• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২১, ০৩:৫৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১৩, ২০২১, ০৬:১৭ পিএম

শিরকের পর সবচেয়ে বড় অপরাধ বলাৎকার : ফরিদ উদ্দিন মাসউদ

শিরকের পর সবচেয়ে বড় অপরাধ বলাৎকার : ফরিদ উদ্দিন মাসউদ

মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় বিশেষ করে হেফজখানা ও নূরানি মাদ্রাসাগুলোতে বলাৎকার ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে এক হেফজখানার শিক্ষকের দ্বারা শিশু নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। এ নিয়ে জাগরণ অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও শোলাকিয়া ঈদ জামাতের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। কথা বলেছেন শাহাদাত হোসেন তৌহিদ


জাগরণ : প্রায়ই কওমি মাদ্রাসায় শিশুদের শারীরিকভাবে পাশবিক নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এই ধরনের নির্যাতন ইসলাম সমর্থন করে কি না?
ফরিদ উদ্দিন মাসউদ :
একেবারেই ইসলাম সমর্থন করে না। পিতা-মাতা ছাড়া এবং তাদের মত ছাড়া কোনো শিশুর ওপরে শাস্তি দেওয়ার জায়েজ নেই। আর শাস্তি যদি দিতেই হয়, তাহলে পরামর্শ করে অপরাধের পরিমাণ আগে নির্ধারণ করতে হবে। রাগের মাথায় তাকে মারা জায়েজ নয়। আগে রাগ প্রশমিত হতে হবে। হিসেব করতে হবে যে অপরাধ যতটুকু করছে, তার শাস্তি কি বকা হবে? না তার শাস্তি অভিভাবককে জানানো হবে? নাকি শাস্তি হবে ধমক দেওয়া? শাস্তির পরিমাণটা নির্ধারণ হবে অপরাধের মাত্রা হিসেবে, তা-ও পরামর্শ করে। যেভাবে এখন শাস্তির নামে পীড়ন করা হচ্ছে, এটা ইসলামে জায়েজ নেই। 
আরেকটা হলো, সবকিছু নির্ধারণ করার পরও মুখের কোনো জায়গায় মারতে পারবে না। তার পিঠে দু-চারটা থাপ্পড় দিতে পারে। সুতরাং ইসলামের কোথাও এটাকে জায়েজ বলার অবকাশ নেই।

জাগরণ : একটি কথা প্রচলিত আছে যে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের শরীরের যে স্থানটিতে মারবেন, সে স্থানটি জান্নাতে যাবে, এটি কতটুকু সত্য?
মাসউদ :
একেবারেই মিথ্যা। কারণ এ ধরনের কোনো হাদিসও নেই। কোরআন শরিফে এ ধরনের কোনো বিষয় উল্লেখ নেই। জান্নাতে কী যাবে, না যাবে, এটা হাদিস বা কোরআন দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। এ বিষয়ে হাদিসেও কোনো উল্লেখ নেই, কোরআনে তো নেই-ই। সুতরাং এটা মুখে মুখে প্রচলিত। যারা বেশি পীড়ন করেন, তাদের পীড়নটাকে বৈধ করার জন্য এ ধরনের কথা মুখে মুখে প্রচার করেছেন, যাতে ছেলেটাও ক্ষুব্ধ না হয়, পিতা-মাতাও যাতে জান্নাতের আশায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করেন। এটা পীড়নের অবৈধ দলিল আরকি!

জাগরণ : সম্প্রতি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় অভিভাবকেরা প্রাথমিকভাবে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে চাননি। তারা বলছেন, শিশুর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিচার চাইছেন না। বিষয়টি আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন।
মাসউদ :
আইনি পদক্ষেপ নেওয়া বড় প্রশ্ন না। কারণ, সেটা নির্ভর করে যিনি সংক্ষুব্ধ তার মনোভাবের ওপর। একজন আইনি পদক্ষেপের ব্যাপারে অগ্রসর না-ও হতে পারে। কিন্তু সামাজিক পদক্ষেপ তো নিতেই হবে।

জাগরণ : অভিভাবকদের কাছে এ রকম একটি বিষয় ছিল, শিক্ষককে যদি শাস্তি দেওয়া হয়, তাহলে তিনি মনে কষ্ট পাবেন কি না। তাতে করে তার সন্তানের ক্ষতি হতে পারে ভেবেই হয়তো এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।
মাসউদ :
এটা তাদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। এটার ওপরে তো আর কোনো হুকুম চলে না। তাদের ব্যক্তিগত আবেগ এখানে কাজ করে থাকতে পারে।

জাগরণ : কওমি মাদ্রাসায় আরেকটি বিষয় খুব বেশি আলোচিত হয়, তা হলো ছেলেশিশুদের বলাৎকার বা মেয়েশিশুদের ধর্ষণ। ইসলামি চিন্তাবিদ হিসেবে আপনি এটিকে কীভাবে বিচার করেন? ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এর ব্যাখ্যা জানতে চাই।
মাসউদ :
ইয়া আল্লাহ। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বলাৎকার শিরকের (সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে অংশীদার) পরে। শিরক করার পর এর চেয়ে বড় অপরাধ আর নেই। এবং কোনো কোনো রেওয়াতে (বর্ণনা) আছে যে বলাৎকারীকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য। যদিও এটার হুকুম নেই। কিন্তু এ তো কঠিন বিষয়। সুতরাং এটা তো ‘কওমে লুত’-এর ওপরে। আল্লাহ তায়ালা আজাব (শাস্তি) এ কারণেই দিয়েছিলেন। কওমে লুতের কথা পবিত্র কোরআন শরিফে আছে। এদের রাজ্য উল্টে দিয়েছিলেন। আজ পর্যন্তও এলাকাটা বিষাক্ত হয়ে রয়েছে। মানুষ বসবাস করতে পারে না। এত কঠিন শাস্তি দিয়েছেন। সুতরা এটা ইসলামের দৃষ্টিতে দেখার প্রশ্নই আসে না। এটা কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

জাগরণ : আজকের শিশুকে বলা হয় আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এই কোমলমতি শিশুদের ওপর এমন বর্বর আচরণ করা হয়, তা শিশুটির ওপর চরম বিরূপ প্রভাব ফেলে। এই ধরনের অব্যবস্থাপনা থেকে উত্তরণের উপায় কী বলে আপনি মনে করেন?
মাসউদ :
দুইভাবে করতে হবে। একটা হলো, জবাবদিহি নিশ্চতকরণ। অর্থাৎ যারা নাকি এ ধরনের কৃপ্রবৃত্তির শিকার, তাদের। তাদের কঠিন শাস্তি প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া নৈতিকতার দিক থেকে যদি পরিবেশকে আরও উন্নত করা যায়, সেটা আরও কার্যকরী হবে। দুটি বিষয় যদি নিশ্চিত করা যায়, আমার মনে হয় এটা কমবে।