• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২১, ০৪:১০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ৮, ২০২১, ০৯:০১ এএম

একা নারীর বাড়ি ভাড়া

একা নারীর বাড়ি ভাড়া

শহর থেকে বহু দূরে, ঘর থেকে স্বজনদের আড়ালে, কর্মজীবনে কিংবা ব্যক্তিজীবনের বাস্তবতায় কখনো কখনো নারীদের একাকী থাকতে হয়। কিন্তু নারীদের এই একা থাকা সমাজে বা লোকচোখে দেখা হয় অনেকটাই আঁড়চোখে। একজন পুরুষকে এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় না। কিন্তু নারীদের একা থাকা নিয়ে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয় প্রতিটি মুহূর্তেই।

কেন একা থাকছেন? পরিবারের স্বজনরা কেন সঙ্গে থাকেন না? বিয়ের পর কেন একা আছেন? এমনকি স্বামী ছাড়া বাসা ভাড়া দেওয়া হবে না—এমন অদ্ভুত সব প্রশ্নের বেড়াজালে নাজেহাল হয় নারীর মানসিক অবস্থা। কেউ কেউ সামলে নিতে পারলেও হতাশ হয়ে অনেকেই নারী হোস্টেলগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নেন।

স্বাধীনতার ৫০ বছর, নারীরা অবদান রাখছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বাধা কাটিয়ে, লোকচক্ষুর ভয় না করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন আজকের নারীরা। সামলেও নিচ্ছেন আশপাশের পরিস্থিতিকে। তবুও কোথায় যেন এক বাধা, যা বার বার আটকে দিচ্ছে পেছন থেকে।

সাবিনা আকতার। কাজ করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। কাজের প্রয়োজনই পরিবারকে ছেড়ে শহরে থাকাতে বাধ্য হন তিনি। বাড়ি তার পঞ্চগড়। মফস্বলের সুন্দর মনোরম পরিবেশ রেখে রাজধানীতে থাকছেন প্রায় ৮ বছর। লেখাপড়া-চাকরি সব মিলিয়ে পার হয়ে গেছে বছরগুলো। সঙ্গীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে একাই থাকছেন। প্রায় ৬ বছর পেরুলেও একা থাকতে এখনও নানা জনের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয় তাকে। অনেকটা নিরাশ কণ্ঠেই বললেন, “সাবলম্বী হওয়ার সত্ত্বেও আমাদের টিকে থাকা অনেক কষ্টের।“

বর্তমানে মগবাজারের একটি হোস্টেলে থেকেই কাজ করছেন তিনি। সুন্দর পরিবেশে নিজের মতো থাকার ইচ্ছে হলেও অনেকটাই অপারগ সাবিনা। তিনি বললেন, “বাড়ির মালিকরা একা মেয়েদেরকে ভাড়া দিতে চান না। অনেক প্রশ্ন জিগ্যেস করেন। অফিস থেকে কখন ফিরছি, কোথায় যাচ্ছি, মাঝে মাঝে এগুলোও জানতে চায়। স্বাধীনভাবে থাকা যায় না। তাই হোস্টেলে এসে উঠেছি।“

এমন চিত্র প্রায় সব জায়গাতেই। বেসরকারি-সরকারি কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন শহরের বিভিন্ন এলাকায়। বাসা ভাড়া নিতে তাদেরও বেশ ঘানি টানতে হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তানজিনা আমম্রিন বলেন, “ছাত্রীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় বাসা খোঁজা নিয়ে। একদিন আমি ও আমার বন্ধু বাসা খুঁজতে যাই। আমাদের জিজ্ঞাসা করা হয় তোমরা কি পরিবারের সঙ্গে থাকো? আমরা বলি না। এরপর জিজ্ঞাসা করে তোমরা কি বিবাহিত? বলি, না, আমরা বিয়ে করিনি।”

অবিবাহিত মেয়েদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন বাড়িওয়ালা।

বাসা ভাড়া দিতে নারীদের নিয়ে এমন বৈষম্যের কথা জানতে চাইলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এক বাড়ির মালিক বলেন, “নিরাপত্তার জন্য সবদিকে খেয়াল রাখতে হয়। এত সমস্যা কে স্বেচ্ছায় কাঁধে নিতে চায়?”

এমন হাজারো সমস্যা পার হয়ে তবুও এগিয়ে যায় নারীরা। সমাজব্যবস্থার এমন চিত্রে অনেকটাই এখন অভ্যস্ত তারা। তবে কাজের শেষে সারাদিনের ক্লান্তি ছাড়ানোর জায়গাটা নিজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়ার স্বপ্নটাও থেকে যায় মনে। সুন্দর বাসস্থানে নিজেদের স্বপ্ন বুনতে পারবেন এমনটাই প্রত্যাশা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নারীদের।