• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১০, ২০২১, ০১:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১০, ২০২১, ০১:৪২ পিএম

পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে : ডা. আশীষ

পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে : ডা. আশীষ

ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী। ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, মহাখালী, ঢাকা। সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা ভেঙে মানুষের গ্রামের বাড়িতে ঈদ যাত্রা, করোনার নতুন ধরন, সমসাময়িক অবস্থা নিয়ে জাগরণ অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন তৌহিদ


জাগরণ : এক জেলা থেকে অন্য জেলা গণপরিবহন বন্ধ, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে, স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ হিসেবে বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী :
 স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। কারণ, করোনার এই অবস্থায় যে লকডাউনটা দেওয়া হয়েছিল এর কারণে একেবারে আমরা আকাশ-পাতাল একটা পরিবর্তন লক্ষ করেছি। রাতারাতি দিন-রাত ছব্বিশ ঘণ্টা কাজ করে যেভাবে নতুন নতুন আইসিইউ তৈরি করা হয়েছে, বেডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, বড় বড় হাসপাতাল তৈরি করেছে, সেখানে কিন্তু এখন কোভিড রোগীর শূন্যতা, রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। তার মানে কী? লকডাউনের কারণে এটার প্রভাব পড়েছে। অর্থাৎ যত বেশি মানুষের সমাগম বাড়বে ততবেশি করোনা ছড়াবে, এবং এতে ঝুঁকি বাড়বে। যেহেতু মানুষ দূরপাল্লায় যাচ্ছে, গণপরিবহন তো সবসময় আর নজরদারি করা যাবে না। প্রত্যকটা গাড়িতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়াও সম্ভব না। মানুষ তো সচেতন না ওভাবে। যদি মানুষ মাস্ক ঠিকমতো না-পরে, তাহলে ফ্যামিলি টু-ফ্যামেলি সংক্রমণ বাড়বে। গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম মৃত্যু ছিল ৪০-এর কোঠায়। ঈদের পর সংক্রমণ বেড়ে যাবে বলে আমার আশঙ্কা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন, “বেঁচে থাকলে তো আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা হবে, গ্রামের বাড়িতে না যাওয়াটাই ভালো।” যেহেতু মানুষ যাচ্ছে, যাবেই। আপনি-আমি তো কিছু করতে পারবো না। তাই আমি মনে করি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে।

জাগরণ: এ অবস্থায় কী করণীয় বলে আপনি মনে করেন?
ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী :
কঠোর লকডাউন। যেটা শুরুর দিকে ছিল। একেবারে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চিকিৎসকসহ সেবাখাতের লোকজন ছাড়া কেউ বের হবে না। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। শপিংমল খোলা থাকবে না— এগুলো করা উচিত। হয়তো অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কিছু মানুষের কথাও ভাবতে হয়েছে, তারা কীভাবে চলবে বা জীবিকা নির্বাহ করবে? সেসব কারণে হয়তো মার্কেট খোলা হয়েছে, আন্তজেলা পরিবহন ছাড়া হয়েছে। যাই হোক, সুষ্ঠুভাবে যদি দমন না করা যায় তাহলে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে। লকডাউন এবং করোনা পাশাপাশি বন্ধু এবং শত্রু। আপনি যত বেশি মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখতে পারবেন ততই এই ওষুধে সাফল্য আসবে। যত বেশি মানুষকে ছেড়ে দিবেন, তত বেশি ঝুঁকি বাড়বে। খেয়াল করে দেখবেন, মানুষ মাস্ক পরে না, হাসাহাসি করে, এটা নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করে। তুচ্ছ অজুহাত দেখায়। সে জায়গায় আমাদের আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। আমাদের পরিবারের জন্য, নিজের জন্য। নিজের কথাই যদি কেবল ভাবি, তাহলেও তো আমাদের আরো সচেতন হওয়া উচিত।

জাগরণ : যারা বাড়িতে যাচ্ছেন, তারা তো পরিবারের সঙ্গে মিশবেন। এক্ষেত্রে কী করা উচিত?
ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী : আমি মনে করি, পরিবার মানে ঘরের ভেতরেও মাস্ক পরা উচিত। কারণ, পরিবারের কে পজেটিভ কে নেগেটিভ তা তো দেখা যাচ্ছে না বা শনাক্ত হচ্ছে না। রোগী হয়তো বলছে, আমার তো কোনো উপসর্গ নেই এবং গন্ধ পাচ্ছি, খাবারের স্বাদও পাচ্ছি। তারপরও দেখা যাবে যে, সে পজেটিভ। ‘জলে কুমির ডাঙায় বাঘ’ এটাকেই বলে। এজন্যই বলছি যে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হাত ধোয়া ও মাস্ক পরা— এই দুটি জিনিস কঠোরভাবে যদি মানা যায় তাহলে করোনার এই ভয়াবহতা থেকে আমরা মুক্তি পাবো।

জাগরণ : ভারতের করোনার যে ভ্যারিয়েন্ট বাতাসের মাধ্যমে যেটি ছড়ায়, সেটি বাংলাদেশেও ছড়িয়েছে বলে জানা যায়। এ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী : দেখুন, আপনি আমি তো সারক্ষণ বাতাসের মাধ্যমেই বেঁচে আছি। যে ভাইরাসটির কথা বলা হচ্ছে বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়, সেটা ১০-১২ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র আকার ধারণ করে।  প্রাণনাশের যে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে, যদি তাই হয়, তবে তা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ।  তাবে আমরা যদি মাস্ক পরে থাকি, আমাদের নাকের ভেতরে  সেটি ঢুকতে পারবে না। একমাত্র উপায় হচ্ছে ১৭ কোটি মানুষ যদি মাস্ক পরে থাকতে পারে এই ভাইরাস মরে যাবে। তবুও এটার ব্যাপারে আরো অধিকতর গবেষণা করা দরকার।  যারা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, বায়োলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলোজিস্ট, তারা আসলে বলতে পারবে এটার তীব্রতাটা কী রকম।