• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২১, ১১:৪৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১৯, ২০২১, ০১:৪১ পিএম

‘কোনো দিন ভাবিনি ঐতিহাসিক মুহূর্তের ভাগীদার হব’

‘কোনো দিন ভাবিনি ঐতিহাসিক মুহূর্তের ভাগীদার হব’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ শিরোনামে ১০ দিনের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সন্ধ্যায় অংশ নিতেই এবার ঢাকায় এলেন শ্রীমতি মমতা শঙ্কর ও তার নৃত্যের দল। নানা ব্যস্ততার এক ফাঁকে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলে জনা কয়েক সাংবাদিকের মুখোমুখি হলেন শ্রী চন্দ্রোদয় ঘোষ ও শ্রীমতি মমতা শঙ্কর দম্পতি। ৪০ মিনিটের সেই কথোপকথনে নৃত্যশিল্পী, নৃত্য পরিচালক ও অভিনেত্রী মমতা শঙ্করকে ঘিরেই ছিল সাংবাদিকের আগ্রহ। জাগরণ অনলাইনের পক্ষ থেকে মমতা শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন পার্থ সনজয়। সেই আলাপের চুম্বক অংশ এখানে দেওয়া হলো।


জাগরণ: বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হলেন আপনি, আপনার অনুভূতি জানতে চাইছি।  

 

মমতা শঙ্কর: আমি কোনো দিন ভাবিনি, এমন একটা ঐতিহাসিক মুহূর্তের ভাগীদার হব। এবং আমি আমাদের দলের ছেলেমেয়েদের বলছিলাম, এটা তোমাদের জীবনের স্মরণীয় ঘটনা। বংশপরম্পরায় তোমরা বলতে পারবে, বাংলাদেশের দুই অনন্য লগ্নের ভাগীদার হয়েছ তোমরা। এক বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মদিন, তার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

এ ভাবা যায় না। আমি সব সময় বিশ্বাস করি, কেউ একজন আছেন, যিনি আমাদের চালনা করছেন, তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ থেকে যারা চেয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এবং ভারতবর্ষ থেকে যারা আমাদের পাঠিয়েছেন- ইন্ডিয়ান হাইকমিশন, আইসিসিআর তাদেরকে আমাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি এ রকম একটা সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

 

জাগরণ: সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে আপনার দলের পারফরম্যান্সের ‘থিম’ কীভাবে সাজিয়েছেন?

 

শঙ্কর: ছোট ছোট চারটা নাচ আমরা করছি। বাংলার মাটি বাংলার জল, এই দিয়ে শুরু করছি। তারপর ধিতাং ধিতাং বলে, এটিও বাংলার গান। তারপর আবার রবীন্দ্রনাথের গান। তারপরেই আমরা যেটা করছি, তা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। শোন একটি মুজিবর—এই গানে কোরিওগ্রাফি করছি। আমরা সাধারণত যে ধরনের অনুষ্ঠান করি, সে রকম তো করতে পারছি না। শুধু কয়েকটি নাচ আমরা বেছে করছি বাংলাকে প্রাধান্য দিয়ে। আমাদের পুরো গ্রুপে আমরা ১৯ জন।

 

জাগরণ: আজ বাংলাদেশ যখন তার জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে, তখন ভারতের নতুন প্রজন্ম তাঁকে কতটা চেনে বা জানে?

শঙ্কর: দুঃখের বিষয়, এখনকার প্রজন্ম, আমরা অন্য অনেক বিষয়ে জানি, কিন্তু এই যে আমাদের শিকড়, আমাদের আসল যে মানুষ, যাদের ত্যাগের জন্য আমরা ভালোভাবে আছি, তাদের কথা কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্মকে খুব একটা জানানো হচ্ছে না। আজ টেলিভিশন খুললে আমরা হালকা অনেক বিষয়ে অনেক কিছু জানছি। আমার নিজেরও অনেক অজ্ঞতা আছে। আমার আরও অনেক জানতে ইচ্ছা করে। সেই সুযোগটা আজকের ছেলেমেয়েদের মধ্যে অনেক কম। অন্যদিকের আকর্ষণ এত বেশি, কী বলব? হালকা, চটুল জিনিসগুলোর অনেক বেশি আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে।

 

জাগরণ: ১৯৭১ সালে আপনার কাকা রবি শঙ্কর অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশে’র। সেই দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে আপনি বা আপনার দল কোনো উদ্যোগের কথা ভাবছে কি? 

শঙ্কর: আমার কাকা যখন বাংলাদেশের জন্য কনসার্ট করেছিলেন, তখন বাংলাদেশ বিপাকে। একটা অমানিশা চলছিল। তিনি অন্য জায়গা থেকে এগিয়ে এসেছিলেন সাহায্য করার জন্য। এখন আমাদের অবস্থাটা তো সব জায়গায় একরকম। আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি, এত বড় আয়োজন আপনারা করছেন। এটা আমার কাছে বিস্ময়। এর জন্য যে সাহস, এত মানুষের—আপনারা উদ্যোগ নিয়েছেন।

 

জাগরণ: মৃণাল সেনের হাত ধরেই আপনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেছেন। তিনি বছর কয়েক আগে প্রয়াত হলেন। তাঁর কোনো স্মৃতি যদি বলতেন আমাদের।

শঙ্কর: মৃণালদার হাত দিয়ে প্রথম আমার ১০০ টাকা উপার্জন হয়েছিল। আমার দাদা আনন্দ শঙ্কর ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছিল। তো তাতে আমার একটা হামিং ছিল (এখন আমার গলা শুনে হয়তো কেউ বিশ্বাস করবে না)। আমি হামিং দিয়েছিলাম, আর দাদা আমাকে ১০০ টাকা দিয়েছিলেন। সেটা আমি ভাঙাইনি। রেখে দিয়েছিলাম। এটা আমার কাছে বিরাট ব্যাপার।

মৃণালদা, আমার জীবনে অনেক কিছুর প্রথম। প্রথম উপার্জন, প্রথম হাত ধরে সিনেমার জগতে নিয়ে আসা, আমার প্রথম ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যাওয়া। তার আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলাম মেয়ে হয়ে। নিজের জন্য, সিনেমার জন্য যাওয়া, তা মৃণালদার জন্য। আমার সিনেমা করে ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাসে চলা, তা-ও মৃণালদার জন্য। মৃণালদার সঙ্গে আমি টোকিও, মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল গেছি। আমি বলব, মৃণালদা আমাকে হাত ধরে এই জগতে নিয়ে এসেছেন। তিনি তা না করলে আমার আজকের জায়গায় আসা হতো না।