• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২১, ১০:০০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১২, ২০২১, ১১:২১ এএম

ফিল্ম থিমেটিক রেস্টুরেন্ট ঝিল কুটুম

ফিল্ম থিমেটিক রেস্টুরেন্ট ঝিল কুটুম

কাচের দেয়াল ভেদ করে সামনে তাকালেই হাতিরঝিলের শান্ত-স্নিগ্ধ জল। তার ওপরে দেখা মেলে বিস্তীর্ণ নীল আকাশ। চারপাশের দেয়ালজুড়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চলচ্চিত্রের পোস্টার। এরই মাঝে চলছে খাওয়া-দাওয়া, গল্প-আড্ডা-গান।

দর্শনীয় কোনো স্থান নয়, চার দেয়ালের মাঝে মনোরম পরিবেশের এই রেস্টুরেন্টটির নাম ‘ঝিল কুটুম’। নাগরিক ব্যস্ত জীবনে এমন একটি জায়গার দেখা পাওয়া সত্যিই ভার। যেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দেওয়া যায়। খাওয়া যায় পছন্দের সব খাবার। চলচ্চিত্র নিয়েও ডুব দেওয়া যায় বিতর্কের সাগরে। ইচ্ছে হলেই গেয়ে ফেলা যায় গান, গিটারের টুং টাং শব্দে। প্রায়ই এখানে দেখা মেলে টিভি পর্দার সামনে বা পেছনের তারকাদেরও।

রাজধানীর হাতিরঝিলে পুলিশ প্লাজার অদূরেই লেকের পাশে অবস্থিত ‘ঝিল কুটুম’। চলচ্চিত্রপ্রেমী, বোদ্ধা, শিল্প-সংস্কৃতিমনা বা এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কথা মাথায় রেখে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে রেস্টুরেন্ট। তবে ফিল্ম থিমেটিক এ রেস্টুরেন্টে বিচরণ রয়েছে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের।

‘ঝিল কুটুমে’ প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়বে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চলচ্চিত্রের পোস্টার। আছে সত্যজিৎ রায়, জহির রায়হান, তারেক মাসুদের মতো গুণী নির্মাতাদের স্থিরচিত্র। গায়ক থেকে নায়ক অনেকের ছবি শোভা বাড়িয়েছে রেস্টুরেন্টটির। টেবিল থেকে শুরু করে খাবারের পাত্র পর্যন্ত সব জায়গায় চলচ্চিত্রকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

সন্ধ্যা নামতেই রেস্টুরেন্টটির সামনে ঝিলের পানিতে চলে ফোয়ারার খেলা। চারপাশে জ্বলে ওঠে যান্ত্রিক জীবনের রং-বেরঙের আলো। ঝিলের পানি ছুঁয়ে আছে ‘ঝিল কুটুমের’ একটি বাঁশের মাচা। যেখানে বসে নগরজীবনের সন্ধ্যা নামা দেখতে পারেন যে কেউ।

রেস্টুরেন্টটির স্বত্বাধিকার আনন্দ কুটুম জানান, গত বছর মার্চ মাসে অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ‘ঝিল কুটুম’। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ৭ দিনের মধ্যেই তা বন্ধ করে দিতে হয়। পরে সংক্রমণ কিছুটা কমলে গত বছর ঈদুল আজহার সময়টাতে পুনারায় চালু করা হয় রেস্টুরেন্টটি।

চলচ্চিত্র নিয়ে ভারতে পড়াশোনা করা তরুণ এই উদ্যোক্তা বলেন, “মানুষের মনে সিনেমার প্রতি ভালোবাসা তৈরি ও মানুষের জীবনকে সিনেমাময় করতেই এ রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা। কারণ আমাদের এখানে তেমন কোনো ফিল্ম থিমেটিক রেস্টুরেন্ট নেই। কিন্তু আমরা যারা ফিল্ম নিয়ে কাজ করি, লেখালেখি করি তাদের একটি নিজস্ব জায়গা প্রয়োজন, যেখানে আমরা চলচ্চিত্র নিয়ে আড্ডা দিতে পারব, নিজেদের ভাবনাগুলোকে একে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবে। এতে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে যোগাযোগ যেমন তৈরি হবে, তেমনি বেরিয়ে আসবে নতুন নতুন চিন্তা।”

রেস্টুরেন্টটি যে উদ্দেশ্যে খোলা হয়েছে সেটির সফলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটি আসলে আধাআধি। পরিপূর্ণ সফলতা এখনো আসেনি। আবার সফলতা একেবারেই কম নয়। করোনার পর থেকে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট মানুষসহ অনেকে এখানে এসেছেন। আড্ডা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধারা আরো বাড়বে এমনটাই আশা। রাজধানীতে ‘ঝিল কুটুমের’ আরো কয়েকটি শাখা খোলার বিষয়ে কথাবার্তা চলছে।”

পরিবার নিয়ে ‘ঝিল কুটুমে’ আসেন কায়সার। রেস্টুরেন্টের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিজের মুগ্ধতার কথা জানান। তিনি বলেন, “অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে আগেও অনেকবার এখানে এসেছি। খাবারের মান খুবই ভালো। পরিবেশটাও সুন্দর। তাই এবার পরিবারকে নিয়ে এসেছি।”

বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন মুনতাসির হোসেন মুহিত। প্রায়ই এ রেস্টুরেন্টে আসেন বন্ধুদের নিয়ে। রেস্টুরেন্টের সার্ভিস নিয়ে তিনি বলেন, “খাবারের স্বাদ নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট আমরা। সাথে আড্ডা দিয়েও বেশ সময় কেটে যায় এখানে। এখানের কর্মীরাও বেশ আন্তরিক।”

রেস্টুরেন্টে প্রথমবার এসেছেন সোহেলী রহমান। নিজের ভালো লাগার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “খাওয়ার জন্য একটি রেস্টুরেন্ট খুঁজছিলেন তারা। ‘ঝিল কুটুমের’ বাইরের সৌন্দর্য দেখে ভেতরে ঢোকেন। পরে চলচ্চিত্র নিয়ে ‘ঝিল কুটুমের’ উদ্যোগ দেখে মুগ্ধ হন।”

খাবারে কী পাওয়া যায়
‘ঝিল কুটুম’ মূলত একটি মিক্সড কুইজিন রেস্টুরেন্ট। এখানে ম্যাক্সিকান, ইতালিয়ান, থাই, চায়নিজ, ইন্ডিয়ান, সাউথ ইন্ডিয়ান ও কিছু কন্টিনেন্টালসহ সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। আছে বিভিন্ন ধরনের বার্গার, স্যান্ডউইচ, পাস্তা, পিৎজা, ফ্রাইড চিকেন, স্যুপ, ফিস কাবাব, স্টেক, সালাদ, কম্বো প্লেটার, জুস, সফট ড্রিংকস, লাচ্ছি, রিফ্রেসমেন্ট ড্রিংকস, কফি, আইসক্রিম, হট বেভারেজ।

ফিল্ম অ্যাক্টিভিস্ট আনন্দ কুটুম বলেন, “আমাদের রেস্টুরেন্টের পিৎজাটা খুবই জনপ্রিয়। অনেকে এখানে পিৎজা খেতে আসেন। পাশপাশি তরুণ প্রজন্মের কাছে বার্গারেরও চাহিদা আছে। আমরা কফি নিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা চেষ্টা করছি। আমরা চাই এখানে কফির একটি পরিবেশ তৈরি হোক।”