• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০১৯, ০৭:২২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৬, ২০১৯, ০৭:২৭ পিএম

পেপটিক আলসারে কী খাবেন

পেপটিক আলসারে কী খাবেন

সহজ কথায় পেপটিক আলসার হল পাকস্থলীর ঘা বা ক্ষত। ব্যাপারটি বলা যত সহজ যিনি এই রোগের ভুক্তভোগী তার জন্য ব্যাপারটি খুব কষ্টের।আক্রান্ত ব্যক্তি সারাক্ষণ,শারীরিক অস্বস্তিতে ভুগে থাকেন। আর,অনেকেই ভঁয়ে থাকেন যে তার বুঝি আর আলসার ভাল হবেনা। তবে,আলসার থেকে সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ মত মেডিসিন গ্রহণের পাশাপাশি সঠিক এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করলে আলসারের ভোগান্তি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।

ডায়েট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে তবে তার আগে জেনে নিন পেপটিক আলসারের লক্ষণ এবং কারণ সমূহ:
 

পেপটিক আলসারের কারণ 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেপটিক আলসার,‘হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি’ নামক ব্যক্টেরিয়া দ্বারা সংক্রমণের কারণে ঘটে থাকে।এছাড়া,নন স্টেরয়েড এন্টি ইনফ্লামেটরি ড্রাগ গ্রহণের ফলে ও পেপটিক আলসার হতে পারে।পাশাপাশি,ধূমপান,স্টমাক ক্যান্সার,অতিরিক্ত মদ্যপান,অতিরিক্ত তেল মসলা যুক্ত খাবার, খাদ্য গ্রহণে অনিয়ম,মানসিক হতাশা,জেনেটিক্স প্রভৃতি কারণে পেপটিক আলসার হতে পারে।
পেপটিক আলসারের লক্ষণ


 
অতিরিক্ত বুক জ্বালা পোড়া করা
পেটে ব্যথা
ক্ষুধা এবং ওজন কমে যাওয়া
খুব অল্প খেলেও পেট ভরে যাওয়া
বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া 
মেরুদন্ড বা বুকের পেছনে ব্যথা
অনেকেই উপরের লক্ষণ গুলো অনুভব হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করে খুব একটা গুরুত্ব দেন না বা ডাক্তারের কাছে যান না। ফলাফলে ক্ষত আরো বেড়ে যাওয়া। সুতরাং,কোন রোগ হলে নিজের মত ব্যাখা দাঁড় করিয়ে সময় ক্ষেপণ না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
এইবার জেনে নিন খাবার সংক্রান্ত পরামর্শ :
যে খাবার গুলো খাবেন এবং যেভাবে খাবেন


একজন পেপটিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সঠিক খাদ্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।কারণ-
• কিছু খাবার গ্রহণের ফলে ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে জ্বালা পোড়া সংঘটিত হয়।
• কিছু খাবার অতিরিক্ত এসিড উৎপন্ন করে।
• আর,অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ফলে নানা রকম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
তাই,আপনার আলসারের ক্ষত বেড়ে যাবে নাকি কমে যাবে তা অনেকটা নির্ভর করে আপনি কোন খাবার কিভাবে গ্রহণ করছেন।সেজন্য,পেপটিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্য তালিকা সুষম এবং পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন-এ,সলিউবল ফাইবার এবং ফ্লাভোনয়েড সমৃদ্ধ হওয়া উচিত।
নীচের খাবার গুলো পেপটিক আলসারের জন্য উপকারী  
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার


 
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার স্টমাকের এসিড কমাতে সাহায্য করে ফলে ব্লটিং এবং পেইন কমে।এছাড়া, নিয়মিত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে পেপটিক আলসারের ঝুঁকি কমে।সুতরাং,ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বিশেষ করে দ্রবনীয় আঁশ যেমন:ওটস,বার্লি,আপেল,ডুমুর,নাশপাতি,মিষ্টি আলু,বীন্স রাখুন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন।এছাড়া,নিয়মিত ব্রকলি,বাঁধাকপি,গাজর প্রভৃতি সবজি খেতে ভুলবেন না।
ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার


 
ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার আলসারের ক্ষত সারাতে এবং আলসার প্রতিরোধে ও ভূমিকা পালন করে। তাই,পেপটিক আলসারে সুস্থ থাকতে নিয়মিত ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে।
মিষ্টি আলু,গাজর,কুমড়া,পালংশাক,পেপে,আম,রেড বেল পিপার প্রভৃতি ভিটামিন-এ এর ভাল উৎস।

প্রো-বায়োটিক  


 দই এবং যেকোন ফার্মেন্টেড মিল্ক,মিসো,খিমচি প্রভৃতি খাবার গুলো ভাল ব্যক্টেরিয়া বা প্রো-বায়োটিকের উৎকৃষ্ট উৎস।আর এই প্রো-বায়োটিক “এইচ পাইলোরির” গ্রোথকে ইনহিবিট করে ফলে আলসারের ক্ষত দ্রুত ভালো হয়। 
ফ্লাভোনয়েড সমৃদ্ধ খাবার

যাদের পেপটিক আলসারে সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ফ্লাভোনয়েড সমৃদ্ধ খাবার যেমন: গ্রীন টি, আদা,রসুন,পেয়াজ এবং রঙিন শাকসবজি এবং ফল খেলে দ্রুত আলসারের ক্ষত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
পেপটিক আলসারে যেসব খাবার পরিহার করবেন

 
• চকোলেট,কফি,ভাঁজা পোড়া খাবার,কাঁচা সবজির সালাদ,তৈলাক্ত এবং মসলা যুক্ত খাবার, কার্বোনেটেড বেভারেজ এবং মিষ্টি,লবণাক্ত খাবার এবং রেড মিট একেবারে পরিহার করা উচিত।
• হাই ফ্যাট দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার পরিহার করা।আগে,আলসারের চিকিৎসায় দুধ উপকারী বলে ধারণা করা হত।তবে,বর্তমানে প্রমানিত হয়েছে যে,দুধ খেলে অতিরিক্ত এসিড ক্ষরণ হয় যা আলসারের সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।তবে,লো-ফ্যাট চীজ,দই হলে সমস্যা নেয়।
• রান্নায় গুড়া মরিচ এবং অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
পেপটিক আলসারে আরো ভালো থাকতে যা করতে পারেন
• যারা পেপটিক আলসারে আক্রান্ত তাদের প্রথম কাজ হল,প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবার  খাওয়ার অভ্যাস করা।সারাদিনের খাবারকে তিন বারের পরিবর্তে ৫-৬ বারে গ্রহন করা। সবচেয়ে,গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা এবং অন্তত ২-৩ ঘন্টা পর পর অল্প কিছু হলেও খাওয়া।
• খাওয়ার পর অন্তত ৩ ঘন্টা আগে ঘুমাতে না যাওয়া,এবং অতিরিক্ত রাত না জাগা।
• খাবার খাওয়ার সময় খুব ভাল ভাবে চিবিয়ে খাওয়া।প্রতিবার খাওয়ার পর কিছু সময় রিলাক্স করা।
• রেড মিটের পরিবর্তে দেশি মুরগী,টার্কি মুরগী এবং ফ্যাটি ফিস যেমন: সার্ডিন,ম্যাকারেল,রুই মাছ খেতে পারেন।
• প্রতিদিন ১ চা চামচ করে অপ্রক্রিয়াজাত মধু খেতে পারেন। 
• নিয়মিত সঠিক পরিমানে পানি পান এবং ব্যায়াম করা।

লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড

/ডিজি