতিভাবান লেখকদের জন্য বোধ হয় তখন লেখালেখিতে প্রবেশ করাটা আজকের চেয়ে সহজ ছিল। আজ তো পুরো সমাজটাই মাওলানা-অধ্যুষিত। তখনো বেশিরভাগ মানুষ ধার্মিক ছিল, কিন্তু গোড়ামি বা ধর্মান্ধতা বা পাকিস্তানিপ্রেম এতটা চাগাড় দিয়ে ওঠেনি। কম্যুনিজমের প্রভাবে শ্রেণিবৈষম্য নিয়ে সচেতনতা বোধ ছিল, মানবিক মূল্যবোধ অটুট ছিল। সাহিত্য সম্পাদক বা সম্পাদকরা ভালো লেখার জন্য উন্মুখ থাকতেন, খোঁজতেন প্রকৃত লেখক। টাকাওয়ালা-ক্ষমতাওয়ালাদের পেছনে এতটা প্রকাশ্য বা এমন নোংরাভাবে ছুটতেন না। এখন তো লেখালেখির ক্ষেত্রটাই পালটে গেছে বা যাচ্ছে, অনলাইন বেইজড লেখালেখি হচ্ছে, ফেসবুক-কেন্দ্রিক লেখালেখি হচ্ছে, দৈনিক পত্রিকার সংখ্যাও বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে লেখালেখির মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। তীব্র কোলাহল, হইচই, চিৎকার, চেঁচামেচি। কেউ কারোর কথা শুনতে চাইছে না, জোর করে শোনাতে চাইছে, গেলাতেও। নীতিহীন বর্বরোচিত মানসিকতার জয়জয়কার। সংকীর্ণ স্বার্থে গ্রুপে গ্রুপে বিভাজন, আত্মপ্রেমে প্যাককাদা ঘাটা। কাজের চেয়ে খ্যাতি আর পুরস্কারের দিকে বেশি নজর। ফলে সাধারণ মানুষ থেকে বোদ্ধা পাঠকের কাছ থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষ বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছেন। সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বকধার্মিকদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এর জন্য আমি দেশের প্রগতিশীল সমাজকেই দায়ী করব। তারা নৈতিকতা হারিয়ে ফেলছেন বলেই দেশ বা সমাজ পেছনমুখী। এখন প্রকৃত সৎ লেখকদের লেখালেখির পরিবেশটাই নেই। কিছু কিছু প্রভাবশালী মিডিয়া হাউজও যেন সচেতনভাবে বাংলাদেশের সাহিত্যের গতিধারা ব্যাহত করতে চাইছে। এই যে ৬০০ শব্দে গল্প লেখো, ১২০০ শব্দে গল্প লেখো! এই ব্যাপারটা কী? কেন? এটা তো ছোটগল্প শিল্পটাকে ধ্বংস করার নীলনকশা ছাড়া আর কিছুই না, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সাহিত্যেরও বারোটা বাজানোর বন্দোবস্ত। এসব করোনাকালের অনেক আগ থেকেই চলছিল।

ফয়সাল আহমেদ: এই সময়ে কী লিখছেন?
হামিদ কায়সার:
এখন আমি করোনাকালীন পরিস্থিতি নিয়ে উপন্যাস লিখছি। আমি এক কাজ নিয়ে গভীরভাবে ডুবে থাকতে পারি না। এটা আমার দুর্বলতা। একই সঙ্গে দুই-তিনটা গল্প, একটা সুদীর্ঘ ভ্রমণকাহিনি, রশীদ করীমকে নিয়ে একটি সুদীর্ঘ স্মৃতিচারণামূলক লেখা লিখছি। এছাড়া কিছু ফরমায়েশি লেখার চাপ আছে। এ-বছর থেকে ফরমায়েশি লেখার ব্যাপারে কঠিন হবো। সম্পর্ক থাক বা না থাক, ফরমায়েশি লেখার বেলায় ভেবেচিন্তে না বলা শিখতে হবে। উপন্যাস সাহিত্যে আরো গভীরভাবে মগ্ন হওয়া প্রয়োজন।

ফয়সাল আহমেদ: সামনে বইমেলা, নতুন কী বই প্রকাশিত হচ্ছে এবার?
হামিদ কায়সার :
একটি গল্পের বই প্রকাশের সম্ভাবনা আছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপন্নতা এবং উজ্জীবন নিয়ে এই বইয়ের গল্পগুলো লেখা।

ফয়সাল আহমেদ: পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে এবার বইমেলা হচ্ছে, মেলা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
হামিদ কায়সার:
মেলা হচ্ছে এটা স্বস্তির ব্যাপার। তবে মেলাকে কেন্দ্র করে আমার অতটা উচ্ছ্বাস নেই। কারণ বইমেলায় মূলধারার সাহিত্যকে লাইমলাইটে আনা হয় না। যারা সাহিত্যকে ব্যবহার করে রাতারাতি খ্যাতিমান হয়ে যায়, সাহিত্যকে ব্যবসার লগ্নি হিসেবে ব্যবহার করে, তাদের মেলা হয়ে উঠেছে এই বইমেলা। প্রকাশকরা অবশ্যই ব্যবসা করবেন, না হয় তারা টিকে থাকবেন কীভাবে? কিন্তু ব্যবসার পাশাপাশি মূলধারার লেখককে সামনে তুলে ধরতে হবে। বইমেলা কতটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেল বাংলাদেশের সাহিত্যকে সেটাও ভাবতে হবে। এই মেলার আসল উদ্দেশ্য ছিল একুশের চেতনাকে ধারণ করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধি ঘটানো। কিন্তু তা কি হচ্ছে? এই বইমেলা তখনই সার্থক হয়ে উঠবে যখন, মেলায় একটি মানসম্মত বই নিয়ে আলোচনা হবে, বইটির লেখককে নিয়ে আলোচনা হবে। মেলায় কত টাকার বই বিক্রি হলো, তাতে মেলার সার্থকতা নয়।

ফয়সাল আহমেদ: লেখক-ই হবেন এমন সিদ্ধান্ত কখন নিলেন?
হামিদ কায়সার:
লেখকই হতে হবে, এমন সিদ্ধান্ত আমি কখনোই নিইনি। তবে লেখালেখিই যে আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন, এমন আবিষ্কার শৈশবেই বারবার অনুভব করেছি। তখন থেকেই লেখালেখিকে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চেয়েছি বেঁচে থাকার জন্য। বেঁচে থাকা মানে আয়রোজগার অর্থে বলছি না, আত্মিক, মানসিক ক্ষেত্রে মুমূর্ষু সত্তাকে অতিক্রমণের জন্য। দমবন্ধ পরিবেশ থেকে একটু শ্বাস ফেলার অবকাশ দেয় আমাকে এ লেখালেখি।

ফয়সাল আহমেদ: আমরা জানি, আপনি এখন আর চাকরি করছেন না। এই যে বিজ্ঞাপনী সংস্থার লক্ষ টাকার চাকরি ছেড়ে দিয়ে, পুরোপুরিভাবে লেখালেখিতে ডুব দিলেন, সেটা কি সঠিক সিদ্ধান্ত হলো?
হামিদ কায়সার:
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন লক্ষ টাকার চাকরিই ছিল ওটা। এখন হয়তো বেতন আরো বাড়তো। তবে আমি বিশ একুশ বছর চাকরি করেছি দেশের বড় বড় দুটি বিজ্ঞাপনী ফার্মে— আত্মিক সুখ অনুভব করিনি কখনো। আসলে জায়গাটা আমার মতো মানুষের জন্য নয়। যদি শিক্ষকতা পেশায় থাকতাম কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে, তাহলে হয়তো উপযুক্ত পড়াশোনা করার যেমন সুযোগ হতো, লেখালেখি আরো অনেক আগে থেকে ভালোভাবে চালিয়ে যেতে পারতাম। সকাল থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত ওরা আমাকে খাঁটিয়েছে, কখনো সারারাতও থাকতে হয়েছে। অমানবিকতার চূড়ান্ত করেছিল। আমার জীবনের সবচেয়ে উর্বরা সময়কে শুষে নিয়েছে, খেয়ে ফেলেছে। এখন আমি মুক্ত-স্বাধীনভাবে লিখতে পারছি। ভালোই করেছি চাকরি ছেড়ে দিয়ে। জীবনে টাকাই সব নয়, একটু নিজের মতো করে বেঁচে থাকতে পারাটা অমূল্য ব্যাপার। আমার ঘুমগুলোকে এখন বন্ধক দিতে হয় না মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কাছে, কর্পোরেটওয়ালারা নানাভাবেই আমাদের ভ্যালুজ বলেন, মূল্যবোধ বলেন— সেগুলোকে সুকৌশলে নষ্ট করে দিচ্ছে। একটা মেকি সমাজ তৈরি করছে।