• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০১৯, ০৪:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৯, ২০১৯, ০৪:৫০ পিএম

‘কিছু কিছু ওসি-ডিসি নিজেদের জমিদার মনে করেন’

‘কিছু কিছু ওসি-ডিসি নিজেদের জমিদার মনে করেন’

ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় এই জামিন চেয়েছিলেন মোয়াজ্জেম।    

বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) তা উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে।

আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাতকে যে অবান্তর প্রশ্ন করেছিলেন তা বলার মতো নয়। তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখলে সে মারা যেত না। কিন্তু তা না করে ভিডিও করে মজা নিয়েছেন। তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি।

হাইকোর্ট বলেন, কিছু কিছু ওসি-ডিসি রয়েছেন যারা নিজেদেরকে জমিদার মনে করেন।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ১০ এপ্রিল ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।

মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে যান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তাকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

এর আগে, নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় ডেকে নিয়ে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। পরে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও দেন তিনি।

ওই ঘটনায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ১৫ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ ও মামলার নথি পর্যালোচনা করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জগলুল হোসেন ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ২০ দিনের মাথায় গত ১৬ জুন মোয়াজ্জেম হোসেনকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। ১৭ জুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

৩০ জুন ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী। ১ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আবেদনটি উপস্থাপনের পর এ বিষয়ে শুনানির জন্য আজ মঙ্গলবার দিন ঠিক করা হয়।

অন্যদিকে, নুসরাত হত্যা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনীর পরিদর্শক মো. শাহ আলম আদালতে ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রের ১৬ আসামি হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অন্য ৫ জনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে পিবিআই। আদালত তা অনুমোদন করেন।

এমএ/ এফসি

আরও পড়ুন