• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৪, ২০২১, ০৪:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৪, ২০২১, ০৪:৪৭ পিএম

লকডাউন করলে সিরিয়াসলি করতে হবে: ডা. জাফরুল্লাহ

লকডাউন করলে সিরিয়াসলি করতে হবে: ডা. জাফরুল্লাহ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৮ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। জনসাধারণে চলাচলে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে দেওয়া হয়েছে ১৩ দফা নির্দেশনা। জরুরি পরিষেবা ছাড়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সরকারি অফিস, মার্কেট ও দোকানপাট। বন্ধ আছে গণপরিবহনও। তবে খোলা রাখা হয়ে শিল্পকারখানা। সীমিত পরিসরে খোলা কাঁচাবাজার, হোটেল ও রেস্তোরাঁ। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়ে দৈনিক জাগরণের সঙ্গে কথা বলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুব্রত চন্দ।


প্রশ্ন: করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন জারি করেছে। কিন্তু শিল্পকারখানা খোলা রাখা হয়েছে। এতে লকডাউন কতটা কার্যকর হবে বলে আপনি মনে করেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী: তারা (সরকার) যদি লকডাউন করে, লকডাউনের মধ্যে কাউকে বের হতে দেওয়া যাবে না, তাহলে এটা গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়বে। কলকারখানা বন্ধ করলে আবার ঢাকা শহরে বসে খাওয়া যাবে না। সবাই ছুটবে বাড়ির দিকে। ফলে রোগটার বিস্তৃতি অনেক বেড়ে যাবে। সেই কারণে শ্রমিকদের ঘরেই অবস্থান করতে হবে। আর দরিদ্র মানুষকে এক মাসের রসদ পৌঁছে দিতে হবে, যাতে বাইরে যারা কাজকর্ম করে যেমন গার্মেন্টসকর্মী, তাদের আর অন্য কোথাও যেতে না হয়। এটাকে ছুটি হিসেবে বিবেচনা করলে ক্ষতি হবে। তারাও বাড়িতে থাকবে না। এই কারণে বলছি, যদি লকডাউন করতে হয়ে, তাহলে খুব সিরিয়াসলি করতে হবে। কোনো প্রাইভেট গাড়িঘোড়া চলা যাবে না। কেবল গাড়িঘোড়া চলবে হাসপাতাল, ল অ্যান্ড সিকিউরিটি, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া কারও প্রাইভেট গাড়িও চলা যাবে না। সব টোটালি বন্ধ করে রাখতে হবে। তাহলে এটার কার্যকারিতা আসবে। না হলে দেশ লাভবান হবে না। খালি এটাকে ছুটি হিসেবে বিবেচনা করলে সবাই গ্রামের দিকে ছুটবে, তাতে দেশে রোগটার বিস্তৃতি বেড়ে যাবে।

প্রশ্ন: এমন জরুরি অবস্থায় সরকারি অফিস বন্ধ রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত মনে করেন আপনি?

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী: সরকারি অফিস তো তারা বসে বসে হয়রানি ছাড়া খুব বেশি কিছু করে না। হয়তো স্বল্প সময়ের জন্য তাদের বন্ধ দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংক খোলা রাখলেই হবে। তা না হলে লোকজন বাঁচবে কী করে? টাকা-পয়সা ওঠাবে কী করে এই সময়টাতে? সবচেয়ে বড় কথা দরিদ্র মানুষকে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তা না হলে কোনোভাবেই লকডাউন কার্যকর হবে না। তাদের গ্রামের বাড়িতে যেতে দেওয়া যাবে না। চিকিৎসার জন্য সরকারকে একটা নতুন পদ্ধতিতে যেতে হবে। তাদের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। আজকে যদি ১০টা মেডিকেল টিম করা যায়, তাহলে আমরা এক হাজার আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাড়িতেই চিকিৎসা দিতে পারব। রোগীর বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দিতে হবে, তার রক্ত পরীক্ষা করা হবে, তাকে অক্সিজেন দিয়ে দেওয়া হবে। এসব সামগ্রিকভাবে চিন্তা করতে হবে। এখন অক্সিজেনের প্রাপ্যতা অনেক কমে গেছে। এটার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। সামগ্রিকভাবে চিন্তা না করে কেবল লকডাউন করা যাবে না।

আজকে যদি আমাদের অনুমতি দেয়, তাহলে আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই দশটি মেডিকেল টিম দিয়ে ঢাকা শহরে ন্যূনতম পাঁচশ রোগীর বাড়িতে বসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। ঠিক যেভাবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় করেছিলাম। স্বল্পকালের ট্রেনিং দিয়েই আমরা এটা করতে পারি।

প্রশ্ন: গত বছর করোনার সংক্রমণে অনেক মানুষ মারা গেছে। এই বছরও আবার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখছি। এক বছরেও সরকার কেন এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বলে আপনি মনে করেন?

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী: আমি সেই এক বছর আগের থেকে বলছি, এখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে লোকজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা। সরকার সেই দিকে নজর দেয়নি। ওটাও তারা ভুল করেছিল। আরেকটা ভুল করেছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা বিরোধী পক্ষের সাথে একত্রে বসে, উদার মনোভাব নিয়ে এটা আলোচনা করা উচিত, তাদের সম্পৃক্ত করা উচিত। তাহলে জনগণও সম্পৃক্ত হবে। রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত না করলে জনগণ সম্পৃক্ত হবে না। তারা মনে করছে এটা আওয়ামী লীগ-বিএনপির ঝগড়া। এটা কেবল দুই দলের না, এটা আমাদের সবার জীবন-মরণের সমস্যা। সরকারকে উদার রাজনৈতিক মনোভাব নিতে হবে। আজকে যদি আমাদের অনুমতি দেয়, তাহলে আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই দশটি মেডিকেল টিম দিয়ে ঢাকা শহরে ন্যূনতম পাঁচশ রোগীর বাড়িতে বসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। ঠিক যেভাবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় করেছিলাম। স্বল্পকালের ট্রেনিং দিয়েই আমরা এটা করতে পারি। সরকারের এখন রাজনৈতিক হয়রানিটা বন্ধ করা দরকার। তাহলে হবে কী, আমরা সবাই একত্র হয়ে যুদ্ধটা করতে পারব।

প্রশ্ন: এমন পরিস্থিতিতে সরকার ও জনগণের কী করণীয় আছে বলে আপনি মনে করেন?

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী: জনগণকে বাড়িতে থাকতে হবে। তবে বাড়িতে থাকলে খাবে কী? সরকারকে তার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা বাড়িতে করে দিতে হবে। তবেই থাকবে। আমি খালি পেটে বাড়িতে বসে থাকতে পারব না। কাজেই এটাও মনে রাখতে হবে, মানুষের খাওয়ার প্রয়োজন আছে। জীবন-জীবিকা দুটোই দেখতে হবে সরকারকে। তাদের কথাবার্তাও শুনতে হবে। আর সরকারকে এসব হেফাজতকে তাল দেওয়া বন্ধ করতে হবে।